বাংলাদেশ

শান্তির প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জানবে, প্রত্যাশা প্রধানমন্ত্রীর

  প্রতিনিধি ১২ ডিসেম্বর ২০২১ , ৫:১৯:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার সঙ্গে দেশের সেবা করা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে নবীন সেনা কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সক্ষমতা অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতার পররাষ্ট্র নীতি হিসাবে আমরা ‘শান্তিতে বিশ্বাস করি, এবং সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এই পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করি। তবে কখনও বাইরে থেকে শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হলে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার সক্ষমতা আমরা ইতিমধ্যেই অর্জন করেছি।

তিনি বলেন, দেশে-বিদেশে দায়িত্ব পালনে দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব দেখিয়ে আমাদের সেনাবাহিনী সব মহলের প্রশংসা অর্জন করেছে। এই সুনাম ধরে রাখতে হবে, আরও এগিয়ে নিতে হবে। বিশ্বের যেকোনও প্রান্তের মানুষ, শান্তি আর সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে জানবে— এটিই আমার প্রত্যাশা।

আজ রবিবার (১২ডিসেম্বর) সকালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৮১তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্স সমাপনী রাষ্ট্রপতি প্যারেডে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমী (বিএমএ) এর মূল আয়োজনে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী পাসিং আউট ক্যাডেটদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ উপভোগ করেন। কুচকাওয়াজ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রীয় সালাম জানানো হয়।

প্রধানমন্ত্রী নবীন সেনা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, তোমাদের মনে রাখতে হবে, তোমরা এদেশের সন্তান, জনগণের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই তোমাদের সবাইকেই সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ ও হাসি-কান্নার সমান অংশীদার হতে হবে। যেকোনও দুর্যোগ ও দুঃসময়ে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। মনে রাখবে, অনেক রক্ত আর ত্যাগ-তিতীক্ষার বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের এই স্বাধীনতা। কষ্টার্জিত এই স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করা তোমাদের পবিত্র দায়িত্ব।

নবীন অফিসারদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, আজকের এই শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে তোমাদের উপর ন্যস্ত হলো দেশমাতৃকার মহান স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পবিত্র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে তোমাদের সজাগ ও সদা প্রস্তুত থাকতে হবে। সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে হলেও দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করাই হবে তোমাদের পেশাগত জীবনের প্রধান ব্রত।

তিনি আরও বলেন, সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন একটি আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। বিএমএতে প্রশিক্ষণের অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ নির্মাণ করা হয়েছে। একটি প্রশিক্ষিত ও আধুনিক সেনাবাহিনী গঠনে এই আধুনিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা যুগান্তকারী ভূমিকা পালন করবে বলে তিনি  আশা প্রকাশ করেন।

সরকারপ্রধান বলেন, উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান ও সুযোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতে জাতির পিতা যে মিলিটারি একাডেমির স্বপ্ন দেখেছিলেন, তারই সফল বাস্তবায়িত রূপ আজকের এই বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৪ সালেই প্রণয়ন করেন আমাদের ‘প্রতিরক্ষা নীতি’। আওয়ামী লীগ সরকার জাতির পিতা প্রণীত সুদূর প্রসারী প্রতিরক্ষা নীতির আলোকেই সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’প্রণয়ন করেছে।

তিনি বলেন, ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীতে তিনটি নতুন পদাতিক ডিভিশন ও প্রথম প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হয়েছে অত্যাধুনিক সাঁজোয়া যান এবং গোলন্দাজ কোরে মাঝারি ও দূরপাল্লার এমএলআরএস রেজিমেন্ট। আকাশ বিধ্বংসী স্বয়ংক্রিয় সোরাড, ভিসোরাড ও সর্বাধুনিক অরলিকন মিসাইল রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আকাশ প্রতিরক্ষায় সূচিত হয়েছে যুগান্তকারী পরিবর্তন। অত্যাধুনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও সিগন্যাল সরঞ্জামাদি ছাড়াও বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র, হেলিকপ্টার, বিমান, মডার্ন ইনফ্যান্ট্রি গেজেট এবং আরও নানাবিধ অস্ত্র-সরঞ্জামাদি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সংযুক্ত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এসব অস্ত্র-সরঞ্জামাদির জন্য প্রয়োজনীয় ভৌত অবকাঠামো সম্প্রসারণ ও বিপুল সংখ্যক নতুন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও আরও নানাবিধ অস্ত্র-সরঞ্জামাদি ও ভৌত কাঠামোর সংযোজন ও সম্প্রসারণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।  তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীর অংশীদারিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সেনাবাহিনীতে ২০০০ সালে সর্বপ্রথম দীর্ঘমেয়াদী কোর্সে মহিলা অফিসার নিয়োগ এবং ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম মহিলা সৈনিক ভর্তির যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

তিনি পাসিং আউট ক্যাডেটদের উদ্দেশে আরও বলেন, আজকের দিনটি তোমাদের জীবনে অত্যন্ত আনন্দের ও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির জন্য আজ একটি স্মরণীয় দিন। তিন বছর মেয়াদী কঠোর প্রশিক্ষণ সমাপনান্তে আজ ৮১তম বিএমএ দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে বাংলাদেশসহ বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ফিলিস্তিন ও শ্রীলঙ্কার প্রশিক্ষণার্থীরা ‘লেফটেন্যান্ট’ হিসেবে কমিশন লাভ করতে যাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ তোমাদের সুসজ্জিত, সুশৃঙ্খল ও আকর্ষণীয় কুচকাওয়াজ দেখে আমি অত্যন্ত মুগ্ধ হয়েছি। এজন্য তোমাদের সবাইকে জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। নবীন নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা ও আজকের প্যারেডকে সামগ্রিকভাবে সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য একাডেমির কমান্ড্যান্ট, সংশ্লিষ্ট সকল অফিসাদের ধন্যবাদ জানাই।

প্রশিক্ষণে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফল ও সাফল্যের জন্য পদকপ্রাপ্ত ক্যাডেটদেরকেও তিনি অভিনন্দিত করেন এবং কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারদের গর্বিত মাতা-পিতা ও অভিভাবকদের অভিনন্দন জানান।

সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে কৃতি ক্যাডেটদের কৃতিত্বের জন্য পুরস্কৃত করেন।

সব বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ব্যাটালিয়ন সিনিয়র আন্ডার অফিসার আব্দুল্লাহ আল ইসলাম ‘সোর্ড অব অনার’ এবং কোম্পানি জুনিয়র আন্ডার অফিসার ইমরুল কায়েস সামরিক বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্বের জন্য ‘সেনাবাহিনী প্রধান স্বর্ণ পদক’  লাভ করেন।

সেনাপ্রধান অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।

আরও খবর

Sponsered content