প্রতিনিধি ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৭:০৯:২৯ প্রিন্ট সংস্করণ
ইসরায়েলে কয়েকটি গোপন অস্ত্রভান্ডার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের। সেখানে শত শত বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র রাখা হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ও পাহারার মধ্যে। এসব অস্ত্র কোথায় আছে, তা প্রকাশ করা হয় না। এ নিয়ে রহস্যেরও শেষ নেই। গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি হামলার মধ্যে নতুন করে আলোচনায় এসেছে এসব অস্ত্রাগারের প্রসঙ্গ। গাজায় হামলা চালানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্রভান্ডার থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক নিচ্ছে ইসরায়েল। এদিকে ইসরায়েলকে সহযোগিতা করায় বাইডেন প্রশাসনের ওপর ক্রমেই চাপ বাড়ছে।
গতকাল বুধবার দ্য গার্ডিয়ান অনলাইনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, আশির দশকে এসব অস্ত্র ইসরায়েলে মজুত করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যে যে কোনো সংঘাতে যাতে সহজে অস্ত্র সরবরাহ করা যায়, সে জন্য ইসরায়েলে এসব অস্ত্রভান্ডার গড়ে তোলা হয়। পরে জরুরি পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে সেখান থেকে অস্ত্র ব্যবহারের অনুমতিও দেওয়া হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অস্ত্রভান্ডার থেকে বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক নিচ্ছে ইসরায়েল। এ নিয়ে স্বচ্ছতায় যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কয়েক মার্কিন কর্মকর্তা ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী বা আইডিএফকে নিরাপত্তা সহযোগিতার অংশ হিসেবে অস্ত্রভান্ডার থেকে অস্ত্র সরবরাহের কথা দ্য গার্ডিয়ানের কাছে স্বীকার করেছেন। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র মার্কিন কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই ইসরায়েলকে সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে। সাবেক এক পেন্টাগন কর্মকর্তা বলেন, এগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবহারের জন্য রাখা অস্ত্র। কিন্তু জরুরি পরিস্থিতিতে ইসরায়েল যাতে ব্যবহার করতে পারে, সে ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। ইসরায়েল যাতে বলতে না পারে, তাদের হাতে অস্ত্রভান্ডারের চাবি দেওয়া হয়নি।
গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর ইসরায়েল গাজায় হাজার হাজার বোমা ফেলে। তারা প্রকাশ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দাবি করছে। ইসরায়েল বেপরোয়াভাবে নির্বিচার বোমা ফেলায় বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গাজায় ২১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে প্রশ্নের মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি ইসরায়েলকে কী ধরনের বোমা দিচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
সম্প্রতি হোয়াইট হাউস থেকে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়, যেখানে ইসরায়েলে রাখা অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র ব্যবহারের শর্ত সহজ করার অনুমোদন চাওয়া হয়। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেক মার্কিন আইনপ্রণেতা। ইসরায়েল ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের ক্ষোভ প্রকাশের ঘটনা বিরল। এ অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের দাবি তুলে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন আইনপ্রণেতা জস পল। তিনি বলেন, অস্ত্রাগার থেকে ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বাইডেন প্রশাসনের নতুন ফন্দি।
এ পরিস্থিতিতে গাজায় নৃশংসতা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জা, হাসপাতাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার দপ্তর লক্ষ্যে পরিণত করা হচ্ছে। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, বুধবার খান ইউনিসের আল আমল সিটি হাসপাতালে হামলা হয়েছে।
সিএনএন জানায়, গাজায় হামলা অব্যাহত রাখার কথা বলেছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর প্রধানও। বুধবার তিনি জানান, হামাসের বিরুদ্ধে এ যুদ্ধ চলবে অনেক দিন ধরে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বক্তব্যের প্রতিফলন দেখা গেল তাঁর বক্তব্যে। এদিকে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের মোকাবিলা করতে লোহিত সাগর এলাকায় মোতায়েন রয়েছে মার্কিন যুদ্ধজাহাজ।
মঙ্গলবার তারা হুতিদের ছোড়া অন্তত ১৭টি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। ইয়েমেনের সশস্ত্র সংগঠনটি বলছে, গাজায় হামলার প্রতিবাদে ইসরায়েলগামী ও ইসরায়েল থেকে ছেড়ে যাওয়া জাহাজগুলোতে হামলা করছে তারা। লোহিত সাগরে গত দুই মাসে হুতিরা ১৪টি বাণিজ্যিক ও ব্যবাসায়ীদের জাহাজে কমপক্ষে ১০০টি হামলা চালিয়েছে।