বাংলাদেশ

আবাসন খাতে বিনিয়োগ ও নীতি সহায়তা জরুরি : পিআরআইয়ের আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা

  প্রতিনিধি ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ , ৪:০৭:৫৭ প্রিন্ট সংস্করণ

আবাসন খাতে বিনিয়োগ ও নীতি সহায়তা জরুরি : পিআরআইয়ের আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা
আবাসন খাতে বিনিয়োগ ও নীতি সহায়তা জরুরি : পিআরআইয়ের আলোচনা সভায় বিশেষজ্ঞরা

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

বিপুল সম্ভাবনা সত্ত্বেও আবাসন খাত বিকশিত হতে পারছে না। যথাযথভাবে বিনিয়োগ ও সরকারি নীতি সহায়তা পেলে এ খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে যার মাধ্যমে আবাসন খাত দেশের জিডিপিতে আরো বেশি অবদান রাখতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সময় উপযোগী সরকারি নীতি সহায়তা না পাওয়া ও তহবিল সংকটের কারণে তা হচ্ছে না। সোমবার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ (পিআরআই) আয়োজিত এক ভার্চুয়াল গোলটেবিল আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে।

বক্তারা বলেন, সরকারের উচিত আবাসন খাতকে অগ্রাধিকার ও নীতিগত সহায়তা দেওয়া। একই সঙ্গে পর্যাপ্ত তহবিলের যোগান দেওয়ার মাধ্যমে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষকে সাশ্রয়ী মুল্যে বসবাসযোগ্য আবাসনের আওতায় আনা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।
করোনা পরবর্তী আবাসন খাতের মাধ্যমে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও উচ্চতর জিডিপি প্রবৃদ্ধির জন্য “সাশ্রয়ী আবাসন অর্থায়ন-পর্ব ১” আইএফসি’র গোলটেবিল সিরিজ বৈঠকের অংশ ছিল হিসেবে সোমবার এই আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়।
এতে মুল প্রবদ্ধ উপস্থাপন করেন গ্লোবাল হাউজিং ফাইন্যান্স অ্যান্ড ক্যাপিটাল মার্কেটস-ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের এশিয়া প্যাসিফিক প্রধান থিয়ের্নো হাবিব হ্যান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন পিআরআই’এর নির্বাহি পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।

ড. মনসুর বলেন, ‘এই খাতে সরকারের বাজেট বরাদ্দ আর বিনিয়োগ খুবই কম। প্রতিবেশী ভারতসহ বেশিরভাগ দেশই আবাসনকে তৃতীয় খাত হিসেবে বিবেচনা করে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা ১৪তম। এ খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০% শহরাঞ্চলে বাস করে। কিন্তু, এই ৩০% এর অর্ধেন সংখ্যক লোকের জন্যও আবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। এই বিষয়ে সরকারের বেতন নীতিও খুবই দুর্বল এবং এই খাতের ঋণের জন্য ব্যাংকগুলোও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয় না। সরকারের উচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে আবাসত খাতে ব্যাংক খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর ব্যবস্থা করা।
ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা নাসিমুল বাতেন বলেন, “বাংলাদেশে জমির দাম অনেক বেশি। তবুও ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই খাতে ঋণ দিয়ে আসছে। কিন্তু কখনো কখনো এসব ঋণের টাকা উঠিয়ে আনা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়া জমির জন্য ফি এবং ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন মাসুলও অনেক বেশি। সব মিলিয়ে আবাসন খাত একটি চ্যালেঞ্জিং সময় পার করছে।
আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) সৈয়দ জাভেদ নূর বলেন, এই খাতে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সরকার আরো কিছু উদ্যোগ নিলে এই খাতকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব।
বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াস লিমিটেডের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) আসিফ ইকবাল বলেন, কৃষি ও তৈরি পোশাক খাতের পরে, আবাসন খাতকে কর্মসংস্থান সৃষ্টির অন্যতম প্রধান খাত হিসাবে বিবেচনা করা হয়। জিডিপিতে এই খাতের অবদান ১২-১৫%। অথচ সরকারি নীতি সহায়তা প্রাপ্তির বেলায় এ খাত অনেক পিছিয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে আবাসন খাতে অর্থায়নের চাহিদা ছিল দেড় লাখ কোটি টাকা। ২০২০-২১ অর্থবছরে, এই চাহিদা আরও ৫ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। সরকার আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের প্রতি যত্নশীল হলে এ খাতের মাধ্যমে আরও সাশ্রয়ী আবাসনের পাশাপাশি দেশের উন্নয়ন করা সম্ভব।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় নির্ধারিত ১১টি লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে ২০৩০ সালের মধ্যে সবার জন্য পর্যাপ্ত, নিরাপদ এবং সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন। মৌলিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং বস্তির উন্নতির ওপর জোর দেওয়া। শুধু তাই নয় এই লক্ষ্যগুলো অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ, বাসযোগ্য এবং টেকসই অবকাঠামো বির্নিমানের আহ্বান জানায়। পরিকল্পিত অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে জনসাধারণের বৈশ্বিক উন্নয়ন ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্য সব নাগরিকের জন্য মানসম্পন্ন আবাসনের ব্যবস্থা করা রাষ্ট্রের অন্যতম সাংবিধানিক দায়িত্ব।
এছাড়া এতে আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম। উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মফিজ উদ্দিন আহমেদ, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হোসেন, ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশনের ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন গ্রুপের প্রিন্সিপাল ইনভেস্টমেন্ট অফিসার এহসানুল আজিম প্রমুখ।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by