প্রতিনিধি ২৪ আগস্ট ২০২৪ , ৫:০৩:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ
২৩শে আগষ্ট, ২০২৪ইং “৫১তম বাংলাদেশ লিও দিবস”। আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ২৩শে আগষ্ট লিও ইজমের শুভ সূচনা হয়। ঢাকা ধানমন্ডি লায়ন্স ক্লাবের অভিভাবকত্বে “কমলাপুর লিও ক্লাব” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে লিও আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে।
এই আন্দোলনের জনক এক মহান ব্যক্তিত্ব যিনি প্রথম বাংলা সবাক চলচিত্র “মুখ ও মুখোশ” এর সফল র্নিমাতা ও প্রাক্তন জেলা গভর্নর লায়ন আব্দুল জব্বার খাঁন। তিনি লিওদের মাঝে বাংলাদেশের লিওইজমের জনক নামে খ্যাত। অনেক রক্ত ও ত্যাগ তিতীক্ষার মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি সবুজ শ্যামলীমা বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসাবে পৃথিবীর মানচিত্রে গৌরব জনক স্থান অর্জন করে। যুদ্ধবিধস্থ সদ্য স্বাধীন দেশে যুবকদের মাঝে বিরাজ করছিল অস্থিরতা ও চরম হতাশা। জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ যুব সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে ও সেবার জগতে তাদের অনুপ্রানিত করতে মনস্থ করলেন মরহুম লায়ন আব্দুল জব্বার খাঁন।
মূলত তাঁরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক সেবা সংগঠন লায়ন্স ক্লাবের মাধ্যমে আšতর্জাতিক যুব সেবা সংগঠন “লিও কèাব” আত্মপ্রকাশ করে। আজকের এই দিনে আমরা সেই মহান লায়ন যাঁর মাধ্যমে আমাদের যুব সমাজ সেবার আঙ্গীনায় অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারছে তাঁকে কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরন করছি এবং সেই সাথে বাংলাদেশের লায়নইজমের জনক মরহুম লায়ন এম,আর, সিদ্দিকীকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। লিও শব্দের অর্থ নেতৃত্ব, অভিজ্ঞতা ও সুযোগ।
লিও মনোগ্রামে দেখা যায় দুইটি সিংহ দুই দিকে তাকিয়ে আছে। এর অর্থ হচ্ছে একটির মাধ্যমে লিওরা তাকিয়ে থাকবে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে যেখানে তারা প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে অন্যের দিকে। অন্যটির মাধ্যমে লিওরা স্ব-স্ব পেশায় আত্মনিয়োগ করে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে।
লিও হওয়ার যোগ্যতা :
আপনি যদি একজন সমাজ সচেতন তরুণ কিংবা তরুণী হন এবং বয়স যদি ১২ বৎসর থেকে ৩০ বৎসরের মধ্যে থাকে অবশ্যই আপনি লিও সদস্য হবার যোগ্যতা রাখেন। আন্তর্জাতিক ভাবে লিও সদস্য দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে আলফা বা নিয়মিত সদস্য, যাদের বয়স ১২ থেকে ১৭ বৎসর। ওমেগা বা সিনিয়র সদস্য যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বৎসর। আপনাকে এই কথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, লিও সদস্য পদ পেতে হলে আপনাকে সৎ চরিত্রবান ও সেবার মনোভাব সম্পন্ন হতে হবে এবং সমাজ রাষ্ট্রবিরোধী কোন কার্যকলাপে জড়িত থাকা যাবে না।
লিও সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়া :
