খুলনা

কুয়াশা ভেদ করে হলুদের ঝিলিকে হাসছে কৃষক

  প্রতিনিধি ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ , ৩:১২:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ

রাসেল মিয়া, মহম্মদপুর (মাগুরা) প্রতিনিধিঃ
চারিদিকে হলুদ আর হলুদ। দিগন্ত জোড়া হলুদের আভায় শোভা বর্ধন সহ আকৃষ্ট করছে প্রকৃতি পাগল প্রেমিদের। শিশির ভেজা শীতের সকালে ঘন কুয়াশায় জড়ানো মাগুরার মহম্মদপুরের মাঠ জুড়ে শুধু শরিষার ক্ষেত। সবুজ আকৃতির গাছ আর হলুদ ফুলের সামরহে মাতোয়ারা পথিকের মন। কুয়াশার ফাক দিয়ে উকি দেওয়া সোনা ঝরা রোদের আলোর ঝলকানিতে অন্যরকম করে তুলেছে মাঠের সৌন্দর্য। ফুল থেকে মধু আহোরণে ব্যস্ত মৌমাছিরা। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই নতুন শরিষায় ভরে উঠবে কৃষকের উঠান। হলুদ ফুলের মাঝেই রঙ্গিন স্বপ্ন বুনে আশায় বুক বেধেছে মহম্মদপুরের প্রতিটি কৃষক।
মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলায় লক্ষমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত শরিষা চাষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের তুলনায় এবছর শরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।  কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। অতিরিক্ত ফলনের উপর লাভেরও আশা করছেন তারা। বাজার দরও ভাল পাবেন বলে ধারনা করছেন অনেকে। একবারের জন্য সেচ, স্বল্প সার ও খরচ করে বেশি ফসল ফলে বিধায় কৃষকরা প্রতিবছরই ঝুকছেন শরিষা চাষের দিকে।
মহম্মদপুর উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়,  এবছর উপজেলায় শরিষা আবাদের লক্ষমাত্রা ছিল ১১ শত ৩০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি। উপজেলায় শরিষার আবাদ হয়েছে ১২ শত হেক্টর জমিতে। ধারণা করা হচ্ছে এবছর  উপজেলায় ১হাজার ২ শত মেট্রিক টন শরিষা উৎপাদন হবে। গত বছর উপজেলায় শরিষা উৎপাদন হয়েছে ১ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন। ধারণা করা হচ্ছে এবছর যেসব শরিষা উৎপাদন হবে তা থেকে অনেক কৃষক নিজেদের চাহিদা পুরণ করে অতিরিক্ত শরিষা বাজারে বিক্রি করে বাড়তি টাকা আয় করবেন।
কৃষি বিভাগ আরো জানায়, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ২৪ টি ব্লকে ৫শত কৃষি পরিবারের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল বারি-১৪, বারি-৯, বিনা-৪ সহ বিভিন্ন প্রজাতির বীজ প্রনোদনা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি কৃষককে ১০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি করে এমওপি সার প্রদান করা হয়েছে। এবছর তুলনায় রোগের আক্রমন কম হওয়ায় শরিষার অতিরিক্ত ফলন হবে। এছাড়াও উপজেলার কৃষকদের কে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ১ বিঘা করে ১১২টি, ১ একর করে ১৬টি এবং ২ একর করে ২টি মোট ১৩০টি শরিষার প্রদর্শণী দেওয়া হয়েছে।
বাবুখালী ইউনিয়নের চুড়ারগাতী ব্লকের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা প্রণব কুমার রায় বলেন, শরিষার জমিতে রোগ-বালাই আক্রমন করার খবর পাওয়া মাত্রই সেখানে উপস্থিত হয়ে কৃষকদেরকে সাথে নিয়ে তাৎক্ষনিক সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করি। তাছাড়া রোগের আক্রমনের পূর্বেই কৃষকদের বিভিন্ন ধরণের পরামর্শ দিয়ে থাকি।
উপজেলার নহাটা ইউনিয়নের রামদেবপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম, সদরের ধোয়াইল গ্রামের রহমান শেখ, বালিদিয়া ইউনিয়নের নিখড়হাটা গ্রামের ধলু মিয়া, মৌশা গ্রামের মাহফুজার রহমান জানান, অন্য বছরের চেয়ে এবছর শরিষা ভাল হয়েছে। ফলনও বেশি হবে। মৌশা (দ:) গ্রামের সুমন মোল্যা বলেন, প্রতিবছর শরিষার চাষ করি।  আমন ধান কাটার পূর্বে ৮ বিঘা জমিতে শরিষার বীজ বপন করেছি। শরিষা উঠিয়ে আবার বোরো ধান লাগানো হবে। রোগ-বালাই আসার আগেই কৃষি অফিসের লোকজন এসে আমাদেরকে পরামর্শ দিয়েছেন। যার কারণে ফসলে কোনও পোকা মাকড় লাগতে পারেনি। ৮ বিঘা জমিতে অন্তত ৪০ মন শরিষা হবে বলে বলেও জানান তিনি। নহাটা ইউনিয়নের পানিঘাটা গ্রামের সোহেল বলেন, প্রতি বছরই শরিষার চাষ করি। তবে এবছর মাঠে শরিষা খুব ভাল হয়েছে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত শরিষা বাজারে বিক্রি করবো বলে আশা করছি।
মহম্মদপুর উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আকরাম হোসেন বলেন, এবছর লক্ষমাত্রার চেয়ে শরিষার ফলন ভালো হবে। আমরা নিয়মিত আমাদের মাঠকর্মীদের কাজে লাগিয়েছি। তারা সার্বক্ষনিক কৃষকদের শরিষা ক্ষেত পরিদর্শণ করেছে। কোনও সমস্যা হলে তাৎক্ষনিক আমরাও অফিস থেকে ছুটে গিয়েছি এবং ক্ষেতের ফসলের সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করেছি।
এবিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুস সোবহান ভোরের দর্পণকে জানান, করোনা কারণে সারা বিশ্ব যখন ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। তার বিপরিতে মুজিব শত বর্ষে করোনা পরিস্থিতির হাত হতে দেশকে রক্ষা করতে সরকারে সকল নির্দেশনা মেনে আমরা মাঠে কাজ করে যাচ্ছি। সকল ফসলের পাশাপাশি শরিষার বীজ বপনের শুরুতেও আমরা মাঠ কর্মীদের নিয়ে জমিতে গিয়ে কৃষকদের দিক নির্দেশনা প্রদান করেছি। চাহিদা অনুযায়ী বৃষ্টি, অনুকুল আবহাওয়া থাকায় গত বছরের তুলনায় এবার শরিষা অনেক ভাল হয়েছে। প্রত্যেক কৃষকই তাদের খরচ বাদ দিয়ে অনেক লাভবান হবেন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by