স্বাস্থ্য

এক তরুণীর দেহদানে দুই নারীর প্রাণ ফেলো

  প্রতিনিধি ১৯ জানুয়ারি ২০২৩ , ৯:০০:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক :

সারা ইসলাম ১০ মাস বয়স থেকেই মস্তিষ্কে টিউমারসহ নানা শারীরিক জটিলতায় ভুগছিলেন। সম্প্রতি তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) ভর্তি করা হয়। সেখানে বুধবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় তাকে ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করা হয়। তার বয়স হয়েছিল ২০ বছর। সারা ইসলামের মরণোত্তর দান করা কিডনি অন্য দুই নারীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশে প্রথম দুজনের দেহে মরণোত্তর দানের কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।

এর মধ্যে বুধবার রাত সাড়ে ১০টা থেকে বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) ভোর ৪টা পর্যন্ত দুটি কিডনির একটি বিএসএমএমইউতে শামীমা আক্তার নামে এক নারীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। অন্যটি ন্যাশনাল কিডনি ফাউন্ডেশনে আরেক নারীর দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়। একই সঙ্গে সারা ইসলামের দান করা দুটি কর্নিয়া সুজন (৩০) ও ফেরদৌস রহমান (৫৬) নামে দুজনের চোখে প্রতিস্থাপন করা হয়। তারা নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা।

বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) বিএসএমএমইউতে শহীদ ডা. মিল্টন হলে ‘ব্রেন ডেথ’ রোগীর অঙ্গদান ও বাংলাদেশে প্রথম সফল ক্যাডাভেরিক প্রতিস্থাপন বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।

বিএসএমএমইউ জানায়, দেশে প্রথমবারের মতো ‘ব্রেন ডেথ’ রোগীর শরীর থেকে নেওয়া দুটি কিডনি দুজনের শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন (ক্যাডাভেরিক ট্রান্সপ্লান্ট) করা হয়েছে। বিএসএমএমইউয়ের ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে এ কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়। ফলে একজন মরদেহ ব্যক্তির অঙ্গদানে আলো ফুটেছে দুই প্রাণে।

ক্যাডাভেরিক সার্জারিতে দীর্ঘ প্রচেষ্টার কথা জানিয়ে শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ‘ব্রেন ডেথ’ কমিটিকে সক্রিয় করে তুলি। আমরা সবাই বিশ্বাস করি ক্যাডাভেরিক রোগী অঙ্গদানের মাধ্যমে অসংখ্য অসুস্থ রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এ লক্ষ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে মানবদেহে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন-১৯৯৯ প্রণয়ন করা হয়। সেই আইনের আলোকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আমি পদাধিকার বলে জাতীয় ক্যাডাভেরিক কমিটির সভাপতিও বটে। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্রেন ডেথ কমিটি ও কিডনি প্রতিস্থাপন সেলের সহযোগিতায় ক্যাডাভেরিক রোগীর দেহ থেকে অঙ্গদানের প্রক্রিয়া সফল করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’

এর আগে এ ধরনের দু-একটি রোগীর ক্ষেত্রে সফল হতে গিয়েও অঙ্গদানে রাজি করাতে পারিনি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় আজ সফল হয়েছি। বাংলাদেশের চিকিৎসা শাস্ত্রের জগতে ইতিহাস সৃষ্টি করতে পেরেছি’, যোগ করেন উপাচার্য।

এ সফলতার জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিডনি প্রতিস্থাপন সেলের প্রধান ও ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবুর রহমান দুলাল ও তার সব সহযোগীকে ধন্যবাদ জানান।

সার্জারির নেতৃত্ব দেওয়া চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, মৃত ব্যক্তির থেকে অঙ্গ নিয়ে প্রতিস্থাপন এত সহজ ছিল না। পরিবার থেকেই নানা প্রতিবন্ধকতা থাকে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ইসলামে প্রাণ বাঁচানোয় গুরুত্ব দেওয়া হলেও অনেকে ভুল বোঝেন, দান করতে চান না। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মের মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে।

কিডনি ও কর্নিয়া দানকারী সারা ইসলামকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অঙ্গদানের কাজে উদ্বুদ্ধ করেন বিএসএমএমইউয়ের ক্রিটিক্যাল কেয়ার মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আশরাফুজ্জামান সজীব।

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় বিএসএমএমইউয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে প্রয়াত সারা ইসলামের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অংশ নেন।

উপাচার্য বলেন, ক্যাডাভেরিক প্রতিস্থাপনের প্রথম অঙ্গদাতা সারা ইসলামের নাম বাংলাদেশের চিকিৎসাক্ষেত্রে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তার এ মহৎ আত্মত্যাগের মহিমা চিকিৎসা বিজ্ঞানে স্মরণীয় হয়ে থাকবে

আরও খবর

Sponsered content

Powered by