প্রতিনিধি ২৭ এপ্রিল ২০২০ , ৫:১৩:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ
এমদাদুল হক, শ্রীপুর (গাজীপুর) : গাজীপুরের শ্রীপুরে চাঞ্চল্যকর চার হত্যাকান্ডে জড়িত এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গ্রেপ্তারকৃত পারভেজ (২০) আবদার এলাকার গ্রামের কাজিম উদ্দিনের ছেলে। রোববার দিবাগত রাতে উপজেলার আবদার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গাজীপুর পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান জানান, পারভেজকে তার এলাকা থেকে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী তার বসতঘর থেকে রক্তমাখা কাপড়, মাটির নিচ থেকে মোবাইল ফোন, পায়জামার পকেট থেকে তিনটি গলার চেইন, কানের দুল ও লুট করা স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। পারভেজ জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছে। সংবাদ সম্মেলন করে চাঞ্চল্যকর বিস্তারিত তথ্য জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, ২৩ এপ্রিল গত বৃহস্পতিবার বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার এলাকার একটি বাড়ি থেকে মা স্মৃতি ফাতেমা, দুই মেয়ে ও এক ছেলের জবাই করা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ২২ এপ্রিল বুধবার দিবাগত রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা চারজনকে গলা কেটে হত্যা করে। নিহতরা হলেন আবদার এলাকার প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক স্মৃতি আক্তার ফাতেমা (৪৫), তার বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬), ছোট মেয়ে হাওয়ারিন (১২) ও প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিল (৮)।
২৪ এপ্রিল শুক্রবার নিহত স্মৃতি ফাতেমার শ্বশুর আবুল হোসেন বাদী হয়ে শ্রীপুর থানায় অজ্ঞাতনামাদের অভিযুক্ত করে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার পর পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর বিভিন্ন টীম একযোগে কাজ করছিল।
নিহতদের জীবিকা শুরু হয়েছিল যেভাবে: ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার পাগলা থানার লয়গাইর ইউনিয়নের গোলাবাড়ী গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে রেজোয়ান হোসেন কাজল কিশোর বয়স থেকেই কর্মসুত্রে দেশের বাইরে অবস্থান করছিলেন। গত প্রায় ২০ বছর আগে কাজল ইন্দোনেশিয়া ছিলেন। সে সময় ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক স্মৃতি ফাতেমাকে বিয়ে করেন। পরে দেশে ফিরে ছোট ভাই জাহিদ হোসেন আরিফের সাথে একত্রে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার আবদার গ্রামে সাড়ে ৫ শতক জমি ক্রয় করেন। ওই জমির এক অংশে তিনি দ্বিতল বাড়ি নির্মাণ করেন। অপর অংশে ভাই আরিফ আধাপাকা বাড়ি নির্মাণ করে পাশাপাশি বসবাস করেন। কাজল সংসার জীবনে দুই কন্যা ও এক পুত্র সন্তান লাভ করেন। পরে তিনি কর্মসুত্রে মালয়েশিয়া চলে যান এবং বর্তমানেও তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। তার বাসার নিয়মিত বাজার করা ও অন্যান্য সাধারণ কাজকর্ম তার ছোট ভাই জাহিদ হোসেন আরিফ নিজে অথবা অন্য লোকজনকে দিয়ে করাতেন।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ঘটনার আগের দিন ২২ এপ্রিল বুধবার নিহত স্মৃতি ফাতেমা তার দেবরকে জাহিদ হাসান আরিফকে বৃহষ্পতিবার সকালে বাজার করে দেয়ার কথা বলেন। বৃহষ্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বাসায় বাজার নিয়ে গিয়ে ডাকাডাকি করে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে দেবর আরিফ ফিরে আসেন। পরে একইদিন দুপুর তিনটার দিকে দেবর জাহিদ হাসান আরিফ ডাকাডাকি করলেও সাড়া মেলেনি। পরে সাড়া না পেয়ে আরিফ তার ছেলে নাবিল(১০)কে তার টিনশেড ঘরের চালের ওপর দিয়ে ভেতরে যেতে বললে জানালা দিয়ে বাড়ির লোকদের রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পায়। পরে বাড়ির নিচতলার পেছনের দরজা খোলা পেয়ে বাড়ির দোতলার ঘরে গিয়ে ভাবী স্মৃতি ফাতেমাসহ তার সান্তানদের গলা কেটে হত্যার আলামত দেখতে পান। এসময় ঘরের লাগেজ এবং কিছু আসবাব এলোমেলো ছিল। আরিফ এ ঘটনা তাৎক্ষণিক স্থানীয় ইউপি সদস্য ও আশপাশের লোকজনকে অবহিত করেন। ইউপি সদস্য তারেক হাসান বাচ্চু হত্যার ঘটনাটি শ্রীপুর থানা পুলিশকে অবহিত করেন।
গ্রেপ্তারকৃত পারভেজের সংক্ষিপ্ত পরিচয়: শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী জানান, চার হত্যাকান্ডই পারভেজের অঘটন নয়। পারভেজের নামে শ্রীপুর থানায় হত্যা ও ধর্ষন মামলা ছিল। মামলাটি বর্তমানে আদালতে রয়েছে।
আবদার এলাকার হাসান ওরফে ফালান জানান, ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রæয়ারী তার কন্যা নীলিমা (৭)কে ধর্ষন ও পরে মাথায় আঘাত এবং শ্বাসরোধে হত্যা করে ওই পারভেজ। এ ঘটনায় পারভেজের বিরুদ্ধে থানায় মামলা ও পরে আদালতে চার্জশীট দেয়া হয়। পরে বয়স বিবেচনায় উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত হয় পারভেজ।
নীলিমার বাবা হাসান ওরফে ফালান আরও জানান, জামিনে মুক্তির পর পারভেজ তার পরিবারের লোকদের নিয়ে কন্যা নীলিমা হত্যা মামলা প্রত্যাহারের জন্য এলাকাছাড়াসহ নানা ধরনের চাপ ও হুমকি দিতে থাকে। এ বিষয়ে ২০১৮ সালে ২৮ আগস্ট নিরাপত্তা চেয়ে পারভেজসহ তার বাবা মা ও স্বজনদের অভিযুক্ত করে শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা জহিরুল ইসলাম জানান, পারভেজ এলাকার একজন চিহ্নিত বখাটে। মাদকসেবন ও বেচাকেনার সাথেও সে জড়িত ছিল। ফলে এলাকার সাধঅরণ মানুষ তাকে অনেকটা এড়িয়ে চলত।
গাজীপুর জেলা পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান বলেন, পারভেজ অবশ্যই তার সহযোগীদের নিয়ে এ হত্যাকান্ডটি ঘটিয়েছে। মাসহ চার হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিভিন্ন এঙ্গেলে তদন্ত করে পারভেজের চারিত্রিক নারা ধরনের অপকর্ম বেরিয়ে আসে। সে সব সুত্র ধরে এগিয়ে যেতেই রোববার রাতেই তার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হয় পারভেজ। সে জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকান্ডের দায়িত্ব স্বীকার করে।