দেশজুড়ে

শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অটোরিক্সা সিএনজি

  প্রতিনিধি ২৭ জুন ২০২১ , ৬:৪২:১২ প্রিন্ট সংস্করণ

এমদাদুল হক, শ্রীপুর(গাজীপুর):

কেন্দ্রীয় ঘোষিত লকডাউনে রাজধানী ঢাকাকে বিচিছন্ন করতে সরকারী যে উদ্যোগ তাতে তেমন সারা মেলেনি গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে। রাজধানী ঢাকার সাথে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক” সরব রয়েছে লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই। হাইওয়ে পুলিশ সহ প্রশাসনের নজরদারীর অভাবে ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সা সহ ক্ষুদ্র বাহনে করে অতিরিক্ত ভাড়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে সাধারণ মানুষ। গত ৪দিন মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করে এমন চিত্র দেখা গেছে।

রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ করতে উত্তরের জেলাগুলোর মানুষ রাজেন্দ্রপুর-কিশোরগঞ্জ সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক ব্যবহার করে থাকে। ময়মনসিংহ জেলা লকডাউনের আওতামুক্ত থাকায় গাজীপুরের প্রবেশ মুখে লকডাউনের প্রথম দিন শ্রীপুরের জৈনা বাজারে চেকপোষ্ট স্থাপন করা হয়েছিল। এর পরে আর চেকপোষ্টের দেখা মেলেনি। গনপরিবহন বন্ধ থাকায় এ সুযোগে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা অধিক ভাড়ায় চলাচল শুরু করে সাধারণ মানুষ। এছাড়াও ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, পিকআপ,পণ্যপরিবহনের ট্রাক সহ শ্রমিকবাহী বাসে করেও সাধারণ যাত্রীরা চলাচল করছে। মাঝে মধ্যে কিছু অটোরিক্সা আটক করলেও পরে বানিজ্য করে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।

পথচারীদের ভাষ্য মতে, লকডাউনে গণপরিবহন বন্ধ থাকার অজুহাত দেখিয়ে ক্ষুদ্র বাহনে ভাড়া বেড়েছে কয়েকগুন। অধিক ভাড়ায় সাধারণ যাত্রীদের চলতে হচ্ছে। এই মহাসড়কের ময়মনসিংহ সীমান্ত শুধু মাত্র জৈনা বাজার পুলিশ চেকপোষ্ট রয়েছে। সেখানে যাত্রীরা গাড়ী থেকে নেমে হেটে জৈনা বাজার অতিক্রম করে বিনাবাধায় মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত যানবাহন চলছে। পরে মাওনা চৌরাস্তা থেকে গাড়ী পাল্টিয়ে বিনাবাধায় গাজীপুর অতিক্রম করা যায়।

বেসরকারী একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, তিনি প্রতিদিন ঢাকা থেকে শ্রীপুরের একটি ব্যাংকের শাখায় এসে অফিস করেন। লকডাউনের পূর্বে গনপরিবহনে যাতায়াত করলেও এখন সড়কের বিভিন্ন স্থানে থেমে থেমে আসতে হচ্ছে। তার মতে, গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার সড়কে লকডাউনের কোন প্রভাব তিনি দেখেননি। হাজারো মানুষ চলাচল করছে,চলাচল এখনো সীমিত করা যায়নি।

গত শুক্রবার সকাল থেকেই হাজারো মানুষের ভীর। ছুটির দিন হওয়ায় বাড়ী যাওয়ার উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়েছেন তারা। তবে ছিল না গণপরিবহন। বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়ায় অনেকেই ক্ষুদ্র বাহনে করে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিয়েছেন।

ময়মনসিংহের ত্রিশাল থানার বৈলর গ্রামের হাফিজুল ইসলাম বলেন, গনপরিবহন বন্ধ করায় বিপাকে পড়েছেন তার মতো অনেকেই। এমন অপরিকল্পিত লকডাউনে আসলে শুধুই বেড়েছে ভোগান্তি। সবাই তো চলতেছে। শুধু অতিরিক্ত ভাড়া ও জায়গা জায়গা নেমে পরিবহন বদল করতে হচ্ছে।

গাজীপুর হারিকেন এলাকার গার্মেন্টস শ্রমিক আয়নাল হকের জানান,গাজীপুর থেকে মাওনা পর্যন্ত তারা দুইজন মোটরসাইকেলে এসেছেন, ভাড়া পড়েছে ৬শত টাকা। পরে মাওনা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত ব্যাটারীচালিত অটোরিক্সায় প্রতিজন ২শত টাকা করে রওয়ানা হয়েছেন। এভাবে দীর্ঘপথ পাড়ি দিলেও মহাসড়কে কোন চেকপোষ্ট পাননি তারা।

শুক্রবার সকালে ঢাকার সায়দাবাদ থেকে শুকনা মরিচ ভর্তি বস্তা নিয়ে মাওনা এলাকায় ফেরি করছিলেন আসাদ মিয়া। তিনি বলেন, লকডাউনের প্রভাব তো কোথাও দেখলাম না। একটি পিকআপে করে তিনি মাত্র ১০০টাকার ভাড়ায় মাওনা পর্যন্ত আসলাম। ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা চালক নাজিমউদ্দিন আহমেদ বলেন, লকডাউনের পর থেকেই মহাসড়কে অন্যান্য গনপরিবহন বন্ধ হওয়ার পর অটোরিক্সা আয় বেড়েছে। সে সুযোগে তার মতো অনেকেই মহাসড়কে ক্ষুদ্র যান নিয়ে নেমেছে। অটোরিক্সা চালাতে মাঝে মধ্যে পুলিশের কবলে পড়তে হয়। কিছু টাকা পয়সা দিলে আর ঝামেলা করে না।

মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, সরকারী নির্দেশনা মতো আমরা চেষ্টা করছি মহাসড়কে যাত্রীবাহী যান চলা বন্ধ রাখতে। এর পরও আমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু ক্ষুদ্র ব্যাটারী চালিত যান চলছে। আমরা এসব যানবাহন ধরে মামলা নিয়মিত মামলা দিচ্ছি। তবে এসব নিয়ে হাইওয়ে পুলিশ বানিজ্য করে এমন অভিযোগ সঠিক নয়।

হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার(এসপি) আলী আহমদ বলেন,লকডাউন চলাকালে যাত্রী বাহী গাড়ী চলার কোন সুযোগ নেই। আমরা কঠোর নির্দেশনা দিচ্ছি যেভাবেই হোক অটোরিক্সাসহ যাত্রীবাহী অন্যান্য ক্ষুদ্র পরিবহন বন্ধ করার। এর পরও যারা সরকারী আদেশ অমান্য করে মহাসড়কে উঠবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও খবর

Sponsered content