প্রতিনিধি ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৪:৩৪:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক। ২০২৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিযুক্ত হন এবং ৬ সেপ্টেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল ১৯৭৮ সালের ১ নভেম্বর চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি চট্টগ্রামের কলাউজান ডা. এয়াকুব বজলুর রহমান সিকদার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে এসএসসি ও চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগ থেকে ২০০১ সালে স্নাতক (সম্মান) (প্রথম শ্রেণিতে দ্বিতীয়) ও ২০০২ সালে স্নাতকোত্তর (প্রথম শ্রেণিতে প্রথম) ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
দেশীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে তার অর্ধশতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। একাধিক জার্নালের রিভিউয়ার হিসেবেও তিনি অবদান রেখেছেন।
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেয়ার ভাবনা ও প্রত্যাশা নিয়ে ভোরের দর্পণের সাথে কথা বলেছেন সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ভোরের দর্পণের নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আজহারুল হক মিজান।
ভোরের দর্পণ : নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেছেন এক সপ্তাহ হলো। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কেমন দেখছেন?
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল : নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বেশ সুন্দর ও ইয়াং বিশ্ববিদ্যালয়। আমি যোগদানের সাথে সাথে ৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু করেছি এবং ১০ সেপ্টেম্বর থেকে পরীক্ষাও শুরু হয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী সহ সবাই আন্তরিক। অনেকগুলো সীমাবদ্ধতার মাঝেও রয়েছে বিপুল সম্ভাবনা। সকল সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণায় এগিয়ে যাবে।
ভোরের দর্পণ : আগামী চার বছর পর বিশ্ববিদ্যালয়কে কোন অবস্থানে দেখতে চান? আপনার স্বপ্ন কী?
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল : আমরা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে আগামী চার বছর পর কিউএস ওয়ার্ল্ড কিয়ে ৫০০ এর মধ্যে দেখতে চাই। আমাদের ছাত্র শিক্ষক সবাই শিক্ষা ও গবেষণার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকবে। আইএসও সার্টিফাইড উন্নতমানের ল্যাব ও গবেষণার স্থাপন করা হবে। শিক্ষা ও গবেষণায় যেন বিশ্বমানের অবস্থান তৈরি হয় আমি সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে সবার অংশগ্রহণে সচেষ্ট থাকবো।
ভোরের দর্পণ : বিশ্ববিদ্যালয়ে শেণীকক্ষ সংকট রয়েছে। সংকট রয়েছে শিক্ষকেরও। এক্ষেত্রে আপনার পরিকল্পনা কী?
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল : অতিদ্রুত একাডেমিক ভবন তিনের কাজ শুরু করবো। শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের সাথে মিটিংয়ের শিডিউল নিয়েছি। কিছুটা সময় লাগলেও আশাকরি আমরা অতিদ্রুত শ্রেণীকক্ষ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবো। শিক্ষক সংকট নিরসনের জন্য অতিসত্বর বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের অনুমতি সাপেক্ষে মেধাবী ও গবেষণায় এগিয়ে থাকা যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিবো৷ ভালো মানের শিক্ষক নিয়োগের মাধ্যমে আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালো সার্ভিস পাবে।
ভোরের দর্পণ : ভর্তি কার্যক্রম, ফরম ফিলাপ, ফলাফলসহ এখনও অনেক বিষয় অ্যানালগ নিয়মে চলছে। এসব কার্যক্রম ডিজিটাইজড করার পরিকল্পনা আছে কী না?
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল : বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্বেও অ্যানালগ সিস্টেমে চলা আমাদের জন্য দুঃখজনক। আমি সাইবার সেন্টার ও আইটি সেক্টরে কথা বলেছি। এটা যেহেতু সময়সাপেক্ষ ব্যাপার তাই আমরা পরীক্ষামূলক কয়েকটি বিভাগে কোডিংসহ অনেকগুলো বিষয়ে ডিজিটালাইজেশন চালু করেছি। আশাকরি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতার মাধ্যমে আগামী এক বছরের মধ্যে আমরা সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশন চালু করতে পারবো।
ভোরের দর্পণ : নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মঞ্চে একটা ভালো অবস্থানে পৌঁছে দিতে কোন বিষয়গুলোর ওপর আপনি জোর দিচ্ছেন?
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল : বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিক মঞ্চে এগিয়ে নেওয়ার অন্যতম উপাদান শিক্ষা ও গবেষণা। গবেষণা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি করে। আমাদের যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক রয়েছেন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যথাযথ সহযোগিতায় শিক্ষার্থীরাও মেধায় ও যোগ্যতায় গবেষণা এগিয়ে নিতে পারবে। হায়ার ইমপ্যাক্ট জার্নালে গবেষণা প্রকাশের উদ্যোগ নিবো। আন্তর্জাতিক কোলাবোরেশান বৃদ্ধির মাধ্যমে গবেষণা ফান্ড তৈরি করে উচ্চতর ডিগ্রি এমফিল, পিএইচডিতে শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবো।
ভোরের দর্পণ : আপনি কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেকহোল্ডারদের (শিক্ষক, ছাত্র, কর্মকর্তা-কর্মচারী) মতামত ও প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় রাখবেন?
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল : বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেকহোল্ডার সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশ। শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে বড় অংশীজন। শিক্ষার্থীদের মতামতের জন্য ক্লাসরুম সবচেয়ে বড় স্থান। এছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ক্লাবে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশের মাধ্যমে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবো। ছাত্রদের প্রতিনিধিত্বের জন্য ছাত্র সংসদ, শিক্ষকদের ফোরাম ও কর্মকর্তা – কর্মচারীদের ফোরাম, বিভিন্ন অফিস, ডীন অফিস, একাডেমিক কাউন্সিল, রিজেন্ট বোর্ড সহ সবই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেকহোল্ডার। সকল ফোরামের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সচেষ্ট থাকবে।
ভোরের দর্পণ : যদি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উদ্দেশে আপনাকে একটা ছোট চিঠি লিখতে অনুরোধ করা হয়, কী লিখবেন?
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল : ছাত্রছাত্রীরা আমাদের সন্তানতূল্য। বর্তমান সময়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে শিক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। ক্লাসরুম এবং ক্লাসরুমের বাহিরে জ্ঞানার্জনে শিক্ষার্থীদের আরও জোর দিতে হবে। যার যেখানে সুযোগ হয় সেখানে শিক্ষা ও গবেষণায় আরও বেশি অংশগ্রহণে আন্তরিক হওয়া দরকার। ছাত্র-ছাত্রীদের যেকোনো বিষয়ে সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় সচেষ্ট আছে। শিক্ষা ও গবেষণায় ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে এই বিশ্ববিদ্যালয় অনেকদূর এগিয়ে যাবে।
ভোরের দর্পণ : ভোরের দর্পণের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল : ভোরের দর্পণকেও ধন্যবাদ।