প্রতিনিধি ১৫ অক্টোবর ২০২৫ , ১:৪৮:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ
গত ১৩ জুন ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় তেল আবিবের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত একটি গোপন ইসরায়েলি-মার্কিন সামরিক কমান্ড সেন্টার সরাসরি আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
অনুসন্ধানী সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গ্রেজোন’ জানায়, তেল আবিবের বিলাসবহুল ‘দা ভিঞ্চি টাওয়ার্স’ কমপ্লেক্সের নিচে নির্মিত এই ঘাঁটি ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে পরিচালনা করত। ‘সাইট ৮১’ নামে পরিচিত এই স্থাপনাটি ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। এর নকশা ও নির্মাণ তত্ত্বাবধান মার্কিন সেনাবাহিনীর প্রকৌশল বিভাগ প্রায় এক দশক আগে করেছিল।
হামলার পরপরই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তেল আবিবের আঘাতপ্রাপ্ত এলাকা সিল করে দেয় এবং সাংবাদিকদের ছবিসহ তথ্য সংগ্রহে বাধা দেয়। ফক্স নিউজের সাংবাদিক ট্রে ইয়ংস্টসহ অনেক সাংবাদিককে হাকিরিয়া কমপ্লেক্স ও আজরিলি সেন্টার এলাকার কাছ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
কিছু ঘণ্টা পরে ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই হামলা ইসরায়েলি পদক্ষেপের ‘প্রতিশোধমূলক অভিযান’ হিসেবে চালানো হয়েছে এবং সামরিক ও গোয়েন্দা স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্য করা হয়েছিল। গুগল ও ইয়ানডেক্স ম্যাপের স্যাটেলাইট চিত্রে ওই এলাকা ঝাপসা দেখা যায়, স্ট্রিট-ভিউ অ্যাক্সেসও বন্ধ—যা তেল আবিবে চলমান সামরিক সেন্সরশিপের ইঙ্গিত দেয়।
‘দ্য গ্রেজোন’ জানায়, দা ভিঞ্চি কমপ্লেক্সটি ২০১৩ সালে মার্কিন আর্মি কর্পস অব ইঞ্জিনিয়ার্সের প্রকল্পের অংশ ছিল। এর মাধ্যমে ‘সাইট ৮১’-কে প্রায় ৬ হাজার বর্গমিটার আয়তনের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক সিল্ড গোয়েন্দা বাঙ্কারে রূপান্তর করা হয়েছিল। ভূ-অবস্থান বিশ্লেষণ, ফাঁস হওয়া ইমেইল ও পাবলিক রেকর্ডের মাধ্যমে স্থাপনাটির অবস্থান নিশ্চিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সামরিক বাঙ্কারটি একটি শিশুদের খেলার মাঠ ও কমিউনিটি সেন্টার থেকে ১০০ মিটারও কম দূরত্বে অবস্থিত। সমালোচকরা বলছেন, ইসরায়েল ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এমন সংবেদনশীল সামরিক স্থাপনাগুলো বসিয়ে বেসামরিক নাগরিকদের মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে—যেমন অভিযোগ তারা ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে তুলে এসেছে।
‘দ্য গ্রেজোন’ আরও জানায়, সাবেক ন্যাটো কমান্ডার জেমস স্ট্যাভ্রিডিস এবং ইসরায়েলের সাবেক সামরিক প্রধান গাবি আশকেনাজির মধ্যে ফাঁস হওয়া চিঠিপত্রে ‘সাইট ৮১’-এর সামরিক গুরুত্ব স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। ২০১৫ সালের এক চিঠিতে স্ট্যাভ্রিডিস উল্লেখ করেন, মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থিঙ্কলজিক্যাল ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (IDF) সঙ্গে ‘সাইট ৮১’-এ বড় একটি চুক্তি সম্পন্ন করেছে।
দা ভিঞ্চি কমপ্লেক্সে ইসরায়েলি-মার্কিন বিনিয়োগকারী গোষ্ঠীর অর্থায়ন রয়েছে, যার মধ্যে চেক পয়েন্ট টেকনোলজিস ও এআই২১ ল্যাবস উল্লেখযোগ্য। এআই২১ ল্যাবস প্রতিষ্ঠা করেন ইসরায়েলি সামরিক গোয়েন্দা ইউনিট ‘৮২০০’-এর সাবেক সদস্যরা।
ফ্রান্সের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, হামলার পর ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো সেন্সরশিপের আওতায় এসেছে। ‘হারেৎজ’ পত্রিকায় দা ভিঞ্চি কমপ্লেক্সের ছবি প্রকাশ পেলেও আঘাতের খবর প্রায় দুই সপ্তাহ দেরিতে প্রকাশিত হয়, যা হামলার গুরুত্ব আড়াল করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।











