প্রতিনিধি ২৯ জুলাই ২০২০ , ১১:১৭:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) ভ্যাটের ৪৩৭ কোটি টাকা দিচ্ছে না তিন মোবাইল অপারেটর। এজন্য বিটিআরসি ৫ দফা চিঠি দিলেও তাতে প্রতিষ্ঠানগুলো কর্ণপাতই করেনি।
যদিও গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি আজিয়াটা নিয়মিত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) রেভিনিউ শেয়ারিং, স্পেকট্রাম চার্জ, লাইসেন্স ফি পরিশোধ করেছে। সর্বশেষ ভ্যাট আদায়ে ব্যবস্থা নিতে এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা গেছে- গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, রবি আজিয়াটা গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত রেভিনিউ শেয়ারিং, স্পেকট্রাম চার্জ, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল (এসওএফ), বার্ষিক লাইসেন্স ফি টু-জি, থ্রি-জি, ফোর-জি, স্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি ফোর-জি, শেয়ার ট্রান্সফার ফি বাবদ বিটিআরসিকে ২ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এসব ফির বিপরীতে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাবদ ৪৩৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকা এনবিআরে জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা পরিশোধে গড়িমসি করছে মোবাইল অপারেটরগুলো।
গ্রামীণফোন ফির বিপরীতে ১ হাজার ৩৪১ কোটি টাকা বিটিআরসিতে জমা দিয়েছে। এর বিপরীতে গ্রামীণফোনের ভ্যাট জমা দেয়ার কথা ২২৩ কোটি টাকা। একইভাবে বাংলালিংক দিয়েছে ৬৪২ কোটি টাকা, ভ্যাট দেয়ার কথা ১০৭ কোটি টাকা। আর রবি আজিয়াটা শেয়ার ট্রান্সফার ফিসহ ৬৪১ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে কিন্তু ভ্যাট বাবদ ১০৬ কোটি টাকা জমা দেয়নি প্রতিষ্ঠানটি।
সূত্র জানায়, বিটিআরসি ৩টি প্রতিষ্ঠানকে ৫ দফা ভ্যাট পরিশোধের চিঠি দিলেও তা আমলে নেয়নি মোবাইল অপারেটরগুলো। সর্বশেষ ২৩ ফেব্রুয়ারি ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অনাদায়ি ভ্যাট জমা দিয়ে প্রমাণপত্র বিটিআরসিতে দাখিলের নির্দেশনা দেয়া হয়। সর্বশেষ এনবিআরের অধীন বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ ভ্যাট) মোবাইল অপারেটরগুলোকে ভ্যাট জমা দেয়ার নোটিশ দিয়েছে।
এনবিআর সূত্র বলছে, মোবাইল অপারেটরগুলো বরাবরই ভ্যাট-ট্যাক্স পরিশোধের ক্ষেত্রে উদাসীন। কীভাবে রাজস্ব পরিশোধে বিলম্ব করা যায়, সব সময় সেই ফন্দি-ফিকির খুঁজে। নিরঙ্কুশ বকেয়াও তারা পরিশোধ করতে চায় না। অতীতে ব্যাংক হিসাব জব্দ করে পাওনা আদায়ের নজির রয়েছে।
ভ্যাট আদায় ও পরিশোধ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অপারেটগুলোর সঙ্গে মতবিরোধ রয়েছে। অপারেটরগুলো দাবি করে, বিটিআরসির ভ্যাট নিবন্ধন না থাকায় জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।
এর প্রেক্ষিতে গত বছরের ২৪ জুলাই এনবিআর সিদ্ধান্ত দেয়, উৎসে কর্তনকারী সত্তা হিসেবে বিটিআরসির ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণের প্রয়োজন নেই। তবে বিটিআরসি ফির সঙ্গে অপারেটরগুলোর কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে তা এলটিইউ ভ্যাট কমিশনারেটের কোডে জমা দেবে।
এ প্রেক্ষিতে ১২ জানুয়ারির ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগে অনুষ্ঠিত এক সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বিটিআরসি মোবাইল অপারেটরদের কাছ থেকে শুধু তাদের পাওনা আদায় করবে। ভ্যাট আদায়সংক্রান্ত বিষয়ে এনবিআর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এ বিষয়ে এলটিইউ ভ্যাটের কমিশনার ওয়াহিদা রহমান চৌধুরী মন্তব্য করতে চাননি। তবে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, বকেয়া পরিশোধে অপারেটরগুলোকে নোটিশ দেয়া হয়েছে। পাওনা আদায়ে ভ্যাট আইন অনুযায়ী প্রয়োজনে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হবে।
তিনি আরও বলেন, ভ্যাট আদায়ে বিটিআরসির ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। আইনত নিবন্ধন নেয়ার প্রয়োজন না হলেও বিটিআরসি উৎসে কর্তনকারী সত্তা। সে হিসেবে ফির বিপরীতে ভ্যাট আদায়ের দায়িত্ব তাদের ওপরেই বর্তায়। তা না করে তারা সভার সিদ্ধান্ত প্রতিপালন করছে। যা আইন অমান্য করার শামিল এবং ভ্যাট আইন অনুযায়ী জরিমানাযোগ্য অপরাধ।