ধর্ম

হিজরতের পর মহানবী (সা.) যে ৪টি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছিলেন

  প্রতিনিধি ৮ অক্টোবর ২০২৫ , ২:২১:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ

বিখ্যাত সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনু সালাম (রা.) বলেন, “যখন নবী মুহাম্মদ (সা.) প্রথমবার মদিনায় আগমন করেন, আমি তাকে দেখতে মানুষের সঙ্গে বেরিয়ে পড়ি। তাঁকে দেখেই বুঝে গেলাম—এই মুখ মিথ্যাবাদীর নয়। তাঁর মুখে আমি যে প্রথম কথা শুনি, তা হলো—
‘হে মানুষ! ক্ষুধার্তকে আহার দাও, সালাম প্রচার করো, আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখো এবং যখন অন্যরা ঘুমায়, তখন নামাজ পড়ো—এর মাধ্যমে তোমরা শান্তির সঙ্গে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’” (সহিহ বুখারি)

মদিনায় হিজরতের পর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর এই প্রথম বার্তাই ছিল শান্তি, মানবতা ও নৈতিক সমাজ গঠনের ভিত্তি। যে সমাজে তিনি প্রবেশ করেছিলেন, তা ছিল বিভেদ, সংঘাত ও বৈরিতায় পূর্ণ। সেখানে তিনি এনেছিলেন ভালোবাসা, সহযোগিতা ও ঐক্যের বার্তা। নবী করিম (সা.)-এর চরিত্রে ফুটে উঠত সত্যবাদিতা, বিনয় ও আন্তরিকতা—যা তাঁর কথাকে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছিল। তিনি সমাজে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছিলেন, যা আজও মানবতার দিশারি।

১. ক্ষুধার্তকে আহার দান : রাসুলুল্লাহ (সা.) শিখিয়েছেন, ক্ষুধার্তকে আহার করানো শুধু দান নয়, এটি মানবতার মৌলিক দায়িত্ব। সমাজে কেউ যেন অনাহারে না থাকে—এটিই তাঁর আহ্বান ছিল।
ব্যক্তিগত উদ্যোগে, সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে কিংবা পারস্পরিক সহযোগিতায় ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করা প্রত্যেকের কর্তব্য। কারণ, যতদিন ক্ষুধা থাকবে, ততদিন সমাজে প্রকৃত শান্তি আসবে না—এই বার্তাই তিনি মানুষকে দিয়েছেন।

২. সালাম ও শান্তির প্রচার: নবী (সা.)-এর দ্বিতীয় উপদেশ ছিল—সালাম ছড়িয়ে দাও।
‘আসসালামু আলাইকুম’ কেবল একটি সম্ভাষণ নয়; এটি একে-অপরের জন্য শান্তির দোয়া।
রাস্তায়, কর্মস্থলে বা সামাজিক পরিবেশে আন্তরিকভাবে সালাম বিনিময় মানুষে-মানুষে ভালোবাসা ও সহমর্মিতা বাড়ায়, বিদ্বেষ দূর করে। আল্লাহর একটি নাম ‘আস-সালাম’ (অর্থাৎ শান্তি), তাই সালাম প্রচার মানে আল্লাহর শান্তির বার্তা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেওয়া।

৩. আত্মীয়তার বন্ধন বজায় রাখা: পরিবার ও আত্মীয়তার সম্পর্ক সমাজের শান্তি ও স্থিতির অন্যতম ভিত্তি।
নবী (সা.) সতর্ক করেছেন—আত্মীয়তার বন্ধন দুর্বল হলে সমাজে দূরত্ব ও বিচ্ছিন্নতা বাড়ে।
তিনি নির্দেশ দিয়েছেন, দূরসম্পর্কের আত্মীয়দের সঙ্গেও যোগাযোগ বজায় রাখতে।
আজকের প্রযুক্তিনির্ভর যুগে এটি আরও সহজ—একটি ফোন কল বা বার্তাও আত্মীয়তার সম্পর্ককে দৃঢ় করতে পারে। এভাবে সম্পর্ক রক্ষা সমাজে শ্রদ্ধা, সহানুভূতি ও ভালোবাসা বৃদ্ধি করে।

৪. অন্যরা ঘুমালে নামাজ পড়া: নবী (সা.)-এর চতুর্থ পরামর্শ ছিল রাত্রিকালীন নামাজ বা তাহাজ্জুদ আদায়।
যখন পুরো দুনিয়া ঘুমিয়ে থাকে, তখন আল্লাহর সামনে একান্তে দাঁড়ানো মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং অন্তরে প্রশান্তি আনে। এই ইবাদতই মানুষকে সৎ পথে স্থির থাকতে ও সমাজে কল্যাণমূলক কাজে অনুপ্রাণিত করে।

মদিনায় নবী করিম (সা.) প্রথম আহ্বানের চিরন্তন শিক্ষা: মদিনায় নবী করিম (সা.)-এর প্রথম আহ্বান ছিল—ক্ষুধার্তকে আহার দান, সালাম প্রচার, আত্মীয়তা রক্ষা ও রাত্রিকালীন নামাজ আদায়। এই চারটি শিক্ষা আজও মানবতার জন্য এক অমূল্য দিকনির্দেশনা। আমরা যদি এগুলো জীবনে ধারণ করতে পারি, তবে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং পরকালে জান্নাতের পথও সুগম হবে।