চট্টগ্রাম

মিরসরাই বালিকা বিদ্যালয়ের সাড়ে ৩৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেন প্রধান শিক্ষক

  মিরসরাই (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ২৯ অক্টোবর ২০২৫ , ৪:৫৪:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ

মিরসরাই বালিকা বিদ্যালয়ের সাড়ে ৩৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেন প্রধান শিক্ষক

চট্টগ্রামের মিরসরাই বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভুইয়ার বিরুদ্ধে বিদ্যালয় তহবিল থেকে সাড়ে ৩৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অকাট্য তথ্য প্রমান পাওয়া গেছে। আত্মসাৎকৃত অর্থ আগামী ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে বিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাবে জমা দেয়ার জন্যে নোটিশ করেছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি।

অভিযুক্ত শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভুইয়া মিরসরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দীর্ঘ এক যুগ প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এই সময়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগ উঠে। অভিযোগের মধ্য রয়েছে স্কুল ছাত্রী ও নারী সহকর্মীদের উত্যক্ত করা। শিক্ষার্থীদের নারী অভিভাবক দের সাথে কুরুচিপূর্ণ ও অশালীন আচরণ। স্কুল ছাত্রীদের সাথে ভিডিও কলে অনৈতিক কাজ, পারিবারিক ব্যক্তিগত মুহুর্ত ভিডিও ধারণ করে স্কুল ছাত্রীদের দেখানো, স্কুল ছাত্রীদের স্পর্শ কাতর ও গোপনীয় স্থানে অনৈতিক স্পর্শ সহ চারিত্রিক শঙ্খলন ও আর্থিক কেলেঙ্কারি।

বিদ্যালয়ের সংস্কার, লাইব্রেরি স্থাপন, মুজিব কর্ণার স্থাপন, বিজ্ঞানাগার স্থাপন, লাইব্রেরীর জন্য বই ক্রয়, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ক্রয়, স্টেশনারি ক্রয়, আসবাবপত্র ক্রয়, দেয়াল ও বাউন্ডারি নির্মাণ সহ বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে এবং বিভিন্ন নিয়োগের ক্ষেত্রে ভুয়া রশিদ ও ভাউচার সংযুক্ত করে আর্থিক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ ও পাওয়া গেছে। এসব অনৈতিক কাজ ও দূর্নীতি থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে রাজনৈতিক আশ্রয় ও নেন তিনি।

তার এসব অনিয়ম দূর্নীতির বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক ফুসে উঠলে মিরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা অফিস ও পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভুইয়ার অনৈতিক কাজ ও চারিত্রিক শঙ্খলন নিশ্চিত করতে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড ও মিরসরাই উপজেলা প্রশাসন ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। তদন্ত কমিটির দীর্ঘ তদন্তে আজিম উদ্দিন ভুইয়ার বিরুদ্ধে আনিত অনৈতিক কাজের ঘটনা সত্য প্রমানিত হয়। তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন বর্তমানে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ এর জিম্মায় রয়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ১৩ সদস্য বিশিষ্ট আফিল এন্ড আরবিট্রি কমিটির সভা গত ৮ মাসেও অনুষ্ঠিত না হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দুশ্চারিত্রিক শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভুইয়ার বিরুদ্ধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি বোর্ড। অস্থায়ী বহিষ্কারাদেশ বহাল অবস্থায় আজিম উদ্দিন ভুইয়ার দূর্নীতির তথ্য যাচাই করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ২০১৩ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত একটি অডিট ফার্মের মাধ্যমে অডিট করানো হয়।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নিয়োগকৃত অডিট ফার্মের অডিটে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভুইয়ার বিরুদ্ধে ৩৬ লাখ ৭৭ হাজার ৫১০ টাকা আত্মসাতের অকাট্য তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়। প্রধান শিক্ষক কর্তৃক গত ১০ বছরে লুন্ঠিত বিদ্যালয়ের এই ৩৬ লাখ ৭৭ হাজার টাকা আগামী ৫ কর্ম দিবসের মধ্যে বিদ্যালয় তহবিলে ফেরত দিতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির প্রধান অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী স্বাক্ষরিত একটি নোটিশ দেয়া হয়েছে।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রতি দুই বছরে একবার অডিট করতে হয়। কিন্তু গত ১১ বছর কোন অডিট হয়নি মিরসরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর এসব অনিয়ম গুলো নজরে আসে। অডিট কর্তৃপক্ষ যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে দেখাগেছে ভুয়া ভাউচারের ছড়াছড়ি। এসব ভাউচার দিয়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় তহবিল থেকে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাত করেছেন। আমরা তার কাছে নোটিশ দিয়েছি যাতে বিদ্যালয়ের টাকা ফেরত দেয়। নোটিশে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা ফেরত না দিলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নিবো।

চট্টগ্রাম বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর ইলিয়াস উদ্দিন জানান, মিরসরাই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিম উদ্দিন ভুইয়ার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আপিল এন্ড আরবিট্রি কমিটি বছরে একবার বা প্রয়োজনে একাধিকবার শুনানি করে। আমি সেই কমিটির প্রধান। আমরা অতি শিগ্রই শুনানির আয়োজন করবো। শুনানি থেকে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে তার বিরুদ্ধে যে জঘন্য অভিযোগ তা মুখে প্রকাশ করাও লজ্জার। তার উচিত ছিল পদত্যাগ করে প্রতিষ্ঠানকে কলঙ্ক মুক্ত করা। কিন্তু তিনি সোজা পথে না গিয়ে তিনি বাকা পথে হাটছেন। নুন্যতম লজ্জা শরম থাকা উচিত ছিল তার।

আরও খবর

Sponsered content