লিও হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন কোন তরুণ বা তরুণী লিও সদস্য হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে উনাকে পরিচিত কোন লিও ক্লাবের সদস্যের সাথে যোগাযোগ করে আগ্রহ প্রকাশ করতে হবে। ঐ সদস্য উনাদের ক্লাবের নিয়মিত সভায় আগ্রহী তরুণ/ তরুণীকে নিয়ে যাবেন এবং সভায় পরিচয় করিয়ে দিয়ে উদ্দেশ্যটা জানাবেন। সভায় তিনি ঐ তরুণ/তরুণীর স্পন্সর হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিবেন। তারপর ক্লাবের নিয়ম অনুযায়ী ফরম পূরণ ও প্রয়োজনীয় ফি দিয়ে সদস্য পদ গ্রহণ করবেন।
লিও সংগঠনের নীতিমালা :
আমি আমার বৃত্তি জীবনের মর্যাদার প্রতি আস্থাবান হবো এবং সেই লক্ষ্যে নিষ্ঠার সাথে কর্মলিপ্ত থেকে আমরা পেশাগত কাজে উৎকর্ষের জন্য সুনাম অর্জনে সচেষ্ট থাকŸো। আমি মনে রাখবো বন্ধুত্বই বন্ধুত্বের লক্ষ্য, বন্ধুত্ব কখনো কার্যসিদ্ধির মাধ্যম নয়। আমি বিশ্বাস রাখবো প্রকৃত বন্ধুত্বের মূল্য একজনের প্রতি আর একজনের উপকার বা সাহায্যর দ্বারা নিরুপিত হয় না। বরং সত্যিকার বন্ধুত্ব কিছুই দাবী করেনা এবং উপকার গ্রহণ করে শুভেচ্ছার নিদর্শন স্বরুপ। একজন নাগরিক হিসাবে আমরা জাতি, রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য আমি সর্বদা স্মরণ রাখবো। কথায়, কাজে ও আচরণে তাদের প্রতি আনুগত্যে আমি অটল ও অবিচল থাকবো।
দুঃস্থকে সহানুভূতি, দুর্বলকে সহায়তা ও নিঃস্বকে দান করে আমি তৃপ্ত হবো। সমালোচনার ক্ষেত্রে আমি সতর্ক ও সংযত থাকবো কিন্তু প্রশংসাই হবো উদার ও অকৃপন, আমি গড়ে তুলবো কখনোও ভাঙ্গবো না।
লিওদের প্রত্যাশা :
আমরা লিওরা জীবনের অর্ঘ্য সাজাই আশার কুসুমে, স্বপ্নের বুননিতে গড়ি অনাগত জীবনের নকশীকাথাঁ। বিগত দিনের জীর্নতার নাগপাশ ছিন্ন করে অনাগত দিনের রক্তিম সূর্য্যরে উষ্ণ আলিঙ্গনে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রতিকূলতা অক্টোপাসের মত সহস্র বেষ্টনীতে ঘিরে আছে আমাদের যুব সমাজকে। আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় হউক মাদকমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত যুব সমাজ প্রতিষ্ঠা করে ফুলের মত সুভাসিত জীবন গড়ি। গভীর ধ্বংস স্তুপের মাঝে দাড়িঁয়ে ও আমরা নির্মানের কঠিন শপথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সকল আধাঁর সরিয়ে আলোকিত ঝর্নাধারার ধুঁইয়ে দিয়ে শান্তির নীলাকাশ প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার গ্রহন করতে হবে লিওদের। সকল ভালোর প্রতি উদাত্ত আহ্বান আর অসুন্দরের প্রতি ক্ষমাহীন সংগ্রাম আমাদের।
মনে রাখতে হবে এই বিশ্বে যা কিছু ভালো তা বিশ্বের সকল মানুষের অধিকার। এই অধিকার আদায়ের নাম হউক লিওইজম। আমরা এমন একটি দিনের অপেক্ষায় আছি যেদিন স্বপ্নের পাখীরা নীড় খুঁজে পাবে, চিকিৎসাহীন মৃত্যু করবেনা যখন উপহাস, দুস্থের মুখে হাসি আর অন্ধের চোখে আলো সেদিন থাকবে নিশ্চিত। আত্ম সচেতন ব্যক্তি ও জাতিই পারে বিশ্বের মাঝে সন্মানের সাথে মাথা উঁচু করে দাড়াঁতে। এই জন্য যে উপকরনের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন তা হচ্ছে নেতৃত্ব, অভিজ্ঞতা, মহতী উদ্যোগ ও সুষ্ট পরিকল্পনা। আমাদের একান্ত বিশ্বাস বাংলাদেশের সোনার ছেলে মেয়ে বলে খ্যাত প্রিয় লিও ভাই বোনেরা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বের মানচিত্রে স্থায়ীরুপ দিতে সক্ষম হবেন। আমাদের লিও ভাই- বোনেরা সুশিক্ষা গ্রহণ, সৎচরিত্র গঠন ও আত্ম মানবতার সেবায় অংশ গ্রহন করে আগামী দিনের আলোকিত মানুষ হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন।
