সিলেট

অরক্ষিত এমসি কলেজের সুযোগ নিয়েছে ধর্ষকরা: তদন্ত কমিটি ধর্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন

  প্রতিনিধি ২ অক্টোবর ২০২০ , ৭:১৮:৫৯ প্রিন্ট সংস্করণ

সিলেট ব্যুরো: সিলেটের ঐতিহ্যবাহী মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের ছাত্রাবাসে সংঘবদ্ধ গণধর্ষণের ঘটনায় জন্য ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি ও তদারকির অভাবকে দায়ী মনে করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। তদন্তে কোনো সুপারিশ না করে ঘটনা নিয়ে ১৫টির মতো পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে বলেও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে এক গৃহবধূকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের ঘটনায় গত সোমবার (২৮ সেপ্টেম্বর) তদন্ত কমিটি গঠন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এমসি কলেজ পরিদর্শন করে তিন কার্যদিবস পর বৃহস্পতিবার মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) মো. শাহেদুল খবীর চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রটি বলছে, বৃহস্পতিবার কমিটি প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পরে আরও বিস্তারিত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। কলেজের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট জনবলের ঘাটতির বিষয়টিও তদন্ত কমিটির কাছে ধরা পরেছে। ১৪৪ একর এলাকা নিয়ে বিশাল ক্যাম্পাসের কোনো সীমানা প্রাচীর নেই। গাছগাছালি ও টিলা ঘেরা ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা না থাকার বিষয়টিও নজরে এসেছে তদন্ত কমিটির। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে সেখানে ভবন নির্মাণাধীন থাকায় শ্রমিকদের অবাধ আনাগোনা থাকায় লোকজনের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি বলেও তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রটি মনে করে। এছাড়া ছাত্রাবাস এলাকায় কলেজের অনেক কর্মচারী সপরিবার থাকেন। সূত্রটি আরও জানায়, কমিটি সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করেনি। তবে বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে। মহামারি পরিস্থিতিতে নজরদারির ঘাটতি ছিল। এখন নজরদারি আরও বাড়ানো দরকার। হোস্টেল বন্ধ থাকলেও যে কোনো জায়গায় যে কেউ ঢুকতে পারে। কোথাও কোথাও সীমানা প্রাচীর নেই। কোথাও কোথাও সীমানা প্রাচীর থাকলেও অনেক নিচু। কোথাও তারকাটা দেয়া থাকলেও তা কাটা। যে কারণে ছাত্রাবাস খোলা থাকুক বা না থাকুক যে কেউ ভেতরে ঢুকতে পারে। ধর্ষকদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন বলেও তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে রাজনৈতিক ও সামাজিক কঠোর অবস্থান নিতে হবে। তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি স্থায়ী নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার বলেও মনে করে। পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করে স্থায়ী একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যেতে পারে। ঘটনাটি ছাত্রাবাসের কোনো কক্ষে নয়, ধর্ষিতা ও তার স্বামীর গাড়িতে ঘটেছে বলেও তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারে না বলেও মনে করে তদন্ত কমিটি। যেহেতু কলেজ ক্যাম্পাসে অপকর্মটি ঘটেছে, তাই তার দায় কলেজ কর্তৃপক্ষের রয়েছে। তবে কমিটি যেই সীমাবদ্ধতা দেখেছে তাতে কারো পক্ষেই এ ধরনের ঘটনা রোধ করা কঠিন। তদন্ত কমিটির এক সদস্য এমন মন্তব্য করেন। সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটি কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেনি। তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ এরইমধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছে। যে দারোয়ান দায়িত্বে ছিল তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তত্ত¡াবধানের দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদেরকেও কলেজ কর্তৃপক্ষ জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে এসেছে। তদন্ত কমিটি নির্যাতিতা নারীর সঙ্গে কথা বলেনি বলেও জানিয়েছে সূত্রটি। মেয়েটির সঙ্গে আমরা কথা বলিনি। যেহেতু তিনি মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন। আমরা তার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেছি। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে কিনা-এমন প্রশ্নের উত্তরে তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, আমরা সচিবের কাছে জমা দিয়েছি। এখন মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে প্রকাশ করা হবে কি হবে না। গত ২৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় স্বামীর সঙ্গে এমসি কলেজে ঘুরতে এসেছিলেন ওই তরুণী। এ সময় কলেজ ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী তাদের জোরপূর্বক কলেজের ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কক্ষে স্বামীকে আটকে রেখে তরুণীকে গণধর্ষণ করে তারা। রাত ১১টায় শাহপরাণ থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। এ ঘটনায় ছয় জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও তিনজনকে আসামি করে শনিবার সকালে নগরীর শাহপরান থানায় মামলা করেছিলেন ভুক্তভোগীর স্বামী। এজাহারভূক্ত ছয় আসামিসহ মোট ৮ জনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় এমসি কলেজ কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by