প্রতিনিধি ৩১ মার্চ ২০২২ , ৮:০৩:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ
মাহফুজুর রহমান, চাঁদপুর প্রতিনিধি:
ভুমি অফিসে সেবাগ্রহীতাদের ভোগান্তি কমাতে সরকারের প্রচেষ্ঠার শেষ নেই। তথ্যসেবা থেকে শুরু করে বিভিন্ন সেবা এখন পাওয়া যায় অনলাইনে। কিন্তু সরকারের সব প্রচেষ্ঠায় পানি ঢেলে দেয় দুর্নীতির বটবৃক্ষ আকড়ে থাকা কিছু অসাধু কর্মকর্তা।
চাঁদপুরের মতলব উত্তরের ভূমি অফিসের সেই চিত্র আরো ভয়াবহ। ঘুষ ছাড়া যেখানেই ফাইল-ই নড়েনা। বাড়তি টাকা আদায় ও দালালদের দৌরাত্ম্যে দিশেহারা সেবা নিতে আসা এখানকার সাধারণ মানুষ।
সরকার নির্ধারিত ফি ১ হাজার ১৭০ টাকা দিয়েও জমির নামজারি করতে পারছেন না গ্রাহকরা। সেবা গ্রহীতাদের চাপে ফেলে নামজারি করতে নেয়া হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।
আবার কখনো কখনো গ্রামের অসহায়, সহজ-সরল মানুষগুলোকে বোকা বানিয়ে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকারও অধিক হাতিয়ে নেয়া হয় বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। তবে এতো কিছুর পরেও নির্দিষ্ট সময়ে জমির নামজারি (খারিজ) পাননা গ্রাহকরা।
উপজেলার বাগানবাড়ী ইউনিয়নের তালতলী গ্রামের অ্যাড. বেলাল অভিযোগ করেন, যখনি কেউ জমির নামজারি করতে যায় তখনই অফিসের কর্মকর্তারা নানান অজুহাত দেখিয়ে বলে নামজারী হবে না। তখন বাধ্য হয়ে সকলেই অন্য পথে তাদের নির্ধারিত টাকার বেশি টাকা দিয়ে খারিজ করে থাকেন। আমার জমির খারিজের জন্য খারিজের জন্য তিনি ২৯ হাজার টাকা দিয়েছিলেন।
স্থানীয় ফারুক বলেন, শুধু অ্যাড. বেলালের কাছ থেকেই নয় এমন চাপে ফেলে ইউনিয়নের প্রত্যেক বাসিন্দার কাছে বেশি টাকা নেওয়া হয়েছে। তাদের মারপেঁচে বাধ্য হয়ে এমন ভুক্তিভোগি হয়েছেন অনেকেই।
স্থানীয় অনেকেই জানান, ‘আমাদের কইতাছে এখানে খরচ আছে, ঐখানে খরচ আছে, ইউএনও অফিসে খরচ আছে, সবার খরচ আছে’ তারপর আমরা টাকা দিছি’। আমরাতো অত কিছু বুঝি না বাবা, বুড়া হইছি, দৌড়াদোড়ি যেমনে কম হয় সেই চিন্তাই করি’।
এ বিষয়ে বাগানবাড়ী ইউনিয়ন ভূমি অফিসের উপ-সহকারী কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীনকে ফোন দিয়ে অভিযোগের কথা জানলে তিনি বারংবার ফোন কেটে দেন এবং এক পর্যায়ে বাড়িতে এসে বক্তব্য নিতে বলেন।
পরে ভিডিও বক্তব্য নিতে তার বাড়িতে গেলে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল থেকে ফোন দিয়ে নিউজটি বন্ধ করানোর চেষ্টা করেন।
জানা গেছে, দূর্ণীতির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের আগেই বিভিন্ন মহলে তদবীরে ব্যর্থ হওয়ার পর তিনি সহকারী কমিশনার (ভুমি) কর্মকর্তা’র কাছে গিয়ে তাকে হুমকি ও চাঁদাদাবি করা হয়েছে মর্মে জানিয়ে বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন এবং ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে জানিয়ে প্রশ্নবিদ্ধমূলক ও বিভ্রান্তমূলক অপ-প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভুমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. হেদায়েত উল্লাহ জানান, কখনো আর্থিক বিষয়ে যদি আমরা অভিযোগ পেয়ে থাকি, তখন তাৎক্ষণিক আমরা যার বিরুদ্ধে অভিযোগ তাকে স্পেশিফিকেশন করে ডেকে এনে কাজটি কেন হয়নি? এবং কত টাকা নেওয়া হয়েছে? সামনাসামনি আমরা শুনানি নিয়ে এ বিষয়টা সাথে সাথে নিষ্পত্তি করে থাকি। লিখিত অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
জানান, যেকেউ আমাদের কাছে অভিযোগ দিতে পারে। এক্ষেত্রে বিষয়টি আমরা শুধুমাত্র প্রাথমিকভাবে অবগত হই এবং উর্ধতন কর্মকর্তাদের জানাই। তদন্ত করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, মতলব উত্তরে ১১টি ভূমি অফিসে মাসিক প্রায় ২৫০-৩০০ নামজারি হয়। যেখানে প্রায় ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও দালালরা।