প্রতিনিধি ২৪ এপ্রিল ২০২০ , ৮:১১:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ
রানা প্লাজা ধসের দিবস জন সমাগম ছাড়াই পালিত
এস এম সবুজ, সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি : সাভারে ধসে পড়া রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির সপ্তম বছর পূর্তি । ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সাত বছর আগে অপরিকল্পিত ভাবে নির্মিত ৯ তলা ভবন রানা প্লাজা ধসের মধ্যদিয়ে দেশী পোশাক শিল্প ও সংশ্লিষ্ট শ্রমিকসহ বিশ্বকে কাঁপিয়ে দেয় এই ট্রাজের্ডি । নিহত শ্রমিকদের পরিবার ও আহত শ্রমিকরা এখনো সেই স্মৃতির কথা ভূলতে পারেনি।
গত সাতটি বছর নিহত, আহত ও নিখোঁজ শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যরা ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে নির্মিত অস্থায়ী বেদীতে ফুলের শ্রদ্ধাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে ঘটনার মূল নায়ক ভবন মালিক সোহলে রানা ফাঁসি ৫টি গার্মেন্টস মালিকদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি ও ক্ষতিপূরণের দাবী জানিয়ে আসছিল । প্রতিবার শ্রদ্ধা নিবেদনে পিছিয়ে থাকতোনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল , সামাজিক সংগঠন, উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও ঢাকা জেলা পুলিশ।
এবার করোনা ভাইরাস সংক্রামন ও মোকাবেলায় সকল ধরনের কর্মসূচি বাতিল করেছে শ্রমিক সংগঠনের নেতারা। দিবসটি উপলক্ষে জনসমাগম না করার জন্য নির্দেশনা রয়েছে সংশ্লিষ্টদের। করোনা পরিস্থিতিতে রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিকদের প্রতি ঘরে বসে শ্রদ্ধা জানানোর আহবান জানিয়েছেন শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
সাভার উপজেলা এলাকার ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকের পর এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সাভার–আশুলিয়া গার্মেন্টস শিল্প শ্রমিক সংগঠনের নেতা কর্মীরা। একাধিক শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি স্থগিত করা হলেও শত ব্যস্থতার মধ্যেও দিনটিকে স্মরণ করেছে ঢাকা জেলা পুলিশ ও শিল্প পুলিশ ।
শুক্রবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে সাভার বাস স্ট্যান্ডে রানা প্লাজার সামনে ঢাকা জেলা পুলিশ ও শিল্প পুলিশ অস্থায়ী বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় সাভার মডেল থানা পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) এএফএম সায়েদ, আশুলিয়া থানা পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) রিজাউল হক দিপুসহ শিল্প পুলিশের কর্মকর্তা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। নিহত ও আহত পরিবারের পক্ষ থেকে সাভার উপজেলা প্রশাসন শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন।
এ ছাড়াও জনসমাগম এড়িয়ে রানা প্লাজা শ্রমিক ইউনিয়, বাংলাদেশ গার্মেনটস আন্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন ফুলের শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে রানা প্লাজার সামনে অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি সাঁজোয়া যান লক্ষ করা গিয়েছে। পুলিশ ও সাংবাদিক ছাড়া সাধারণ কোনো মানুষকে বেদির সামনে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। করোনার কারণে পুলিশ ও সাভার উপজেলা প্রশাসনের শত বাধ্য বাধকতা পেরিয়ে প্রতিবছরের মত ৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার সকালে ধসে পড়া রানা প্লাজার সামনে এসে কাঁদতে শুরু করেন সন্তান হারা এক মা সরবানু। ছেলে মারা যাওয়ার পর কষ্টেই দুই মেয়ে নিয়ে জীবন যাপন করছেন বলে জানান।
গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে সাভারের রানা প্লাজা দিবস উপলক্ষে সকল কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে নিহত শ্রমিকদের প্রতি ঘরে বসে শ্রদ্ধা জানানোর আহবান জানানো হয়েছে। এই বিষয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বনির্ভর ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের সঙ্গে আমাদের বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের নেতা কর্মীদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের পর আমার এ সিধান্ত নিয়েছি।
অপর দিকে শ্রমিক সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি রফিকুল ইসলাম সুজন সকল কর্মসূচি স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ধামসোনা ইউপি চেয়ারম্যান এর সাথে বৈঠক শেষে রানা প্লাজার নিহত শ্রমিকের পরিবার ও আহত শ্রমিকদের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরন করার কথা বলা হয়। রানা প্লাজার আহত ও নিহতদের পরিবারে করোনার প্রভাব পড়েছে। তাদের এখন আয় রোজগারের সব পথ বন্ধ। দুর্দশাও বেড়েছে তাদের। তারা শুধু তাকিয়ে আছে শ্রমিক সংগঠনসহ স্থানীয় ও জনপ্রতিনিধির দিকে।
গতকাল ২৩ এপ্রিল চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম তাদের জন্য খাদ্যসামগ্রী তুলে দিয়েছে শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের হাতে। যা আজ বিতরন করা হবে। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল সকাল ৯ টার দিকে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহত শ্রমিক নিহতের ঘটনা ঘটে রানা প্লাজা ভবন ধসে মধ্য দিয়ে। ২৩ এপ্রিল সকালে ৯ তলা ভবনের তৃতীয় তলায় পিলার ও দেওয়ালে ফাটল দেখা দেয়। বিষয়টি নজরে আনে বিজিএমই এর কর্মকর্তারা বলে বুয়েটের বিশেষজ্ঞদের দিয়ে পরীক্ষা না কারা পর্যন্ত কার্যক্রম বন্ধ রাখতে।
কিন্তু গার্মেন্টস গুলোর মালিক ও ভবন মালিক শ্রমিকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে ২৪ এপ্রিল কাজে যোগ দিতে বাধ্য করে। রানা প্লাজা ধসের ঘটনায় ধ্বংসস্তুপ থেকে ২ হাজার ৪৩৮ জনকে জীবিত অবস্থায় এবং ১ হাজার ১শ ১৭ জনকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও ১৯ জন মারা যান। সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় ১ হাজার ১শ ৩৬ জনে। আহত হন ১ হাজার ৫শ’ ২৪ জন। ২শ ৯১টি লাশ অশনাক্ত অবস্থায় জুরাইন কবরস্থানে দাফন করা হয়। পরে ডিএনএ টেস্টের মধ্যমে ১শ ৫৭টি লাশের পরিচয় সনাক্ত করা গিয়েছে।
সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরভেজুর রহামান (জুম্মন) বলেন, সাভার উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রানা প্লাজা ধসের শ্রমিকদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে। সাভার সহাকারী কমিশনা (ভূমি) আব্দুল্লাহ্ আল মাহফুজ ফুলের শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে দিবসটি উপলক্ষে জনসমাগম এড়াতে সকল জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের সাথে আমাদের আলোচনা হয়েছিল।