দেশজুড়ে

যমুনার চরে পাটের ভাসমান হাট

  প্রতিনিধি ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৩:২৯:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ

যমুনার চরে পাটের ভাসমান হাট

সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল নাটুয়ারপাড়ার কোল ঘেঁষে বয়ে চলা প্রমত্তা যমুনায় জটলা বেধেছে শত শত নৌকা। আর এই নৌকাতেই জমে উঠেছে ভাসমান পাটের হাট।

শতবর্ষী ব্যতিক্রমি এই পাটের হাট এর সুনাম সিরাজগঞ্জ জেলাসহ আশপাশের জেলার পাট ব্যবসায়ীদের কাছে। নৌকাতেই হাঁকডাকে বিক্রি হচ্ছে পাট। নদীপথে ক্রেতা বিক্রেতাদের যাতায়াত সুবিধার কারণে ভাসমান এ হাট সরগরম হয়ে ওঠে ভোর থেকেই। সকাল ৮টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চলে কেনাবেচা। শত বছর ধরে বসছে নাটুয়ারপাড়ার ব্যতিক্রমী এ হাটটি।

দূরদূরান্ত থেকে নৌকা যোগে এ ভাসমান পাটের হাটে পাট কেনা বেচা করতে আসেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। নৌকার পাশাপাশি নদীপাড়েও প্রচুর পাট কেনা বেচা হয়। তবে গত কয়েক বছরের তুলনয় এবার পাটের আমদানী বেশী দাম একটু কম। হাট বসে সপ্তাহের শনি ও বুধবার।

সরেজমিনে হাটে গিয়ে দেখা যায়, কাজিপুরসহ পার্শ্ববর্তী জামালপুরের সরিষাবাড়ি, মাদারগঞ্জ, টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর, বগুড়ার ধুনট, শেরপুর ও সারিয়াকান্দির ক্রেতা বিক্রেতারা ভাসমান এই হাটে পাট কেনা-বেচা করতে এসেছেন নৌকা যোগে। তীর থেকে প্রায় ১শ গজ দুরে নদীতে নোঙর ফেলে শতাধিক নৌকায় কেনা বেচা হচ্ছে পাট। বিক্রেতাদের কাছ থেকে পাট কিনে অন্য নৌকায় উঠিয়ে নিচ্ছেন ব্যাপাড়িরা।

নৌকার পাশাপাশি চরাঞ্চলের একমাত্র পরিবহন ঘোড়ার গাড়িতেও পাট বোঝাই করে স্থানীয় কৃষকরা পাট বিক্রি করতে আসেন। নাটুয়ারপাড়া ভাসমান পাটের হাটে পাট বিক্রি করতে আসা বগুড়ার সারিয়াকান্দির মোন্নাত হোসেন বলেন, চার বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছিলেন। ১৬শ থেকে ২১শ টাকা মণ পাট বিক্রি করেছেন। এবার পাটের দাম খুব কম, বিক্রেতা বেশী। সোনাতোলার চাষি আলমগীর বলেন, পাট কাটা ও ধোয়ার কামলার দাম বেশী। পাটের দাম খুব কম। ৭ মণ পাট ১৫শ টাকা মণ হিসেবে বিক্রি করছি। খরচা ওঠাই জুলুম। পাট কাটার পর পানির অভাবে জাঁক দিতে দেরি হয়েছিল। তাই পাটের মানও খারাপ একটু খারাপ ছিল।

ভাসমান হাটে পাট কিনতে আসা জামালপুরের ব্যাপাড়ি হবিবর রহমান বলেন, এখানে পাটের আমদানী বেশী। নৌপথে যাতায়াত খরচ কম তাই এখানে আছি। আজ ৩১২ মণ পাট কিনেছি। গেলবছর থেকে এবার অনেক কম দাম। এগুলো আবার নৌকাতেই নিয়ে যাবো। সারিয়াকান্দির ব্যাপারি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, প্রতি বছরই এ হাটে পাট কিনতে আসি। এখানে দাম কিছুটা কম পাওয়া যায়। যাতায়াত খরচও অনেকটা কম।

নাটুয়ারপাড়া হাটের ইজারাদার ও কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেফাজ উদ্দিন মাস্টার বলেন, দূরদূরান্ত থেকে আসা ব্যাপাড়িরা প্রয়োজনে এখানে থাকতেও পারবেন। আগস্ট থেকে শুরু হয়ে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত এখানে পাটের হাট বসে। প্রতি হাটে ৭ হাজার থেকে ৯ হাজার মণ পাট কেনা বেচা হয় বলে তিনি জানান। কাজিপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, এবছর অতিরিক্ত খরার কারণে পাটের আবাদে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়েছি।

পর্যাপ্ত পানি না থাকায় জাঁক দিতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। তারপরও মোটমুটি বিঘা প্রতি আট-নয় মণ পাট পেয়েছেন কৃষকরা।
হাটের দিন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও ব্যাপাড়িদের সার্বিক নিরাপত্তা দিতে হাটের দিন যমুনা নদীতে পুলিশের বিশেষ টহল থাকে বলে কাজিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল কুমার দত্ত এ প্রতিবেদক কে জানান।

আরও খবর

Sponsered content