প্রতিনিধি ৭ জুলাই ২০২০ , ৮:৩৫:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ
অনলাইন ডেস্ক: করোনার কারণে মানুষ বাড়ি চলে যাওয়ায় রাজধানীর বেশিরভাগ বাসা-বাড়ি বিশেষ করে ফ্ল্যাট এখন ভাড়াটিয়াশূন্য। এ অবস্থায় হোল্ডিং ট্যাক্স (কর) আদায়ে নমনীয় রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন। রাজধানীর মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, তেজগাঁও, মতিঝিল, খিলগাঁও, আজিমপুর এলাকাগুলোতে ভাড়াটিয়াদের বসবাস তুলনামূলকভাবে বেশি। ভালো একটি বাসা পেতে নাভিশ্বাস অবস্থা ছিল তাদের। অনেক বাড়ি-ফ্ল্যাটের মালিকদের নানান যন্ত্রণা ভোগ করেও থাকতে হয়েছে ভাড়াটিয়াদের। সেই মালিকরাই এখন পাচ্ছেন না ভাড়াটিয়া।
রাজধানীতে বসবাস করা বেশিরভাগ ভাড়াটিয়া উপার্জন না থাকায় গ্রামের বাড়িতে চলে গেছে। যে কারণে আবাসিক ভবনগুলোর গেটে এখন ‘ভাড়া হবে’ বা ‘টু-লেট’ সাইনবোর্ড ঝুলছে। গ্রামে চলে যাওয়া বেশিরভাগ মানুষই মধ্যবিত্ত, নি¤œমধ্যবিত্ত অথবা একেবারেই নি¤œ আয়ের মানুষজন। কেউ বেসরকারি খাতের চাকরি হারিয়ে, কেউ বা ছোটখাটো ব্যবসা গুটিয়ে ছাড়ছেন রাজধানী।
ভাড়াটিয়ারা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে আর হয়তো আসা হবে না ঢাকায়। আর এতে বিপাকে পড়েছেন রাজধানীর ভবন মালিকেরা। কেউ চিন্তিত ব্যাংকের ঋণ পরিশোধের চুক্তি নিয়ে, কেউ চিন্তিত সিটি করপোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে। তবে রাজধানীর দায়িত্বে থাকা দুই সিটি করপোরেশন এক রকম সাময়িক সুবিধা দিয়েছে ভবন ও ফ্ল্যাট মালিকদের।
স¤প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে, বিলম্ব ফি বা জরিমানা ছাড়াই হোল্ডিং ট্যাক্স জমা দেওয়ার মেয়াদ বাড়িয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই সুবিধা পাবেন ভবন ও ফ্ল্যাট মালিকেরা। অন্যদিকে নতুন করে হোল্ডিং ট্যাক্স না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)।
রাজধানীর হোল্ডিংগুলো থেকে পাওয়া কর দুই সিটি করপোরেশনের রাজস্ব আয়ের অন্যতম বড় একটি খাত।
জানা গেছে, ডিএনসিসির হোল্ডিং ট্যাক্স ও পরিচ্ছন্ন লাইটিং খাতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল প্রায় ৪৪০ কোটি টাকা। এর আগের অর্থ বছরে অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় হয়েছিল ৩শ কোটি টাকার ওপরে। তবে বর্তমানে এখন পর্যন্ত এই অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার অনেক কম কর আদায় করা গেছে। অনুপাতের হিসেবে প্রায় ৬৬ শতাংশ হোল্ডিং ট্যাক্স এখন পর্যন্ত পেয়েছে ডিএনসিসি।
সংস্থাটির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুদল হামিদ মিয়া জানান, করোনার কারণে আমাদের কর আদায় কম হয়েছে। বিগত তিন মাসে যে কর আদায় হয়েছে তা গতবছরের এই সময়ের তুলনায় মাত্র তিন ভাগের এক ভাগ। তবে এতকিছুর পরেও আমরা ভবন-ফ্ল্যাট মালিকদের কর রেয়াত দিচ্ছি। যাদের ভবন বা ফ্ল্যাটে ভাড়াটিয়া একেবারেই নেই, খালি পড়ে আছে তাদের হোল্ডিং ট্যাক্স ৫০ শতাংশ পর্যন্ত রেয়াত করা হবে। প্রতিবার সর্বোচ্চ ছয় মাসের জন্য এই কর রেয়াত করা যাবে। আমাদের বরাবর ভবন-ফ্ল্যাট মালিকদের আবেদন করতে হবে।
রাজস্ব আদায় নিয়ে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, এবার রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। মহাখালীর মার্কেট থেকে আনা রাজস্ব পাচ্ছি না কারণ সেটিকে কোভিড হাসপাতালের জন্য দেওয়া হয়েছে। গরুর হাট কমিয়ে আনা হয়েছে, সেখানেও রাজস্ব হারাচ্ছি। তবে এই সবকিছুই নগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য। হোল্ডিং ট্যাক্স আমরা আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিলম্ব ফি ছাড়াই জমা রাখার সুযোগ রেখেছি।
হোল্ডিং ট্যাক্স প্রসঙ্গে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বলেন, বিনা বিলম্ব ফিতে হোল্ডিং ট্যাক্স জমা দেওয়ার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত আমাদের এখানে হয়নি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে হোল্ডিং ট্যাক্স থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫০ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৭৯ দশমিক সাত নয় কোটি টাকা। তবে হোল্ডিং ট্যাক্স ফি বাড়ছে না এটা নিশ্চিত।