দেশজুড়ে

শাজাহানপুরে ধ্বংসের মুখে পোল্ট্রি শিল্প

  প্রতিনিধি ৫ এপ্রিল ২০২০ , ৬:৩২:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

আরিফুর রহমান মিঠু, শাজাহানপুর (বগুড়া) : বগুড়া শাজাহানপুর উপজেলায় সব ধরনের মুরগির ডিমের দাম কমেছে। আর ডিমের চেয়ে কমেছে মুরগির ১দিনের বাচ্চার দাম। করোনার প্রভাবে প্রায় সব ধরনের রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকায় এবং গুজবে মানুষ ডিম কেনা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। ডিম এবং বাচ্চার দাম কমে যাওয়ায় উপজেলার প্রায় শতাধিক খামারীরা মূলধন হারিয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। উপজেলার বেশির ভাগ ডিম হ্যাচিং(মেশিনে বাচ্চা উৎপাদন) করা হয় বগুড়া শেরপুর এবং ধুনট উপজেলার মেশিন গুলোতে। একই অবস্থায় আছে মাংসের জন্য তৈরী করা সোনালী, পাকিস্থানী, ব্রয়লার সহ অন্যান্য জাতের মুরগি খামারীরা। পোল্ট্রি শিল্প রক্ষায় সরকারকে দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহনের দাবী জানিয়েছেন খামারীরা।
উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, খামারের লেয়ার এবং ব্রয়লার ডিম খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৬টাকা পিছ। দেশী, সোনালী সহ বিভিন্ন জাতের ডিম ৫টাকা প্রতিটি এবং হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৭থেকে ৮টাকায়। মাত্র এক সপ্তাহ আগে দেশী মুরগি এবং হাঁসের ডিম ছিলো ১০টাকা পিছ। আর লেয়ার এবং অন্যান্য ডিম ছিলো ৮টাকা প্রতিটি। 
একামাস আগেও টার্কির প্রতি জোড়া এক দিনের বাচ্চার দাম ছিলো ১৭০টাকার উপরে। বর্তমানে প্রতি জোড়া বাচ্চা ৬০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি জোড়া সোনালীর বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৮থেকে ১০টাকায়। আর দেশী মুরগির বাচ্চা জোড়া বিক্রি হচ্ছে ২৫থেকে ৩০টাকায়।
উপজেলার কুন্দইশ গ্রামের টার্কি খামারী মোকছেদুর রহমান মানিক, কাটাবাড়িয়া গ্রামের লিমু রহমান সহ অনেকে জানান, টার্কি খাবারের দাম কমেনাই। তাদের ডিম বগুড়া ধুনট উপজেলার শাকদহ গ্রামের হ্যাচারী থেকে ফুটিয়ে সেখানেই বিক্রি করে থাকেন। করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের কোন স্থান থেকে কেউ বাচ্চা কিনতে আসছেনা। প্রতিটি ডিম উৎপাদনে খড়চ হয় অন্তত ২০টাকা। ফুটানোর জন্য দিতে হয় প্রতিটির জন্য ৪টাকা। মেশিনে ১শত ডিম দিলে বাচ্চা ফোটে ৫০টি আর অন্য ডিম নস্ট হয়ে যায়। প্রতিটি বাচ্চার জন্য খামারীদের খড়চ হয় ৫০টাকা  কিন্তু বাচ্চার দাম কমেগেছে। বর্তমানে প্রতি জোড়া টার্কির বাচ্চা বিক্রি করতে হচ্ছে ৬০টাকায়। 
উপজেলার চোপিনগর গ্রামের দেশী এবং সোনালী মুরগির ডিম তৈরী করা খামারী মহিমা খাতুন জানান, বর্তমানে প্রতি জোড়া সোনালী বাচ্চা বিক্রি করতে হচ্ছে  ৮থেকে ১০টাকায়। খাদ্যের দাম কমেনাই কিন্তু বিক্রির সময় বাচ্চার দাম পাচ্ছেন না। প্রতিদিন লোকসান গুনতে হচ্ছে। সরকার কোন পদক্ষেপও নিচ্ছেনা। কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।
বিবøক বাজারের ডিম ব্যবসায়ীরা জানান, বাচ্চার দাম কম হওয়ায় স্থানীয় বড় কম্পানি গুলোর কয়েক লক্ষ মুরগির ডিম বাজারে দিচ্ছেন। তাই ডিমের বাজার নেমেছে।
বৃকুস্টিয়া গ্রামের সোনালী মুরগির খামারী মাকসুদুর রহমান শাকিল জানান, তিনি ৭হাজার হাইব্রিড সোনালী জাতের মুরগি তুলেছেন। বিক্রির উপযুক্ত হলেও বিক্রি করতে পারছেন না। প্রতিদিন খাবার ঠিকই দিতে হচ্ছে। মুরগির দাম কম হলেও খাবারের দাম কমছেনা। মূলধন থেকে তার  কমপক্ষে সারে ৩লক্ষ টাকা নাই হয়ে গেছে। সরকারের উচিৎ পোল্ট্রি শিল্পের দিকে নজর দেয়া।
বগুড়া ধুনট উপজেলার শাকদহ গ্রামের হ্যচারী মালিক রাজু জানান, প্রতিটি ডিম ফোটানোর জন্য ৪টাকা করে রাখেন। তার হ্যচারীর সামনে বগুড়া জেলার সবচেয়ে বড় বাজার বসে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে পাইকররা আসে বাচ্চা কিনতে। করোনা ভাইরাসের কারণে পাইকাররা আসছেনা তাই বাচ্চার বাজার নাই বললেই চলে। খামারীরা ব্যপক লোকসানের মুখে আছে। প্রতিজোড়া টার্কি বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৬০টাকায়। যা একমাস আগেও ছিলো ১৭০থেকে ১৮০টাকা। দেশী মুরগির বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২৫থেকে ৩০টাকায়। একমাস আগে ছিলো ৫০থেকে ৬০টাকা জোড়া। সোনালী বাচ্চা কেউ কিনতে চাচ্ছেনা।  ৮থেকে ১০টাকা জোড়া কিনছে কেউ কেউ। পোল্ট্রি শিল্প রক্ষায় সরকারের পদক্ষেপ জরুরী বলে তিনি জানিয়েছেন।

আরও খবর

Sponsered content