দেশজুড়ে

রাউজানের নোয়াজিষপুরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ

  প্রতিনিধি ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ৭:২৯:১১ প্রিন্ট সংস্করণ

রাউজানের নোয়াজিষপুরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ

রাউজান (চট্টগ্রাম) প্রতিনধি : চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার নোয়াজিষপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের এক নিভৃত পল্লী মিলন মাস্টার ঘাটা। এই গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের জীবিকা কৃষি কাজের উপর নির্ভরশীল প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে দুর্ভোগের অন্ত থাকেনা এই গ্রামের কয়েক শতাধিক পরিবারের। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা গ্রোতস্বিনী সর্তা খালটিই যেন দুঃখের বার্তা নিয়ে ফিরে আসে এলাকার মানুষের কাছে। বর্ষা মৌসুমে টানা ভারী বর্ষণ আর পাহাড়ী ঢলে খালের গ্রোতের ধারায় যেন লন্ডভন্ড হয়ে যায় গ্রামের অনেক পরিবারের স্বপ্ন। এমনই এক স্বপ্ন ভাঙার দিনে গ্রোতের তীব্রতায় খালের বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মারাতœক আকার ধারণ করে জনদুর্ভোগ। টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ী ঢলে পানি বন্দী জীবনের দুর্দশা যেন পিছু ছাড়েনা এলাকার মানুষের। যার প্রভাবে এলাকার বিস্তীর্ণ কৃষি জমি নিমজ্জিত থাকে পানির নিচে। এলাকার প্রায় ৫ শতাধিক পরিবারের এই ভোগান্তি লাঘবে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রাউজানের সাংসদ এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকে অবহিত করলে তিনি এলাকার মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস দেন। তবে সা¤প্রতিক সময়ে খালের ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধির আশংকায় স্থানীয় নোয়াজিষপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এলাকাবাসীর সাথে বৈঠক করে নিজেদের স্বেচ্ছাশ্রমে খালের বাঁধ নির্মাণের প্রস্তাব দিলে এলাকার সকল শ্রেণী-পেশার এক হাজারের অধিক মানুষ চেয়ারম্যানের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বাঁধ নির্মাণে মাটি কাটায় অংশ নেন। এলাকার লোকজনের সাথে ইউপি চেয়ারম্যান সরোয়ার্দী সিকদার নিজেও কোদাল হাতে মাটি কাটায় যোগ দেন। দীর্ঘ একমাস ধরে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে এলাকাবাসীর অক্লান্ত পরিশ্রমে মাটি ভরাট শেষে সিমেন্ট/বালির সংমিশ্রণে তৈরীকৃত বস্তা ফেলে নির্মিত হয় খালভাঙন রোধে দুইশ মিটার বাঁধ। স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহজাহান ও অজিত মল্লিক জানান, সর্তাখালের ভাঙনে এলাকার অনেক পরিবারে ভিটেবাড়ি, ফসলি জমি হুমকির মুখে ছিল। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ ছিল এলাকার সিকদার বাড়ি, ওয়াহেদ বাড়ি, নাসির মোহাম্মদ সিকদার বাড়ির বাসিন্ধারা। এলাকায় ভাঙনরোধে চেয়ারম্যানের ডাকে সবাই এগিয়ে আসায় গ্রামের চিত্র পাল্টে গেছে। এলাকার যুবক সাইদুল ও সোহেল জানান, খালের পার্শ্বে গ্রামবাসীর চলাচলের রাস্তা দিয়ে স্থানীয় গনিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফতেনগর আইনুল ইসলাম মাদ্রাসায় এলাকার শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়া করে থাকে। খালের ভাঙনে চলাচলের রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় স্থানীয় স্কুল, মাদ্রাসায় অধ্যায়নরত শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েন। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোহাম্মদ আলম বলেন, সর্তাখালের ভাঙনে এলাকার বাসিন্ধাদের দুর্ভোগের সীমা ছিলনা। ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে এলাকার মানুষ স্বেচ্ছাশ্রমে ভাঙনরোধে বাঁধ নির্মাণ করায় দীর্ঘদিনের ভোগান্তি লাঘব হলো। নোয়াজিষপুর ইউপি চেয়ারম্যান লায়ন সরোয়ার্দী সিকদার বলেন, এলাকাবাসীর কষ্ট দেখে আমি সবাইকে ডেকে স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিই। আমি নিজেও কোদাল হাতে নিয়ে মাটি কেটেছি। দীর্ঘ এক মাসের প্রচেষ্টায় বাঁধ নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এ কাজে এলাকাবাসী উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে এসেছে। স্বেচ্ছাশ্রমের পাশাপাশি বাঁধ নির্মাণ কাজে প্রবাসীসহ এলাকার মানুষ সাধ্যমতো সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন। সবার প্রচেষ্টায় ১৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে দুইশ মিটার বাঁধ নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করেছি। বাঁধ নির্মাণের ফলে এলাকাবাসীর মুখে হাসি ফিরেছে।

আরও খবর

Sponsered content