প্রতিনিধি ১৩ মে ২০২৩ , ৯:০১:৪০ প্রিন্ট সংস্করণ
ভোরের দর্পণ ডেস্ক :
গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় আছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। দেশটিতে এতদিন অনেকটা একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন এরদোয়ান। তবে দেশটিতে আগামীকাল অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া প্রেসিডেন্ট ও পার্লামেন্ট নির্বাচনেই এবার এরদোয়ানের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে। কেননা এবারের নির্বাচনে এরদোয়ান বিরোধীদের পক্ষ থেকে সবচেয়ে কঠিন এক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্কে এরদোয়ানের বিরুদ্ধে ছয়টি দল একতাবদ্ধ হয়েছে। দলগুলো এরদোয়ানের বিরুদ্ধে একক প্রার্থী হিসেবে বিরোধী নেতা কেমাল কিলিচদারুগলুকে দাঁড় করিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার আঙ্কারায় বিশাল সংখ্যক সমর্থকের সামনে হাজির হন কেমাল কিলিচদারুগলু। তিনি সেখানে শান্তি ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেছেন। অন্যদিকে এরদোয়ান বলছেন, অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে তিনি তুরস্কের মাথা উঁচু করে রেখেছেন।
এদিকে ইস্তাম্বুলের ২৩ বছর বয়সী শিক্ষার্থী পেরিত বলেন, এরদোয়ান যদি আবার জয়লাভ করেন, আমাদের সবার জীবন দুঃস্বপ্নের মতো হয়ে উঠবে। পেরিতকে দেশটির স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বোয়াজিচি ইউনিভার্সিটিতে একজন সরকারপন্থী ডিন নিয়োগের প্রতিবাদে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার কারণে প্রায় দু’মাস জেলে থাকতে হয়েছে।
তুরস্কের সরকারি দেওয়া হিসেব মতে, দেশটিতে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার ৪৪ শতাংশ। দেশটির নাজুক এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতির জন্য এরদোয়ানের গৃহীত নীতিমালাকে ব্যাপকভাবে দায়ী করা হয়।
এমরুও অভিযোগ করেছেন, লাগামহীন মূল্যস্ফীতির কারণে তুরস্কে তাদের মতো তরুণদের জীবন ক্রমশই কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, আপনার পক্ষে শুধু পড়ালেখা করে জীবন চালানো সম্ভব নয়, বেঁচে থাকতে হলে আপনাকে একটি পূর্ণকালীন চাকরিও জোগাড় করতে হবে।
দেশের অর্থনীতির নাজেহাল অবস্থা, মুদ্রাস্ফীতির ঊর্ধগতি, জোড়া শক্তিশালী ভূমিকম্পে ৫০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু-এবার এরদোয়ানকে নাজুক করে দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে এরদোয়ানের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন বিরোধী জোটের প্রার্থী কেমাল। তিনি ছয়টি বিরোধী দল নিয়ে গঠিত জোট ‘টেবিল এবং সিক্সের’ প্রতিনিধিত্ব করছেন। এছাড়া আরও কিছু সরকারবিরোধী গ্রুপও কেমালের প্রতি সমর্থনের কথা ঘোষণা করেছে।
জনমত জরিপেও দেখা যাচ্ছে, এরদোয়ানের চেয়ে তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিরোধী জোটের প্রার্থী এগিয়ে আছেন।
২০০২ সাল থেকে এরদোয়ানের জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একে) ক্ষমতায় আছে এবং ২০০৩ সাল থেকে তুরস্ক শাসন করছেন এরদোয়ান। এবারের নির্বাচনে দেশটিতে ৬০ লাখ নতুন ভোটার ভোট দেবেন। নতুন প্রজন্মের এসব ভোটার এরদোয়ান ছাড়া আর কোনো রাজনৈতিক নেতাকে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে দেখেন নি।
এরদোয়ান শুরুতে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এরপর ২০১৪ সালে তিনি দেশটির প্রেসিডেন্ট হন। ২০১৬ সালে ব্যর্থ এক সামরিক অভ্যুত্থানের পর এরদোয়ান নাটকীয়ভাবে তার ক্ষমতা বৃদ্ধি করেন। তুরস্কে তিনি হয়ে ওঠেন একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী।
বর্তমানে এরদোয়ান বিশাল এক প্রাসাদ থেকে তুরস্ক পরিচালনা করেন। একইসঙ্গে দেশটির বেশিরভাগ মিডিয়াই তার মিত্রদের নিয়ন্ত্রণে। দেশটিতে চরম মুদ্রাস্ফীতির জন্য বেশিরভাগ তুর্কি নাগরিক এরদোয়ানকে দায়ী করেন।