প্রতিনিধি ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৭:৪২:১৫ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতালে অপচিকিৎসা’র বলি এক প্রসূতি নারী। নিহত প্রসূতির নাম সানজিদা আক্তার (১৯)। সে মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ড মিঠাছড়া গ্রামের মো. ইকবাল হোসেন এর স্ত্রী।
১৫ সেপ্টেম্বর বিকাল তিনটায় ইকবাল হোসেনের স্ত্রী সানজিদা আক্তার প্রসব বেদনা নিয়ে মিরসরাই সদর ইউনিয়নের মিঠাছড়া বাজারের মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতালের ৩০৫ নং কক্ষে ডাক্তার শারমিন আয়েশার তত্ত্বাবধানে ভর্তি হন। সন্তান সম্ভাবনা হওয়ার পর থেকেই প্রসূতি নারী এই ডাক্তারের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। ঘটনার দিন ভর্তি হওয়ার পর রাত চারটায় জোরপূর্বক প্রসব কার্য সমাধান করেন দায়িত্ব রত ডাক্তার।
জোরপূর্বক প্রসব করাতে গিয়ে বাচ্চার সাথে প্রসূতির পেটের মধ্যে জরায়ুর ফুল ছিড়ে চলে আসে। ফলে অধিক রক্তক্ষরণে প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও কর্তব্যরত চিকিৎসক উভয়ে জোকসাজছে প্রসূতির পরিবারকে জানায় প্রসূতি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অচেতন হয়ে পড়েছে। তাই তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিয়ে চট্টগ্রাম চলে যেতে বলেন।
কিন্তু প্রসূতির পরিবারের সদস্যদের সন্দেহ হলে জেরার মুখে প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে বলে স্বীকার করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে স্থানীয় বাজার কমিটি ও সেনাবাহিনীর মধ্যস্থতায় ৭ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের আশ্বাসে সমজোতায় আসে নিহতের পরিবার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
নিহতের স্বামী ইকবাল হোসেন জানান, ডাক্তারের অবহেলায় স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। তারা আমার স্ত্রীকে মেরে ফেলে হার্ট অ্যাটাক করেছে বলে আমাদের চট্টগ্রাম চলে যেতে বলে। আমরা বুঝে ফেলতে পারি তাই আমাদের কোন নারী সদস্যকেও রাতে থাকতে দেয়ই নি রুগির পাশে। আমরা মামলা করতে চাইলে হাসপাতাল মালিক মাসুদ রানা ৭ লাখ টাকা দিবে মর্মে একটি লিখিত কাগজ করে। ২ লাখ টাকা মঙ্গলবার ও বাকি ৫ লাখ টাকা আগামী ২২ সেপ্টেম্বর দিবে বলে জানিয়েছে। এই সময় স্থানীয় বাজার কমিটির লোকজন ও সেনাবাহিনীর একটি টিম উপস্থিত ছিলেন।
হাসপাতাল মালিক মাসুদ রানা এই প্রতিনিধিকে জানান, সানজিদা আক্তার বাচ্চা প্রসবের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। কিন্তু প্রসূতির পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের জবরদস্তির কারণে ৭ লাখ টাকা জরিমানা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
তবে স্থানীয়দের অভিযোগ, মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শারমিন আয়েশার অপচিকিৎসার এই পর্যন্ত অনেক প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিটি ঘটনা তারা অর্থ, রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতায় ধামাচাপা দিতে সক্ষম হয়।
স্থানীয় যুবক জাবেদ বলেন, কয়েকমাস আগে আমার জেঠা পায়ে ইঞ্জুরি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। অনেকদিন চিকিৎসার পরও দেখা যায় পা থেকে পুঁজ বের হচ্ছে। পরে এক্সে করে দেখা যায় পায়ের মধ্যে মেন্ডেজের গজ রেখে সেলাই করে দিয়েছে তাই ভেতর থেকে পুঁজ বের হচ্ছে।
গত ১ জুন বিকেলে মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামের উমর আলী সারেং বাড়ির মীর হোসেনের পুত্র মো. ইউনুস আলীর মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী জেসমিন আক্তারের পেটে ব্যাথা অনুভব ও রক্তক্ষরণ হলে তিনি মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন দায়িত্বরত গাইনী চিকিৎসক শারমীন আয়েশা আল্ট্রা করার পর জানান বাচ্চা মারা গেছেন। তাই রাতে চিকিৎসক ডেলিভারির প্রস্তুতি নেন এবং রাত ৮.৪৫ মিনিটে মৃত নবজাতক ভুমিষ্ট হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের পরামর্শ অনুযায়ী একটি কার্টুনে করে মৃত শিশুটিকে বাড়ি নিয়ে জানাযা শেষে কবরস্থ করার জন্য কার্টুন খুললে নবজাতক শিশুটি কান্না শুরু করেন। এরপর নবজাতক শিশুটিকে পুনরায় মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে ও পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নবজতক শিশুটি চমেক হাসপাতালের ৬ তলায় ৩২নং ওয়ার্ডে ২ দিন চিকিৎসা শেষে মারা যায়। চিকিৎসকরা জানায় অপরিপক্ক গর্ভপাতের কারনে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে। চাঞ্চল্যকর এমন ঘটনার সাথে জড়িত মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিচার দাবি করেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
হাসপাতালের এমন ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে উপজেলা সিভিল সার্জন ডাক্তার মিনহাজের সাথে ফোনে যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।