প্রতিনিধি ২২ অক্টোবর ২০২১ , ৫:১২:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ
চট্টগ্রামের জেএমসেন হলের পূজামণ্ডপে হামলার চেষ্টা, ব্যানার-পোস্টার ছেঁড়া ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে গ্রেফতার ১০ জনের মধ্যে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ, চট্টগ্রামের ৯ জন নেতাকর্মী রয়েছেন। তাদের নেতৃত্বে ও পরিকল্পনায় মিছিল এবং পূজামণ্ডপে হামলা ও ব্যানার-পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবার (২২ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (দক্ষিণ) বিজয় বসাক বলেন, মিছিলের ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা ও তদন্ত করে সংশ্লিষ্টতা পাওয়ায় তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মী বলে পরিচয় পাওয়া গেছে। আমাদের কাছে পরিচয় তারা এখন অপরাধী। অপরাধ করেছে বলেই তাদের আমরা আইনের আওতায় নিয়ে এসেছি।
তিনি আরো বলেন, এ ঘটনার সাথে এবং পিছনে যারা জড়িত আছে সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, নেতৃত্ব প্রদানকারী ও পরিকল্পনাকারীকে আমরা পেয়েছি। তবে আমরা কখনোই বলছি না এরাই মূল পরিকল্পনাকারী। তদন্তে আরো কিছু বের হতে পারে। আমরা কিছু টেলিফোনের কথোপকথন পেয়েছি, সেগুলো পর্যালোচনা করছি।
চট্টগ্রামের কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি গ্রেফতারকৃতরা হামলার পরিকল্পনা করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সাধারণ মুসল্লিদের কাজে লাগিয়েছে। সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য এই হামলার ঘটনা। বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ, চট্টগ্রামের নেতাদের পরিকল্পনাতেই চট্টগ্রামের জেএমসেন হলে হামলার ঘটনা ঘটেছে।
তিনি আরো বলেন, গ্রেফতার ১০ জনকে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হবে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর জেএমসেন হলে হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় ১০ জনকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। রাত ২টার দিকে গ্রেফতারের বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নেজাম উদ্দীন।
তিনি তখন বলেন, ভিডিও ফুটেজ দেখে বৃহস্পতিবার রাত ৮টা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঘটনার দিন মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন রয়েছেন।
গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগরের আহ্বায়ক মো. নাছির, সদস্য সচিব মিজানুর রহমান এবং বায়েজিদ থানার আহ্বায়ক ডা. রাসেল এবং ইয়ার মোহাম্মদ, মো. মিজান, গিয়াস উদ্দিন, ইয়াসিন আরাফাত, হাবিবুল্লাহ মিজান, ইমন ও ইমরান হোসেন রয়েছেন।
এদিকে, ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রামের জেএমসেন হলে পূজামণ্ডপে হামলার ঘটনায় ৮৩ জনের নাম উল্লেখ করে কোতোয়ালি থানায় মামলা দায়ের করা হয়। মামলা অজ্ঞাতনামা আরো অন্তত ৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। কোতোয়ালি থানার এসআই আকাশ মাহমুদ ফরিদ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি দায়ের করেন।
এর আগে চট্টগ্রামের জেএমসেন হলের পূজামণ্ডপে হামলার চেষ্টা ও ব্যানার-পোস্টার ছেঁড়াসহ পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ৮৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
১৫ অক্টোবর দুপুরে জুমার নামাজের পর আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদের সামনে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে একদল লোক জেএমসেন হল পূজামণ্ডপের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। এ সময় তারা ঢিল ছুড়ে এবং পূজার ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে। পুলিশ পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে এবং লাঠিচার্জ করে হামলাকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ ঘটনায় নির্ধারিত সময়ে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া যায়নি।
ঘটনার প্রতিবাদে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতা অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ১৬ অক্টোবর চট্টগ্রামে আধাবেলা হরতালের ডাক দেন। ওইদিন সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর আন্দরকিল্লা মোড় এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন হরতাল সমর্থকরা।