দেশজুড়ে

রায়হান হত্যা: বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়ির সিসি টিভির হার্ডডিস্ক গায়েব !

  প্রতিনিধি ২২ অক্টোবর ২০২০ , ৪:০৭:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

বাপ্পা মৈত্র, সিলেট ব্যুরো:

সিলেট নগরের বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে নির্মম নির্যাতনে রায়হানের মৃত্যুর পর সারা দেশে তোলপাড় শুরু হলে পালিয়ে যান নির্যাতনের মূল হোতা নগরের বন্দর বাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়া। আকবরকে পালাতে সহযোগিতা করেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির টু-আইসি এসআই হাসান উদ্দিন ও স্থানীয় অনলাইন সংবাদকর্মী আব্দুল্লাহ আল নোমান। আর নোমানের সঙ্গে এসআই আকবরের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। আকবরকে খালাতো ভাই পরিচয় দিতেন নোমান।

বিভিন্ন হোটেল, হকার, যানবাহন, নিষিদ্ধ ব্যবসা থেকে এসআই আকবরের কালেকশন ম্যান ও সোর্স ছিলেন নোমান। তার ইশারাতেই এসআই আকবর বিভিন্ন লোকজনকে ধরে এনে ফাঁড়িতে নির্যাতন করে টাকা আদায় করতেন। এসআই আকবর ও এসআই হাসানের সঙ্গে নোমানের প্রায়ই আড্ডা হতো। ফাঁড়িতে ভিতরে নির্যাতনের ঘটনার প্রমাণ মুছতে এসআই আকবরসহ তিনজনে মিলে গায়েব করেন সিটি ক্যামেরার ফুটেজ।

অপর দু’জন হলেন, ফাঁড়ির টুআইসি এসআই হাসান উদ্দিন ও স্থানীয় সংবাদকর্মী আব্দুল্লাহ আল নোমান। এসআই আকবরের পালিয়ে যাওয়াসহ সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক গায়েবে সহায়তা করেন হাসান ও নোমান। তার বাড়ি সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বুরিডহর গ্রামে হলেও নগরের হাউজিং এস্টেটে ভাড়া থাকতেন।

তার বাবা মো. ইছরাইল আলী কোম্পানীগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্রীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক। তার মা মোছা. বিলকিস আক্তার উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর কোম্পানীগঞ্জের স্বাস্থ্য কর্মী বলেও জানা গেছে। এরই মধ্যে নোমানের সন্ধানে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু হয়েছে। তার পরিবারের লোকজনকেও বাড়িতে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।

এ ঘটনায় এসআই হাসান উদ্দিনকে বরখাস্থ করে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে। গতকাল বুধবার (২১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) আজবাহার আলী শেখ তাকে সাময়িক বরখাস্থ করে পুলিশ হেফাজতে নেয়ার নির্দেশ দেন। এ বিষয়টি নিশ্চিত করে এসএমপির উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) বিএম আশরাফ উল্লাহ তাহের বলেন, হাসান উদ্দিনকে কড়া পুলিশ প্রহরায় রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তাকে গ্রেপ্তার করা হবে কিনা, সেটি জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলাটির তদন্তভার পিবিআইয়ের কাছে। গ্রেপ্তারের বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। তারা চাইলেই এসএমপি তাদের কাছে হস্তান্তর করবে। গত ১১ অক্টোবর পুলিশি নির্যাতনে রায়হান নিহতের পর ১২ অক্টোবর পালিয়ে যায় প্রধান সন্দেহ ভাজন বন্দরবাজার ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর। তার পালিয়ে যাওয়া নিয়ে পরবর্তীতে আরও একটি তদন্ত কমিটি করে এসএমপি।

তদন্ত কমিটির একটি সূত্র জানায়, এসআই হাসান উদ্দিন ও স্থানীয় অনলাইনের এক সাংবাদিক মিলে ১১ অক্টোবর বন্দরবাজার ফাঁড়ির সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক পরিবর্তন করে নতুন হার্ডডিস্ক সংযোজন করে। স্থানীয় সেই সাংবাদিক গ্যালারিয়া শপিং সিটির ফ্রেন্ডস কম্পিউটার নামের এক দোকান থেকে ১২’শ টাকায় ৫০০ গিগাবাইটের একটি হার্ডডিস্ক ক্রয় করে, যার ইনভয়েস নম্বর ২৪৬০২। সেই মার্কেটের সিসি টিভির ফুটেজও সংগ্রহ করে তদন্ত কমিটি। এরপর সেই সাংবাদিক কম্পিউটারের দোকান থেকেই একজনকে নিয়ে যান সেই হার্ডডিস্ক পরিবর্তনের জন্য। তদন্ত কমিটির মতে, এসআই হাসান উদ্দিন ওই কাজে সহায়তা করেছেন।

এর পাশাপাশি এসআই হাসান উদ্দিন ঘটনার দিন সেই সাংবাদিকের সঙ্গে ৪০ বার এবং এর আগের দিন ১৯ বার কথা বলেছেন। এছাড়া হাসান উদ্দিনের বিরুদ্ধে এসআই আকবরকে পালানোর সহায়তার অভিযোগও পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির সূত্রমতে, ১২ অক্টোবর বিকাল ৩টায় আকবরসহ ৪ জনকে বরখাস্ত করা হয়। বিকাল ৩টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত সে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে ছিল। সেখান থেকেই আকবর পালিয়ে যায়। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি তিনি জানাননি।

আরও খবর

Sponsered content