১/২
লিও জেলা ৩১৫-বি-৪ :
মাল্টিপল লিও জেলা ৩১৫-এর মধ্যে অন্যতম সক্রিয় লিও জেলা ৩১৫-বি-৪, বাংলাদেশ। মাল্টিপল লিও জেলা ৩১৫ এর অধীনে ৭টি লিও হচ্ছে অ১,অ২,অ৩, ই১,ই২,ই৩,ই৪ লিও জেলা ৩১৫-বি-৪ এর অধীনে ৪৮ টি সক্রিয় লিও ক্লাব রয়েছে। ৩১৫-বি-৪ লিও জেলা (১৯৯৭-৯৮) লিও সেবা বর্ষে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন প্রাক্তন জেলা সভর্নর লায়ন মোঃ মনজুর আলম মনজু-পি.এম.জে.এফ। প্রতিষ্ঠাকালীন সচিব ছিলেন বর্তমানে রিজিয়ন চেয়ারপার্সন হেড কোয়ার্টার (এডমিন) লায়ন ডাঃ মোঃ জাকিরুল ইসলাম। বর্তমানে লিও জেলা ৩১৫-বি-৪ এর অধীনে ৪৮ লিও ক্লাবের মাধ্যমে দুই হাজারের অধিক লিও সদস্য সেবা কর্মকান্ডে নিজদের সর্বদা নিয়োজিত রেখেছেন। লিও জেলা সভাপতি লিও দীপ্ত দে, সদ্য প্রাক্তন সভাপতি লিও আতিক শাহরিয়ার সাদিফ, সহ-সভাপতি লিও মোঃ ইরফান উদ্দিন চৌধুরী, সেক্রেটারী লিও সিফাতুল ইসলাম সামি, ট্রেজারার লিও সিরাজুল করিম হিরো। লিও জেলা ৩১৫-বি-৪ এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন। মাল্টিপল জেলা ৩১৫ বাংলাদেশ এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সভাপতি লিও আকিব দিপু, সদ্য প্রাক্তন সভাপতি লিও লামিয়া করিম, সহসভাপতি ১-লিও আতিক শাহরিয়ার সাদিফ, সহসভাপতি -২ লিও বাধন আহমেদ সেক্রেটারী লিও ফাহিম আশরাফ খাঁন ট্রেজারার পদে লিও দীপ্ত দে।
মাল্টিপল লিও জেলা ৩১৫ এর অধীনে ২১৫টি লিও ক্লাব এর অধীনে প্রায় নয় হাজার লিও সদস্য বাংলাদেশের লিওইজমে সেবা কর্মকন্ডে নিয়োজিত রয়েছেন। সারা বিশে^ ৭৬০০অধিক লিও ক্লাবের অধীনে ১৭২২১৯ জন লিও সদস্য সেবা কর্মকান্ডে অংশ গ্রহন করছেন। লিও জেলা ৩১৫ বি-৪ সুচারু রুপে পরিচালিত করছেন প্রাক্তন লিও জেলা সভাপতি ও প্রাক্তন মাল্টিপল লিও জেলা সভাপতি বর্তমানে লিও ক্লাবস চেয়ারম্যান লায়ন মোঃ বদিউর রহমান ও যুব বিনিময় চেয়ারপার্সন লায়ন মেঃ শাহজালাল।
লায়ন্স জেলা ৩১৫-বি-৪ বাংলাদেশ :
বর্তমান লায়ন্স সেবা বর্ষ (২০২৪-২০২৫) লায়ন্স জেলা ৩১৫-বি-৪, বাংলাদেশ এর নেতৃত্ব দিচ্ছেন সম্মানিত জেলা গভর্নর “যত্নের ছায়া, ছড়ায় মায়া “ঝযধৎব ্ ঈধৎব এর প্রবক্তা লায়ন কহিনুর কামাল-এম.জে.এফ সদ্য প্রাক্তন জেলা গভর্নর লায়ন এমডি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরী -পি.এম.জে.এফ ১ম ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ অপু -এম.জে.এফ।
২য় ভাইস জেলা গভর্নর লায়ন মোঃ কামরুজ্জামান লিটন-এম.জে.এফ। International President Ln. Fabricio Oliveira ডাক দিয়েছেন ÒMAKE YOUR MARK” ।
আসুন আমরা পরম সম্মানিত জেলা গভর্নর লায়ন কহিনুর কামাল- এম.জে.এফ যুগপোযোগী ডাক “যত্নের ছায়া, ছড়ায় মায়া” “Share & Care” সফল বাস্তবায়নের জন্য এক যোগে কাজ করি এবং সমাজের অবহেলিত জনগোষ্টির জন্য আত্নত্যাগ করে সুপ্রিয় লিও জেলা সভাপতি লিও দীপ্ত দে এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ লিওইজমের ৫১তম বর্ষে “যত্নের ছায়া, ছড়ায় মায়া” শ্লোগানের স্বার্থক বাস্তবায়নে সমাজকে পরিবর্তনের লক্ষ্যে লিওদেরকে সেবার মানসিকতায় পরিচালনা করিও আগামী দিনের সুনাগরিক হিসাবে গড়ে তুলি।
লেখক: রিজিয়ন চেয়ারপার্সন হেডকোয়ার্টার (এডমিন), লায়ন্স ক্লাবস্ ইন্টারন্যাশনাল, জেলা ৩১৫-বি-৪, বাংলাদেশ।