ঢাকা

মামলা করলেন রিকশায় ঝুলতে থাকা গুলিবিদ্ধ সেই নাফিজের বাবা

  প্রতিনিধি ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৬:১২:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

মামলা করলেন রিকশার ঝুলতে থাকা গুলিবিদ্ধ সেই নাফিজের বাবা

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইজিপিসহ ৫ জনের নাম উল্লেখসহ ৪০ থেকে ৫০ জন অজ্ঞাত করে মামলা করেছেন রিকশার পাদানিতে ঝুলতে থাকা গুলিবিদ্ধ সেই নাফিজের বাবা।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) নাফিজের বাবা মো. গোলাম রহমান বাদি হয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে মামলার আবেদন করেন।

মামলার আসামিরা হলেন- আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, (সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী), চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (সাবেক আইজিপি), মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ (সাবেক ডিবি প্রধান), বিপ্লব কুমার সরকার, (ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার), মোহাম্মদ মহসীন (তেজগাঁও থানার তৎকালীন ওসি) সহ তেজগাও থানায় দায়িত্বরত অন্যান্য পুলিশ সদস্যসহ স্থানীয় কমিশনার ও অন্যান্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ অজ্ঞাত ৪০ থেকে ৫০ জন।

জানতে চাইলে তদন্ত সংস্থার উপপরিচালক (প্রশাসন) মো. আতাউর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) অভিযোগটি দেওয়ার পর তা কমপ্লেন্ট রিজিস্ট্রিভুক্ত করা হয়। সব মিলিয়ে তদন্ত সংস্থা ১১টি অভিযোগ কমপ্লেন্ট রেজিস্ট্রিভুক্ত করেছে। ১০টি অভিযোগ কোটা সংস্কার ও সরকার পতনের আন্দোলনকেন্দ্রিক। একটি অভিযোগ ২০১৩ সালে হেফাজতে ইসলামের কর্মসূচিকেন্দ্রিক। ১০টি অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে।

অভিযোগ তদন্তের বিষয়ে এ কর্মকর্তা বলেন, এখনো ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়নি। প্রসিকিউশনও পুনর্গঠন করতে হবে।

গোলাম রহমানের মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে যোগ দিতে গত ৪ আগস্ট সকাল ১১টায় গোলাম নাফিজ বাসা থেকে বের হয়ে যায়। এরপর বিকেল ৩টায় নাফিজ তার মার সঙ্গে ফোনে কথা বলে। এরপর আর নাফিজের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় নাফিজকে খুঁজতে বেন হন গোলাম রহমান। কিন্তু ফার্মগেট এলাকায় আন্দালনকারীদের ওপর পুলিশকে গুলি করতে দেখে বিভিন্ন হাসপাতালে ছেলেন খোঁজ করতে থাকেন। এদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে মানবজমিন পত্রিকার অনলাইনে দেখতে পান, একটি রিকশায় গুলিবিদ্ধ নাফিজের নিথর দেহ পড়ে আছে এবং বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাকে ঘিরে আছেন। পরে বিভিন্ন পত্রিকা এ ছবি প্রকাশ করে। পরে রাত ৩টার দিকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ছেলের লাশ শনাক্ত করেন গোলাম রহমান।

অভিযোগে তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর একজন রিকশাচালক আমার সন্তানকে উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কর্মীরা তাকে হাসপাতালে নিতে বাধা দেয়। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে দেশব্যাপী গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অংশ হিসেবে আমার সন্তানকে হত্যা করে।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ভূমিকা নিয়ে আভিযোগে বলা হয়েছে, তার নির্দেশ, অন্যান্য আসামির অনুমোদন ও সক্রিয় অংশগ্রহণে সুপরিকল্পিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের প্রেক্ষাপটে ঘটেছে।

গোলাম রহমান অভিযোগে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন এক সাক্ষাৎকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে এক হাজার মৃতের সংখ্যা উল্লেখ করেছেন। যাতে প্রমাণ হয় আমার ছেলে নাফিজের হত্যা একটি সুপরিকল্পিত গণহত্যার অংশ।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন, ১৯৭৩-এর ৩(২), ৩(২)(এ), (গ), (জ) ও ৪(১) (২) ধারার অভিযোগের পক্ষে নিহত গোলাম নাফিজের বন্ধু, মামাসহ পাঁচজনকে সাক্ষী হিসেবে উল্লেখ করেছেন অভিযোগকারী গোলাম রহমান।

গোলাম নাফিজ রাজধানীর বনানী বিদ্যানিকেতন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করে কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল। পরিবারসহ থাকত মহাখালীতে। তার বাবা গোলাম রহমান ও মা নাজমা আক্তার। দুই ভাই তারা। নাফিজ ছোট। বড় ভাইয়ের নাম গোলাম রাসেল। এইচএসসি পাস করে এখন তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন।

আরও খবর

Sponsered content