প্রতিনিধি ৯ নভেম্বর ২০২৪ , ৪:১১:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ
নয়নাভিরাম আমন ধানগাছে আন্দোলিত কৃষকের হৃদয়। এ যেন সবুজের নকশিকাঁথা। কৃষকেরা আমনের ভালো ফলনের স্বপ্ন দেখলেও সেই স্বপ্নে হানা দিয়েছে ইঁদুর।
চলতি আমন মৌসুমে ধানগাছ ইঁদুরে কেটে নষ্ট করছে। কৃষকরা ইঁদুর নিধনে বিভিন্ন ফাঁদ পাতলেও দমন করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে ইঁদুর তাড়ানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন আমন ধান চাষীরা।
এখনও অনেক ধানগাছের শীষ বের হতে শুরু করেছে, ঠিক সেই সময় ধানের গাছ ইঁদুর কেটে সাবাড় করছে। ওষুধ দিয়ে ও প্রাকৃতিক নানাভাবে ইঁদুর মারার চেষ্টা করছে চাষীরা। তাতেও বিশেষ কোনো কাজ না হওয়ায় ইঁদুর তাড়ানো নিয়ে ভোলার আমন ধাঁন চাষিরা চরম বিপাকে পড়েছে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, চলতি মৌসুমে ভোলা জেলায় ১ লক্ষ ৭৩ হাজার ৩২ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষাবাদ হয়েছে।
সরেজমিনে ভোলার কয়েকটি গ্রাম ঘুরে কথা হয় কৃষক জহিরুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ২০ শতাংশ ধান ক্ষেতে দুইবার ইঁদুর মারার ওষুধ দিলাম কোন কাজ হলো না। ক্ষেতের ধানের শীষ কাটতেছে ইঁদুর। স্প্রে করলাম, ওষুধ দিয়ে কাজ হচ্ছে না। ইঁদুরের গর্তের ভিতরে ওষুধ দিয়ে ও ফাঁদ পেতে ১০ টি ইঁদুর মারছি। এই ধান ঘরে তোলার আগ অবধি ইঁদুরের উপদ্রব কমবে না। প্রতিদিন ফসলের ক্ষতি করে।
ভেলুমিয়া ইউনিয়নের গাজীরচর এলাকার কৃষক মতলব মাঝি বলেন, জমির সাথেই বাঁশ ঝাড়। রাতের অন্ধকারে ইদুর জমিতে নেমে এসে ধানের গাছ কেটে ফেলছে। যে এলাকার জমি নিচু, সেখানে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি হচ্ছে। ইঁদুরের কবল থেকে রক্ষায় বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক প্রয়োগ করেও কোনো সুফল পাচ্ছেন না তিনি। বাধ্য হয়ে বাঁশের ডোঙ্গার ফাঁদ দিয়ে ইঁদুর নিধনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জেলার বিভিন্ন আমন ধানের খেত ঘুরে দেখা গেছে, চাষিরা ইঁদুরের উপদ্রব থেকে ধান রক্ষা করতে খেতের মধ্যে বাঁশের কঞ্চি গেড়ে এতে পলিথিন টাঙিয়ে দিয়েছেন। অনেকে আবার খেতের চারপাশে ইঁদুর মারার ফাঁদ তৈরি করে রেখেছেন। তবুও কোনো কাজে আসছে না। খেতে ইঁদুরের হানা দেওয়া ধানের গাছ দেখে মনে হবে কেউ কাঁচি দিয়ে কেটে রেখেছে
মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের কৃষক আলম বেপারী এবার তিন একর জমিতে আমন চাষ করেছেন। এখন ধানের শিষ বের হচ্ছে। এ অবস্থায় খেতে ইঁদুরের উপদ্রব দেখা দেওয়ায় তিনি দুশ্চিন্তায় আছেন। ওষুধ ছিটিয়ে কোনো লাভ হচ্ছে না। খেতের মধ্যে পলিথিন বেঁধে দিয়েছেন। বাতাসে কাগজ উড়ার শব্দে ইঁদুর পালিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কমকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবির বলেন, ইঁদুর দমনে জেলা কৃষি অফিসের পক্ষে থেকে প্রতিটা উপজেলায় সচেতনতা সভা করা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষকদের প্রতিনিয়ত পরামর্শ দিয়ে আসছে সংশ্লিষ্ট ব্লক সুপারভাইজাররা। তিনি আরো বলেন, গত বছরের নভেম্বর থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভোলায় এক লক্ষ চার হাজার নয়শত আটচল্লিশটি ইঁদুর দমন করা হয়েছে।
এর মধ্য চরফ্যাশনের অরবিন্দু বংশী নামের এক কৃষক ৮ হাজার ৪২৩টি ইঁদুর দমন করে পুরস্কৃত হয়েছে।
মনপুরা উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ( ব্লক সুপারভাইজার) আনোয়ার হোসেন বলেন, খুব বেশি পরিমাণ খেতে ইঁদুরের আক্রমণ নেই। কিছু কিছু খেতে সামান্য আক্রমণ করেছে। এসব ইঁদুর নিধনে বিষ টোপসহ বিভিন্ন বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
ভোলা সদর উপজেলার কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা (রাজাপুর ব্লক) মঞ্জুরুল আলম বলেন, রোপা আমনখেতে ইঁদুর তাড়ানোর জন্য কীটনাশক প্রয়োগসহ বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে আমরা কাজ করছি। আশা করছি খুব দ্রুত সময়ের মধ্য এর সমাধান হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ভোলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক মোঃ হাসান ওয়ারিসুল কবীর বলেন, কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ইঁদুর নিধন অভিযান গত অক্টোবর থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শুরু হয়েছে।ইঁদূর কেউ একা নিধন করতে পারবে না। সমন্বিত ভাবে এটা নির্মুল করতে হবে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন উঠান বৈঠকে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে থাকে কৃষি বিভাগ। এখন বর্ষা মৌসুম শেষ হয়েছে, ইঁদুর নিধনের উপযুক্ত সময় এটা। ইঁদুর নিধনে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে।