প্রতিনিধি ১৫ এপ্রিল ২০২৫ , ৮:৩৬:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ
মিরসরাই উপজেলা বিএনপি ও দুটি পৌরসভার কমিটি গঠন এবং গ্রুপিং রাজনীতির প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলার ব্যাপক অবনতি হয়েছে উপজেলা জুড়ে। ৫ আগষ্ট রাত থেকে শুরু করে প্রভাব বিস্তার কে কেন্দ্র করে ৫ টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। বহু ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে দেয়া হয়েছে আগুন। হামলা পাল্টা হামলা চোরাগুপ্তা হামলা প্রকাশ্যে দেশিয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র প্রদর্শন করে প্রায় অর্ধশতাদিক সংঘর্ষে এই পর্যন্ত অর্ধসস্রাদিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে। ৫ আগষ্টে্য পর আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাকর্মী ও সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেলেও তাদের বাড়িতে ব্যাপক হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ সোমবার করেরহাট ইউনিয়নে একাধিক আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা করা হয়।
হামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামরুল হোসেন এর মাতা রাশেদা আক্তার (৬০), মামা আইনুল কবির (৪৮) আহত হয়। এসময় ঘরে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
জানা গেছে, সোমবার সকালে যুবদল নেতা হকসাব, আলমগীর, শাখাওয়াত মাসুদ কালার নেতৃত্বে করেরহাট ইউনিয়নের ভালুকিয়া গ্রামে উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক কামরুল হোসেন এর বাড়ীতে প্রথমে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। এসময় তার মা ও মামার উপরও হামলা চালানো হয়। এরপর করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার গ্রামে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এনায়েত হোসেন নয়ন ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি সুলতান গিয়াস উদ্দিন জসিম, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি এমরান হোসেন এবং ছত্তরুয়া গ্রামে অবস্থিত উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শাখাওয়াত উল্লাহ রিপনের বাড়িতেও হামলা ভাঙচুর চালানো হয়। এসময় শাখাওয়াত উল্লাহ রিপনের ভাড়াটিয়া নাঈমার বাসায় ভাঙচুর ও নগদ টাকা এবং স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠে। এসব বাড়ি থেকে প্রায় কোটি টাকার স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ অর্থ লুটপাট করা হয়েছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘরের পাশাপাশি নিজ দলিয় প্রতিপক্ষের বাড়িতেও হামলা- লুটপাট চালাচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সোমবার পহেলা বৈশাখ উদযাপনকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির দুই যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন ও নুরুল আমিন চেয়ারম্যানের অনুসারিরা প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় । এতে দুই ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি সহ উভয়পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়। এসময় দুটি সিএনজি ভাংচুর করা হয় ও একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়। এর দুই দিন আগে এক ব্যাবসায়িকে যুবলীগ কর্মী ট্যাগ দিয়ে মধ্য রাতে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের মিঠাছড়া বাজারে হামলা করে উত্তর জেলা বিএনপির ৩ নং যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিনের অনুসারি উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহদফতর সম্পাদক ইকবাল হোসেন মিঠু, সদস্য ইকবাল হোসেন ইমন, ইকবাল হোসেন ভুঁইয়া, সাদ্দাম সহ বেশ কয়েকজন। এসময় ব্যবসায়ীকে ইট ও লোহার রড দিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর করে তার একটি চোখ , কপালও এটা পা থেতলে দিয়ে একটি মোটরসাইকেল, নগদ টাকা ও মোবাইল ছিনতাই করে নিয়ে যায়। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মিরসরাই থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন সুরাহা পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যাপক চাঁদাবাজি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে হামলার অভিযোগ রয়েছে মিঠাছড়া বাজার ব্যবসায়ীদের। একই দিন মিরসরাইয়ে বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় বেশ কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটে। সোমবার মিরসরাই উপজেলার টেকের হাটে বলি খেলার প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায়ও আহত হয় প্রায় ২০ জন। আহতদের কেউ গুরতর জখমপ্রাপ্ত না হওয়ায় টেকের হাটে পল্লি চিকিৎসা শেষে বাড়ি ফিরে যায়।
নিজ বাড়িতে হামলা প্রসঙ্গে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এনায়েত হোসেন নয়ন বলেন, গত ৫ আগষ্টের পর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সবাই বাড়িছাড়া। গ্রামে শুধু পরিবারের লোকজন আর আত্মীয়স্বজন থাকে। সোমবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত আমার ঘর, আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান গিয়াস উদ্দিন জসিম, শাখাওয়াত উল্লাহ রিপন, কামরুল হোসেন, এমরান হোসেনের বাড়িতে হামলা-ভাংচুর ও লুটপাট চালানো হয়। এসময় কামরুলের মা ও মামার উপরও বিএনপি যুবদলের নেতাকর্মীরা মারধর করে। জড়িতদের আটক করার জন্য প্রশাসনের সহযোগিতা চান তিনি।
এবিষয়ে জোরারগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাব্বির মোহাম্মদ সেলিম বলেন, করেরহাট ইউনিয়নে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলার ঘটনা শুনে পুলিশ সাথে সাথে ঘটনাস্থলে যায়। পরবর্তীতে পুলিশের উপস্থিতিতে পরিবেশ শান্ত হয়। এঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মিরসরাই থানার অফিসার ইনচার্জ আতিকুর রহমান জানান, ২১শে ফেব্রুয়ারিতে উপজেলা শহীদ বেদীতে বিএনপির উভয় পক্ষের পুষ্ষ স্তবক অর্পণ কে কেন্দ্র করে পাল্টা পাল্টি কর্মসূচি ঘোষণা করায় সংঘাত এড়াতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয় প্রশাসন থেকে। কিন্তু গত ১৪ এপ্রিল উপজেলা প্রশাসন থেকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেই উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। ঘটনাস্থলে পুলিশ সময় মতো পদুনিতে নাপারলে কয়েকটি হত্যার ঘটনা ঘটে যেত। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে পুলিশের পাশাপাশি সেনাসদস্যরা কাজ করছে।
স্থানীয়রা জানান, ৫ আগষ্টের পরবর্তী যতগুলো গণজমায়েত হয়েছে সবকয়টিতেই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তার পরেও প্রশাসন ইচ্ছে করে বিভিন্ন দিবস ও অনুষ্ঠান উদযাপনের নামে গণজমায়েতের আয়োজনে করছে ও অনুমতি দিচ্ছে। ফলে প্রতিটি গনজমায়েতে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ আহত ও নিহতের ঘটনা ঘটছে। অনেকেই মনে করছেন প্রশাসন থেকেই উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে মারামারি হানাহানিতে ইন্ধন দেয়া হচ্ছে। যাতে একটি অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির ৩ নং যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল আমিন একটি বৈঠকে আছেন পরে কথা বলবেন বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান। নুরুল আমিন চেয়ারম্যান কে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য নেয়া হয়নি।