প্রতিনিধি ১৫ জুন ২০২৫ , ৩:২৯:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ
জামালপুরের সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম হত্যার দুই বছর আজ। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে ২০২৩ সালের ১৪ জুন রাতে বকশীগঞ্জের পাটহাটি মোড়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন সাহসী সাংবাদিক নাদিম। আহত অবস্থায় ১৫ জুন ময়মনসিংহ মেডিকেলে মারা যান তিনি। পরে ১৬ জুন বকশীগঞ্জের গুমেরচর গ্রামের বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় নাদিমকে। ১৭ জুন নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম সেই সময়ের সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদুল আলম বাবুসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
সাংবাদিক নাদিম হত্যার দুই বছর পার হতে চললেও এখনো শোক কাটেনি নিহতের স্বজনদের। ঘটনার শুরুর দিকে অনেকে খোঁজ নিলেও এখন এই পরিবারের খবর রাখে না কেউ।
নিহত নাদিমের মেয়ে রাব্বিলাতুল জান্নাত বলেন-‘প্রতিটি মুহুর্ত আমার বাবার কথা মনে হয়। বাবাকে ছাড়া আসলে বেচে থাকাটাই অনেক কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমাদের পরিবারের চলা অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমার মা একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার স্বল্প আয়ে সংসার চলে না। বাবা মারা যাওয়ার পরে অনেকে অনেক আশ্বাস দিয়েছে। এখন কেউ আর খোঁজ নেই না।’
নিহত নাদিমের বৃদ্ধা মা আলিয়া বেগম ছেলেও স্মৃতি মনে করে কান্নাজড়িত কন্ঠে প্রতিবেদককে বলেন-‘একদিন আমার ছেলে আমার কাছে একটি লুঙ্গি চাইছিলো। আমি বাজার থেকে ৮০০ টাকা দিয়ে লুঙ্গি কিনে দিছিলাম। এরপর বাবা আমাকে বলছিলো যে- প্রতি বছর আমি যেনো তাকে একটা করে লুঙ্গি কিনে দেয়। কিন্তু আজ ২ বছর হলো বাবা আমার লুঙ্গি চাই না।’
আলেয়া বেগম আরো বলেন-‘আমাদের সংসার দুইটা। বুড়া-বুড়ির এক সংসার আর নাদিমের স্ত্রী-সন্তানের এক সংসার। ছেলেটা মারা যাবার দুইটা সংসারেই খুব অভাব দেখা দিয়েছে। বেচে থাকতে যতটুকু দরকার ঠিক ততটুকু যোগার করে চলছি আর এখন শুধু মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি। ’
নাদিম হত্যার পর শুরুতে থানা পুলিশ, পরে জেলা গোয়েন্দা শাখা, সিআইডি ঘুরে মামলার তদন্ত এখন র্যাবের হাতে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাবুসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় সিআইডি। বাদ পড়ে বাবুর ছেলে রিফাতসহ ২৭ জন। নারাজির পর চলতি বছরের ফেব্রæয়ারি থেকে হত্যা মামলাটি তদন্ত করছে র্যাব।
তবে বাদী ও স্বজনদের অভিযোগ- চার্জশিটভুক্ত আসামী শাহজালাল ও শফিকুল গ্রেপ্তার হয়নি দুই বছরেও। এই মামলা যেন সাগর-রুনি হত্যা মামলার মতো আলোর মুখ না দেখে- এমন আশঙ্কা সাংবাদিক নেতাদের।
নিহত নাদিমের স্ত্রী ও মামলার বাদী মনিরা বেগম বলেন-‘দুইটি বছর হলো এখনো মামলা তদন্ত চলছে। সিআইডির তদন্তে যে নয়জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে দুইজন আজ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়নি। মামলাটি এখন র্যাবের কাছে আছে। আমার র্যাবের প্রতি আস্থা আছে। আশা করি র্যাব খুব কম সময়ের মধ্যেই সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবে।
সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার প্রথম স্বাক্ষী আল মুজাহিদ বাবু বলেন-‘ এই দুই চোখ দিয়ে যাদেরকে হত্যা করতে দেখলাম। তারা আজ জামিনে মুক্ত। একটি আসামীও জেলে নেই। আর মামলাটি চলছে ধীরগতিতে। এমন হতে থাকলে এই মামলাটি এক সময় আলোর মুখ দেখবে না বলে আমার আশঙ্কা।’
জামালপুর অনলাইন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন-‘বিচারের বানী নিভৃতে কাদে। আমরা আশঙ্কায় আছি এই মামলাটি যাতে সাংবাদিক দম্পত্তি সাগর-রুনি হত্যা মামলার মতো না হয়। প্রশাসনের কাছে আমাদের সাংবাদিক সমাজের আশা থাকবে- সাংবাদিক নাদিম হত্যা কারীদের বিচার যেনো খুব কম সময়ের মধ্যেই হয়। আমরা সাংবাদিকরা এখনো অনেক ধৈর্য্য ধরে আছি। আমাদের এই ধৈর্য্যরে বাধ যেনো না ভাঙ্গে।’
তদন্ত চলমান ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি র্যাব।