বিনোদন

সালমান শাহ হত্যা মামলা: আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, খোঁজ মিলছে না ডন ও সামিরার

  প্রতিনিধি ২৬ অক্টোবর ২০২৫ , ২:০৭:৪৮ প্রিন্ট সংস্করণ

সালমান শাহ হত্যা মামলা: আসামিদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা, খোঁজ মিলছে না ডন ও সামিরার

চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর তার সাবেক স্ত্রী সামিরা হকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক এই নির্দেশ দেন এবং মামলাটি তদন্তের জন্য রমনা থানায় পাঠানো হয়।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম ফারুক জানিয়েছেন, আদালতের আদেশে মামলাটি রুজু করা হয়েছে এবং আসামিদের দেশত্যাগ রোধে তাদের নাম ও তথ্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, “১১ জন আসামির খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ হয়তো ইতোমধ্যে দেশ ত্যাগ করেছেন। দেশে থাকা আসামিদের শনাক্তে মোবাইল ট্র্যাকিংসহ প্রযুক্তিগত নজরদারি চলছে।” ওসি আরও জানান, তদন্তে কোনো প্রকার প্রভাব বা চাপ নেই, শিগগিরই আসামিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

আদালতের নির্দেশের পর থেকেই প্রধান আসামি সামিরা হক নিখোঁজ বলে জানা গেছে। গত চার দিন ধরে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে, যোগাযোগের সব মাধ্যম—ফোন, হোয়াটসঅ্যাপ—অচল। একইভাবে মামলার অপর আসামি চিত্রনায়ক ডন হককেও পাওয়া যাচ্ছে না। বহুবার ফোন ও বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি।

মামলার পটভূমি ও আসামিদের নাম

গত ২১ অক্টোবর মধ্যরাতে রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন সালমান শাহর মামা আলমগীর কুমকুম। এজাহারে আসামি করা হয়েছে সালমানের স্ত্রী সামিরা হক, ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুসি, চলচ্চিত্র অভিনেতা ডনসহ আরও কয়েকজনকে। মোট ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, পাশাপাশি অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজনকেও আসামি করা হয়েছে।

দীর্ঘ ২৯ বছরের অপেক্ষা ও নতুন মোড়

১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের বাসায় ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সালমান শাহর মরদেহ উদ্ধার হয়। প্রাথমিকভাবে এটি ‘আত্মহত্যা’ হিসেবে ধরা হলেও পরিবারের দাবি ছিল এটি পরিকল্পিত হত্যা। পিবিআই (পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তদন্তে আত্মহত্যার মত দিলেও সালমানের মা নীলা চৌধুরী সেই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেন এবং বারবার হত্যার তদন্ত দাবি করে আসেন। দীর্ঘ প্রায় তিন দশক পর আদালতের নতুন নির্দেশনায় মামলাটি আবার আলোচনায় এসেছে। সালমান শাহর ভক্ত ও চলচ্চিত্র অঙ্গনের মানুষ এ ঘটনাকে ‘ন্যায়বিচারের নতুন সূচনা’ হিসেবে দেখছেন।

সালমান শাহর শেষ দিন ও রহস্যঘেরা মৃত্যু

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, মৃত্যুর আগের দিন সালমান শাহ ব্যস্ত ছিলেন তার শেষ চলচ্চিত্র ‘প্রেম পিয়াসী’–র ডাবিং নিয়ে। সেই দিন এফডিসিতে উপস্থিত ছিলেন নায়িকা শাবনূরও। সালমানের বাবা ফোনে তাকে জানান, সামিরাকে নিয়ে সাউন্ড কমপ্লেক্সে আসতে। পরে সামিরা এসে দেখেন, সালমান ও শাবনূর খুনসুটিতে মগ্ন। এতে সামিরা ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন এবং ফ্লোর ত্যাগ করেন। সেই রাতে সালমান শাহর বাড়িতে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়। চলচ্চিত্র পরিচালক বাদল খন্দকার জানান, সেদিন রাতে সালমান কিছুটা মানসিক চাপে ছিলেন। পরে রাত ১১টার দিকে তাকে নিউ ইস্কাটনের ফ্ল্যাটে পৌঁছে দেন তিনি—এর পরদিনই আসে মৃত্যুর খবর।

ঢালিউডের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র

১৯৯০-এর দশকের শুরুতে মাত্র চার বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সালমান শাহ ঢালিউডে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছিলেন। তাঁর অকাল মৃত্যুতে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে সৃষ্টি হয় এক বিশাল শূন্যতা। প্রায় তিন দশক পরও তার নাম, সিনেমা ও রহস্যঘেরা মৃত্যু সমানভাবে আলোচনায় রয়েছে।

সাম্প্রতিক আদালতের নির্দেশে মামলার নতুন তদন্ত শুরু হওয়ায় সালমান শাহর ভক্ত ও পরিবার এখন আশাবাদী—অবশেষে হয়তো উন্মোচিত হবে প্রিয় তারকার মৃত্যুর রহস্য।

আরও খবর

Sponsered content