প্রতিনিধি ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ , ১২:২০:২৬ প্রিন্ট সংস্করণ
সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার জন্য অবশেষে পুলিশ গানম্যান পেতে যাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা (ইউএনও)। তাদের সরকারি বাসভবনের নিরাপত্তার জন্য ব্যাটালিয়ন আনসার দেয়া হবে। এ সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবকে চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রয়োজনে পৃথক একটি নিরাপত্তা ব্যাটালিয়ন গঠন করা যায় কি না, সেই বিষয়টিও ভেবে দেখতে বলা হয়েছে চিঠিতে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে সরকারি বাসভবনে সন্ত্রাসীদের হামলায় গুরুতর আহত হন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী। ওয়াহিদা খানমের মাথায় হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করা হয়। তাকে প্রথমে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে রংপুরে একটি ক্লিনিকে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখান থেকে ৩ সেপ্টেম্বর দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে অচেতন অবস্থায় ওয়াহিদা খানমকে ঢাকায় ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতেই তার মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। ধীরে ধীরে তার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। ওয়াহিদার ওপর হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছেন, চুরির উদ্দেশ্যে ইউএনওর বাড়িতে প্রবেশ করেছিলেন। তবে চুরির ঘটনা মানতে নারাজ বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনটির সভাপতি ও স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলা ‘চুরির ঘটনা’ নয় উল্লেখ করে বলেছেন, এটি পরিকল্পিত আক্রমণ। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে ইউএনওদের বাসভবনের নিরাপত্তায় সশস্ত্র আনসার সদস্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রথমে অঙ্গীভূত আনসার সদস্যদের দিয়ে সব উপজেলার ইউএনওদের প্রাথমিক নিরাপত্তা দিতে পাঠানো হয়। কিন্তু ইউএনওদের দাবি ছিল পুলিশ গানম্যানসহ ব্যাটালিয়ন আনসার। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে তাদের সেই দাবি পূরণ হচ্ছে। তবে পুলিশ গানম্যান ও ব্যাটালিয়ন আনসার নিয়োগের আগপর্যন্ত অঙ্গীভূত আনসারদের দিয়ে আপাতত ইউএনওদের নিরাপত্তা বিধানের কথাও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের চিঠিতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ সংক্রান্ত এক আলাদা চিঠিতে জনপ্রশাসন সচিবকে ইউএনওদের নিরাপত্তা বিধানকল্পে আনসার সদস্যদের প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান করতেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকের পর কমিটির সভাপতি ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘শুধু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) বাসভবন নয়, পুরো উপজেলা কমপ্লেক্সেই নিরাপত্তা দেয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা শুনেছেন, ইতোমধ্যে ইউএনওদের বাসভবনে আনসার মোতায়েন করেছি, যাতে তাদের রাত্রীকালীন নিরাপত্তা থাকে। আজ আমরা সংশোধন করে বলেছি, পুরো উপজেলা কমপ্লেক্সে নিরাপত্তা দিতে। কারণ, সেখানে আরও অফিসার থাকেন। সেখানে অনেক অফিসারই পরিবার নিয়ে বাস করেন-তাদেরও নিরাপত্তার প্রশ্ন রয়েছে।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা জানান, আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে মাঠ প্রশাসনের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে ইউএনওরা কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হবে বলে প্রায় অভিন্ন মত দেন বৈঠকে উপস্থিত সবাই। এরপরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয় কমিটির পক্ষ থেকে। বৈঠকের পর ওইদিনই সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।