প্রতিনিধি ১১ জুলাই ২০২৪ , ৪:৪০:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ
মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের একটা উপমা পেশ করা যাক! ১৯৬৩ সালে মালয়েশিয়ার অংশ হওয়ার জন্য সিঙ্গাপুর ফেডারেশন অফ মালয়-এ যোগদান করেছিল। জাতিগত উত্তেজনা এবং রাজনৈতিক মতানৈক্য সহ অসংখ্য সমস্যার কারণে সিঙ্গাপুরকে মালয়েশিয়া থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল ৯-ই আগস্ট ১৯৬৫ সালে। তারপর সিঙ্গাপুর একটি প্রজাতন্ত্র হিসাবে স্বাধীনতা লাভ করে। বিশ শতকের শেষের দিকে সিঙ্গাপুর বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হয়। সিঙ্গাপুর এশিয়ার সর্বোচ্চ এবং বিশ্বের সপ্তম মাথাপিছুর জিডিপি অর্জন করেছিল। অপর দিকে মালয়েশিয়া ৩১-ই আগস্ট ১৯৫৭ সালে স্বাধীনতা লাভ করে।
এই দুই দেশ মোটামুটি একই সাথে স্বাধীন ও গড়ে উঠার পরেও আজ পৃথিবীর মঞ্চে সিঙ্গাপুর একটা আইকন। মালেশিয়া উন্নত হয় নাই তা নয় তারাও ভালো করছে। তবে তা শতভাগ সিঙ্গাপুর থেকে পিছনে রয়েছে। তাদের মূল পয়েন্ট ছিল কোটা। সিঙ্গাপুর কোটা পদ্ধতিতে না গিয়ে শিক্ষা সেক্টরকে শক্ত ও মজবুত ভাবে গড়ে তুলেছে। তারা যগ্যে মেধাবীদের দেশের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় স্থান দিয়েছে। তাই তারা আজ এতো সমৃদ্ধ ভূখণ্ড। অপরদিকে মালয়েশিয়ার স্থানীয় কোটা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মালয়েশিয়া পিছিয়ে পড়ার কারণই কোটা। মালয়েশিয়া জতিগত কোটা চালু করছিল।
এই নীতি মালয়েশিয়ার বামিপুত্রা জনগোষ্ঠী ❝মালয় এবং আদিবাসী জনগোষ্ঠী❞ এর অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থার উন্নতির জন্য প্রণয়ন করা হয়েছিল। এটি ১৯৭১ সালে চালু হয়েছিল এবং এর উদ্দেশ্য ছিল জাতিগত ভারসাম্য বৃদ্ধি করা বিশেষ করে ব্যবসা এবং শিক্ষায়। সেই কোটার কিছু নেতিবাচক পরিণতি লক্ষ্য করা যাক। কোটার জন্য অন্যান্য জাতি বা গোষ্ঠীর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল। এই নীতির ফলে বহু চীনা ও ভারতীয় জনগোষ্ঠী অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়েছিল ক্ষমতার অপব্যবহার। অনেক সময় এই নীতির সুবিধার জন্য কিছু নির্দিষ্ট প্রভাবশালী ব্যক্তি শক্ত অবস্থান তৈরি করছিল। দূর্নীতি ও একচেটিয়া মালশিয়ানরা সুযোগ পেয়েছিল। যার ফলাফল সিঙ্গাপুরের মতো সমাজ ও দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করেছিল।
যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগের সমস্যা ছিল বটেই। কোটার কারণে কখনো কখনো যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি বা শিক্ষায় সুযোগ না পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে অহরহ। এই নীতির জন্য মালেশিয়ার ভবিষ্যৎ বিতর্কিত। বিরাট একটা বড় জনগোষ্ঠী বাধাগ্রস্ত হয়েছে বৈচিত্র্য সুযোগ সুবিধা থেকে। অনেকে মনে করেন যে, দেশটির উন্নয়নের জন্য আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক নীতি গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেখানে সকল জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সমান সুযোগ থাকবে। আমাদের দেশও সেই পথে হাঁটছে নাতো? প্রতিবেশী ভারত থেকে একটু ঘুরে আসি। খেয়াল করলে দেখবেন, তারা প্রশাসন সেক্টরে ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে কোনো কোটা রাখে নাই। একেবারে শূন্য শতাংশ। শুধু পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য ২২.৫ শতাংশ কোটা রেখেছে। তাও এটা বাড়ে ও কমে মাঝেমাঝে। তরাও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় মেধাবীদের সুযোগ দিয়েছে।
কিন্তু আমাদের দেশে সরকারি প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে ৫৬% কোটা। রেলওয়েতে ৪০% পৌষ্য কোটা, প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক নিয়োগে ৬০% কোটা, নারী কোটা এবং ২০% পৌষ্য কোটা। দেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ৫ লক্ষ কোটা দারীর জন্য ৬০% কোটা আর ১৭ কোটি ৯৫ লাখ মানুষের জন্য ৪০% জায়গা! তাহলে কেমনে কী! এই দেশে দূর্নীতি না বেড়ে কি বাড়বে? প্রতি সেক্টরে দূর্নীতি ও গাফিলতির কারণ এই কোটা। আমরা চাই কোটা সম্পর্কে বিশেষ নজর দিক সরকার। আমরা এমন বৈষম্য চাই না। এতে মেধাবীরা সুযোগ হারাচ্ছে এবং বিশাল একটা জনগোষ্ঠী হতাশায় ভুগছে। সুইসাইডের প্রবণতা বাড়ছে। মেধাবীরা দেশ ছাড়ছে। পরদেশে গিয়ে ভিন্ন দেশের উপকার করছে।
একটা জিনিস চিন্তা করুন! ১০০ টা বিসিএস আসনের জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য আছে ৪৪ টা, রেলওয়েতে আছে ৬০ টা আর প্রাইমারিতে শুধু মাত্র ২০ টা। যেগুলোর পেছনে লাখ লাখ শিক্ষার্থীরা প্রতিযোগিতা করছে। এই জন্য কী তাহলে মুক্তিযুদ্ধারা দেশ স্বাধীন করছিল? দেশে যুদ্ধ হয়েছিল মূলত বৈষম্যের কারণে। এখন তারচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
লেখক: ওমর ফারুক
ইংরেজি বিভাগ
সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম।