ভোরের দর্পণ অনলাইন:
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যায় তার বোনের করা নালিশি মামলাটির বিচার কাজ বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা চেয়ে রিভিশন মামলা করেছেন অন্যতম আসামি পুলিশের বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত আলী।
তার যুক্তি, এই ঘটনায় যেহেতু পুলিশ বাদী হয়ে আগেই একটি মামলা করেছে, তাই দ্বিতীয় মামলা চলতে পারে না।
কক্সবাজারের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, রোববার দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাঈল এই মামলাটি গ্রহণ করে চূড়ান্ত শুনানি ও আদেশের জন্য আগামী ২০ অক্টোবর দিন রেখেছেন।
লিয়াকত আলীর পক্ষে আদালতে আবেদনটি করেছেন তার আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন।
গত ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এ ঘটনায় গত ৫ জুলাই তার বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ নয় জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে প্রধান আসামি করা হয়।
আদালত প্রাঙ্গণে আসামিপক্ষের আইনজীবী মাসুদ সালাহ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, সিনহা হত্যার ঘটনায় বোনের দায়ের মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে। এ মামলার সমস্ত কার্যক্রম ‘বেআইনি ও অবৈধ’। সে কারণে আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট গত ৫ অগাস্ট যে আদেশটি দিয়েছেন সেটাকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।
“আদালতে দীর্ঘ শুনানির পর বিচারক মামলার কার্যক্রমে অবৈধতার যুক্তি পেয়েছেন। আবেদনটি আমলে নিয়ে রেকর্ডভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। এটা পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ শুনানি ও আদেশের জন্য রেখেছেন।”
রিভিশন আবেদনের পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে এই আইনজীবী বলেন, আসামি নন্দলাল রক্ষিত একই ঘটনায় গত ১ অগাস্ট টেকনাফ থানায় একটি মামলা করলেন। মামলাটি দায়ের করার চার দিন পর ৫ অগাস্ট শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস আদালতে সিআর মামলাটি দায়ের করলেন ‘সেইম অকারেন্সে’। একটি মামলার তদন্ত চলমান অবস্থায় আদালতে (নালিশী) মামলা হলে সেক্ষেত্রে আদালতকে ফৌজদারি কার্যবিধির ২০৫ ডি ধারা অনুসরণ করতে হবে, বলেন আইনজীবী মাসুদ।
“আইনে বলা আছে, ২০৫ ডি-তে পরিষ্কারভাবে- যখন একটি মামলার ইনভেস্টিগেশন চলমান অবস্থায় থাকবে, তখন যদি সিআর মামলা করে তাহলে টু জিরো ফাইভ ডি অনুসরণ করতে হবে। অর্থাৎ সিআর মামলাটি ফাইলিংয়ের দিন তিনি (বিচারিক হাকিম) স্টে ঘোষণা করবেন। স্টে ঘোষণার পর নন্দলাল রক্ষিতের যে মামলাটি চলমান রয়েছে সেটিকে কল ফর ইনভেস্টিগেশন করবেন। তারপর বিচার অগ্রসর করবেন সাব-সেকশন টু ও সাব-সেকশন থ্রিতে।”
অ্যডভোকেট মাসুদ সালাহ উদ্দিন বলেন, তবে বিচারক (বিচারিক হাকিম) স্টে না দিয়ে এফআইআর হিসেবে ট্রিট করার জন্য টেকনাফ থানার অফিসারকে আদেশ দিলেন; যা ‘সম্পূর্ণ বে-আইনি ও অবৈধ’।
আসামিপক্ষের এই আইনজীবী বলেন, “সেশন জজ আমাদের কথা মনযোগ দিয়ে শুনলেন এবং সমস্ত ঘটনা বলার পর উনি সন্তুষ্ট হলেন। উনি এরপর আবেদন এডমিট করলেন ও কল ফর রেকর্ড করলেন। আমাদের বিশ্বাস সম্পূর্ণ কার্যক্রমটাই আইন বহির্ভূত, অর্থাৎ আইনসঙ্গত নয়; তাই এই মামলা মোটামুটিভাবে স্থগিত ছাড়া বিকল্প কোনো আইন নাই।”
সিনহার মৃত্যুর পর ঘটনাটিকে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা বলে চালিয়ে দিতে চেয়েছিল পুলিশ। পুলিশের পক্ষে নন্দলাল রক্ষিতের মামলাও হয়েছিল তার ভিত্তিতে।
অন্যদিকে সিনহার বোন শারমিন সরাসরি হত্যার অভিযোগ এনে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন।
পুলিশের মামলায় বাহারছড়া ইউনিয়নের মারিশবুনিয়া এলাকার বাসিন্দা মো. নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজকে সাক্ষী করা হয়। মামলার তদন্তের নেমে র্যাব এই তিন সাক্ষীকে সিনহার বোনের মামলায় গ্রেপ্তার করে আসামি দেখায়।