দেশজুড়ে

রায়হান হত্যার এক বছরেও শুরু হয়নি বিচার

  প্রতিনিধি ১১ অক্টোবর ২০২১ , ৬:৩৩:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

সিলেটে পুলিশি নির্যাতনে রায়হান হত্যাকাণ্ডের এক বছর পূর্ণ হল আজ (১১ অক্টোবর)। গত বছরের ১০ অক্টোবর গভীর রাতে তাকে চুরির অভিযোগে ধরে নিয়ে সিলেটের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে টানা তিন ঘণ্টা নির্যাতন করা হয়। পরে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১১ অক্টোবর ভোরে তাকে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানেই চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

দিন পার হয়ে এ ঘটনার এখন এক বছর। নিহত রায়হানের মেয়ে আলফার বয়স এখন ১৫ মাস। মায়ের সঙ্গে বাবা হত্যার বিচার দাবিতে গতকাল রোববার সে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজির হয়েছিল।

নিহত রায়হানের পরিবারের পক্ষ থেকে মানববন্ধন করে হত্যাকারীদের ফাঁসি দাবি করা হয়। সেই সঙ্গে এ মামলার একমাত্র পলাতক আসামি কথিত সাংবাদিক আব্দুল্লাহ আল নোমানকে গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান রায়হানের মা সালমা বেগম।

চলতি বছরের ৫ মে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) আলোচিত এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) আদালতে জমা দেয়। ৩০ সেপ্টেম্বর আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করেন। তবে এ মামলায় প্রধান আসামি বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই (বরখাস্ত) আকবর হোসেন ভূঁইয়াসহ সব আসামি বর্তমানে কারাগারে থাকলেও নোমান পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। পিবিআইয়ের দেওয়া প্রতিবেদনে নোমানকে নির্যাতনের প্রমাণ লোপাটের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। নোমান সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা ও স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন।

অপরদিকে রায়হানের ওপর নির্যাতনের ঘটনায় কারাগারে থাকা আকবরসহ পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের।

তবে রায়হান হত্যার এক বছরে কেবল চার্জশিট গ্রহণ হওয়ায় মামলার দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন রায়হানের মা সালমা বেগম। তিনি বলেন, এক বছরে শুধু চার্জশিট গ্রহণ হয়েছে। তাহলে বিচার শেষ হবে কত বছরে এটা নিয়ে আমি সন্দিহান। আমি চাই দ্রুত বিচার করা হোক। আমি সব আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসি চাই। আসামি আকবরের পরিবারের পক্ষ থেকে বার বার সমঝোতার প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন সালমা বেগম।

অপরদিকে রায়হান হত্যা মামলার আইনজীবী ব্যারিস্টার এম এ ফজল চৌধুরী বলেন, যেদিন নোমানের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয় ওইদিন গণমাধ্যমের খবরে জানতে পারলাম নোমান বিদেশে অবস্থান করছে। সে নিজেই হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের দাবি থাকবে প্রশাসন ইন্টারপোলের মাধ্যমে তাকে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে উদ্যোগ নিলে তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে।

সিলেট মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. নিশারুল আরিফ বলেন, নোমান কোথায় আছে সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার অবস্থান শনাক্তে ইতোমধ্যে কাজ চলছে। সে যেখানেই থাকুক তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে আদালতের কিছু প্রক্রিয়া আছে। পলাতক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আসামিকে গ্রেফতার করা সম্ভব না হলে পুলিশ আদালতে প্রতিবেদন জমা দেবে। নোমানের অবস্থান শনাক্তের পর সে যে দেশে অবস্থান করছে সেখানে নোটিশ পাঠানো হবে। তখন ওই দেশের পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে।

আরও খবর

Sponsered content