দেশজুড়ে

কবে কমবে ভোজ্যতেলের দাম?

  প্রতিনিধি ২৭ জানুয়ারি ২০২১ , ১:১৬:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক:

এক সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম কমলেও এখন আর দাম কমাতে চাচ্ছেন না দেশের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা। বলছেন, আজ দাম কমালে কাল যদি আবার বাড়ে?

ব্যবসায়ীরা সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন, ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করার পরই দাম সমন্বয় করা উচিৎ। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ ট্রেড এন্ড ট্যারিফ কমিশনের নেতৃত্বে গঠিত এ সংক্রান্ত কমিটি ভোজ্যতেলের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণে কাজ করছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ভোজ্যতেল নিয়ে সারাদেশে একটা সঙ্কট তৈরি হয়েছে। দেশে এ পণ্যের বাজারের ৯০ শতাংশ আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর নির্ভর করে। ছয় মাস আগে প্রতিটন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ৭০০ ডলারে বিক্রি হলেও কিছুদিন আগে তা ১১৫০ ডলারে দাঁড়ায়। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম আবার কমতে শুরু করে।

ব্যবসায়ীদের দাবি রাখতে গিয়ে এ পণ্যের দাম কিভাবে সমন্বয় করা যায় সে বিষয়ে ভাবছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দাম নির্ধারণের কমিটিকে বলা হয়েছে তারা যেন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে একটি মানসম্মত দামের তালিকা করে। অবশ্য কবে নাগাদ তালিকা দেবে তার সময়সীমা বেঁধে দেয়নি মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলছে, আজ একটা দাম নির্ধারণ করলে দুদিন পর আবার যদি দাম কমে তখন সমালোচনা হবে। সেজন্য প্রতিমাসে একটি সভা করে যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা যায় কিনা তা নিয়ে ভাবছে মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম সাতদিন পরেই কমেছে। এর জন্য প্রতিনিয়ত ফলোআপ রাখতে হয়। আজ যে পণ্যটা আমদানির জন্য বুক করা হয়, সেটা দেখা যায় আমাদের দেশে আসতে অনেক সময় তিন মাসও লেগে যায়। এসব বিষয়ে নজর রাখতে আমাদের কমিটি, ট্যারিফ কমিশন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করে একটা পথ বের করবো।’

বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, ‘বেড়েছিল শুধু তেলের দাম। আমদানির অন্যান্য খরচ বাড়েনি। সেইসব বিশ্লেষণের জন্যই কমিটি করা হয়েছে। কাজটা এক ঘণ্টায় করা সম্ভব নয়।’

উল্লেখ্য, আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই দিয়ে ভোজ্যতেল আমিদানিকারকরা দেশে সকল ব্রান্ডের ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছে। বর্তমানে প্রতিলিটার ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৪ টাকায়। কমিটি করার মধ্য দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মূলত ব্যবসায়ীদের আরও কিছুদিন বেশি দামে তেল বিক্রির সুযোগ করে দিলেন বলে জানিয়েছেন ভোক্তারা।

রাজধানীর মৌলভীবাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী ও মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা জানিয়েছেন, ‘চার হাজার ৬০০ টাকা মণ দরের সয়াবিন তেল এক সপ্তাহের ব্যবধানে চার হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আমরা তো মণপ্রতি ৫০০ টাকা লোকসান দিচ্ছি। এর কী হবে?’

অপরদিকে কারওরানবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ‘আমরা যে দামে কিনি, সে অনুযায়ী বিক্রি করি। প্রতিলিটারে লাভ হয় দুই থেকে চার টাকা। এর বেশি নয়।’

জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানান, ভোজ্যতেল আমদানিতে সরকারের রাজস্ব না কমিয়ে চার স্থানের শুল্কের পরিবর্তে একস্থানে নেওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে চিঠি দেওয়া হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে। ভোজ্যতেলে তিন বা চার স্তরে যে শুল্ক, ভ্যাট, ট্যাক্স নেওয়া হয় সেটা এক জায়গা থেকে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এতে ব্যবসায়ীদের সময় বাঁচবে, হয়রানি কমবে।

তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় মনে করে এ শুল্ক এক জায়গায় হওয়া উচিত। সেটার জন্য আরও তৎপর হবো।

মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমানোর বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পণ্যের হাত বদলের কারণে যেন বাজারে প্রভাব না পড়ে সেটা দেখতে হবে। বিশেষ করে, খোলা তেলের বিষয়ে। ৭০ থেকে ৭২ শতাংশ খোলা তেল, বাকিটা বোতলজাত। আরও বেশি বোতলজাত করা গেলে দামের হেরফের কম হবে। উৎপাদন পর্যায়ে ২ শতাংশ, তারপরের ধাপে ৩ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৭ শতাংশ লভ্যাংশের কথা আগে থেকেই ঠিক করা আছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by