খুলনা

কুষ্টিয়ায় ইয়াসমিন হত্যার বিচার চেয়ে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

  প্রতিনিধি ২৩ জুন ২০২০ , ৪:২৮:০৪ প্রিন্ট সংস্করণ

কুষ্টিয়ায় ইয়াসমিন হত্যার বিচার চেয়ে পরিবারের সংবাদ সম্মেলন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : কুষ্টিয়ায় ইয়াসমিন হত্যার দায়ে অভিযুক্ত শশুর-শাশুড়ির বিচার দাবী করে সংবাদ সম্মেলন করেছে তার বাবা মা। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার মাধবপুরগ্রামে নিজ বাড়িতে ইয়াসমিনের বাবা মা সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ছেলে পক্ষের দাবীকৃত যৌতুক গহনা ও বিভিন্ন আসবাবপত্র দিয়ে তিন বছর আগে পশ্চিম আব্দালপুর গ্রামের জামিরুল হোসেন’র ছেলে পুলিশ কনস্টেবল মোস্তাফিজুরের সাথে বিয়ে দেন। বিয়ের পর থকে পুলিশ কনস্টেবল মোস্তাফিজুর আরো যৌতুক দাবী করে।

সর্বশেষ একটি মটরসাইকেলের জন্য স্ত্রী ইয়াসমিনের উপর নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে গত ১৫ জুন সন্ধ্যায় ফাঁস দিয়ে ইয়াসমিনকে হত্যা করে ঘরের ডাবে ঝুলিয়ে দেয়। এটি আত্মহত্যা বলে প্রচার দেয়।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইয়াসমিনের বোন আসমা খাতুন বলেন, লাশ দেখতে গিয়ে আমরা ইয়াসমিনের শরীরে মারধরের ক্ষত দেখতে পেয়েছি। ঘরের দরজা অক্ষত ছিল। এটি হত্যাকান্ড।

ইয়াসমিনের বাবা আবুল হোসেন বলেন, জামাই পুলিশ কনষ্টেবল বলে থানা মামলা নিচ্ছেনা। একদিন একদিন করে ঘুরিয়ে শেষমেশ মামলা নিলনা। থানায় মামলা দিতে গেলে উল্টো মোস্তাফিজুর সবাইকে মামলায় ফাঁসিয়ে দেবার হুমকি দিচ্ছে। আমরা এর দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি চাই। এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে ইয়াসমিনের মা রোমেলা খাতুন, বড়ভাই বাদশা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আরিফ জানান, লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। রিপোর্ট পেলেই বোঝা যাবে আত্মহত্যা নাকি হত্যা। তারপরেই মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

উল্লেখ্য, নিহত ইয়াসমিনের মা রোমেলা খাতুন বলেন, ১৫ জুন তারিখ সোমবার সন্ধ্যায় আব্দালপুর স্বামীর বাড়ী থেকে ইয়াসমিনের গৃহবধুর লাশ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

রোমেলা খাতুন অভিযোগ করে বলেন, পুলিশ কনষ্টেবল মোস্তাফিজুরের সাথে ৩ বছর পূর্বে আমার মেয়ের বিবাহ হয়। বিয়ের সময় ছেলে পক্ষ তিন ভরি গহনা, আসবাবপত্র আর মটরসাইকেল দাবী করে। পাকা কথা হওয়ার সময় আমরা সব মেনে নিয়ে শুধু মটরসাইকেল দেবনা বলে জানায়। এ কারনে এক পর্যায়ে এ বিয়ে ভেঙ্গে যায়। পরে আবার ছেলে পক্ষ বলে আমাদের মেয়ে পছন্দ হয়েছে এখানেই ছেলে বিয়ে দেব, মটরসাইকেল ছাড়াই। এভাবে বিয়ে হয়ে গেল। বিয়ের পর গহনা, বিভিন্ন আসবাবপত্র সবই দেয়া হয়। তারপরেও এক বছর পরে জামাই বিভিন্ন কারন দেখিয়ে টাকা দাবী করতো। এদিক সেদিক করে সেই সব টাকা কমবেশি দেওয়া হয়। তারপরেও বিভিন্ন সময় মোস্তাফিজুর মারধর করতো। বাচ্চা কেন হয়না এ নিয়েও ইয়াসমিনের উপর নির্যাতন চলতো।

সর্বশেষ গত এক বছর ধরে একটি মটরসাইকেলের জন্য বেপরোয়া হয়ে ওঠে মোস্তাফিজ। মেহেরপুর থানায় পোষ্টিং তার। কয়েকমাস আগে সেখানকার বাসা থেকে মারধর করে ইয়াসমিনকে বের করে দেয়। ইয়াসমিন নিজের বাড়িতে আসে। কয়েকদিন বাদে আব্দালপুর শ^শুরের বাড়িতে যায়। সেখানেও তার শ^শুর, শাশুড়ি, দেবর মারধর করতো।

১৫ জুন ক্ষিপ্ত হয়ে মোস্তাফিজুর এর হুকুমে তার বাবা জামিরুল হোসেন, মা পারুলা ও ভাই মিঠু ও পূর্ব আব্দালপুর গ্রামের নুন্দাই মিন্টু আমার মেয়েকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করে।

নিহত ইয়াসমিন খাতুনের মামা জহুরুল জানায়, বিয়ের সময় ৪ ভরি স্বর্ণ দেওয়া হয়। তারপরেও মোস্তাফিজুর রহমান টিটু মোটরসাইকেল দাবী করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার একজন জনপ্রতিনিধি জানান, যৌতুক ও বাচ্চা না হওয়ায় নিহত ইয়াসমিনের পরিবারের সাথে তার শ্বশুর জামিরুল হোসেন, দেবর মিঠু ও তার শ্বাশুরী পারুলার বনিবনা হতোনা। ঐ গৃহবধুকে মাঝে মাঝেই নির্যাতন ও মারধর করতো।

যে ঘরে ইয়াসমিনের আত্মহত্যা দেখানো হচ্ছে, প্রতিবেশী কাউকে না জানিয়েই তারা ৩জন মিলে লাশ নামিয়ে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছে। বাইরে থেকে দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করলে দরজা ভাঙ্গা থাকবে ও বোঝা যাবে। অথচ দরজা অক্ষত রয়েছে। আর ইয়াসমিন ওইদিন রোজা ছিলো, সে আত্মহত্যা করতে পারেনা।

ঐ গৃহবধুর স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান টিটুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যৌতুক কখনই নেওয়া হয়নি, দাবীও করা হয়নি। উল্টো আমিই শ^শুরকে টাকা দিতাম। বাচ্চা হতো না এই জন্য ইয়াসমিন আত্মহত্যা করেছে।

শ্বাশুড়ী পারুলা বেগম জানান, সোমবার বিকালে নিহত ইয়াসমিন তার স্বামীর সাথে মোবাইলে কথা বলে। এরপর রুমে যায়। সেসময় আমার ছোট ছেলে মিঠু তাল শ্বাস কিনে ভাবিকে দিতে যায়। পরে জানালায় গিয়ে দেখতে পায় ঘরের ডাবের সাথে ইয়াসমিন ঝুলছে। তখণ আমরা দরজায় লাথি মেরে খুলে তার লাশ উদ্ধার করি।

ময়নাতদন্ত শেষে লাশ বাবার বাড়ি ইবি থানার মাধবপুর গ্রামে দাফন সম্পন্ন করা হয়। দাফনের সময় ইয়াসমিনের পিতা আবুল হোসেনের বাড়িতে ইয়াসমিনের স্বামী ও তার পরিবারের লোকজন কেউ লাশ দেখতেও আসেনি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by