চট্টগ্রাম

কোমর তাঁতে সংসার চলে পাহাড়ী নারীদের

  প্রতিনিধি ১৩ মার্চ ২০২১ , ৭:৫৪:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ

মো. ইব্রাহিম শেখ, পার্বত্য চট্টগ্রাম :

খাগড়াছড়ি শহরের আদালত সড়ক মানেই তাঁতের রাজ্য। এখানে বয়ন টেক্সটাইল, অর্ণব ক্রাফটস, নিউ আড়ং, পাহাড়িকা, রাঙামাটি, রেইন, পাহাড় ফ্যাশনের সারি সারি দোকান।

এখানে রয়েছে ১১টি জাতিসত্তার মানুষ। তাদের সবারই রয়েছে আলাদা আলাদা সংস্কৃতি, ঐতিহ্য।

পাহাড়ি অঞ্চলের এসব মানুষের রয়েছে আলাদা আলাদা পোশাকও। তারা বিশেষ করে এসব পোশাক নিজেরাই কোমর তাঁতের মাধ্যমেই তৈরি করে থাকেন।

কিন্তু বর্তমান সময়ে সুতা ও রঙের দাম বাড়ায় এই বুনন শিল্প আগে থেকে অনেকটা কমে এসেছে। তবুও অনেকেই ঐতিহ্যকে ধরে রাখা ও নিজেদের প্রয়োজনের পাশাপাশি ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার যোগান দিচ্ছেন কোমর তাঁতে তৈরি পিনন হাদি বিক্রি করে।

খাগড়াছড়ি শহরের লিলি মার্মা এলাকার কোমর তাঁতি প্রমিলা চাকমা ও ফেলাবি চাকমা বলেন, ‘তারা নিজেদের প্রয়োজনে তাঁত বুনে থাকেন। এছাড়া চাহিদা থাকলে বিক্রিও করেন। তবে সুতা ও রঙের দাম বাড়তি হওয়াতে অনেকেই এখন আর আগের মতো কোমর তাঁত বুনেন না।

অনেকেই কিনে পরিধান করেন। তবে দুর্গম এলাকার পাহাড়িরা নিজেদের জন্য হলেও এ ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। কিন্তু শহুরে এলাকায় এর ব্যবহার দিনদিন কমে যাচ্ছে।’ আরেক তাঁতি বাসন্তি চাকমা জানান, আমাদের চাকমারা দীর্ঘদিন ধরেই পিনন হাদি তৈরি করে আসছেন। এটা আমাদের ঐতিহ্যও।

আমরা এখনো পুরোনো ঐতিহ্য আগলে রাখার চেষ্টা করছি। নিজেদের প্রয়োজনের পাশাপাশি এগুলো বিক্রি করে সংসার ও ছেলে-মেয়েদের পড়ালেখার যোগান দিচ্ছি। স্থানীয় বরনিল টেক্সটাইলের মালিক আমিনুর রহমান জানান, খাগড়াছড়িতে স্থানীয় তাঁত শিল্পের মোটামুটি চাহিদা আছে।

তবে এসব দেশীয় তাঁত শিল্পের পোশাক বিশেষ করে খাগড়াছড়ি পর্যটকরাই বিশেষ করে ক্রয় করে থাকেন। আমরা খাগড়াছড়ি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁত পণ্য প্রেরণ করে থাকি। বিশেষ করে ঢাকা, চট্টগ্রাম আর খুলনায়। এছাড়া অনেকেরই বান্দরবান ও কক্সবাজারে নিজস্ব ব্যবসা আছে।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, খাগড়াছড়ি জেলা অফিস সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ে দুই ধরণের তাঁত বুনা হয়। এর মধ্যে পাহাড়ি পরিবারগুলো কোমর তাঁত ও বিশেষ করে ব্যবসায়িক কারখানা গুলোতে গর্ত তাঁত ব্যবহার করা হয়। কোমর তাঁতের চেয়ে গর্ত তাঁতে পুঁজি লাগে বেশি।

পাহাড়ি এলাকায় আগের তুলনায় এখন তাঁত কমে গেছে। আগেকার পাহাড়িরা যে পরিমাণ কোমর তাঁত বুনতো এখন তার ১৯ শতাংশই বিলুপ্তির দিকে।

দুর্গম পাহাড়ের বিভিন্ন গ্রামে কিছু এলাকায় এখন কিছুটা তৈরি করে থাকলেও তারা এখন নিজেদের পরার জন্য এসব পোশাক তৈরি করেন। বিক্রি তারা তেমন একটা করে না।

বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের খাগড়াছড়ি জেলার ভারপ্রাপ্ত লিয়াজোঁ অফিসার আবুল খায়ের খন্দকার জানান, পাহাড়ি নারীরা বিশেষ করে শীতকালে কোমর তাঁত বুনে থাকেন। তারা বিক্রয়ের প্রয়োজনে এখন তেমনটা বুনেন না। মেয়েরা শখ করে পড়ে থাকে।

আর নিজেদের প্রয়োজনে সারা বছর তৈরি করতে হয় না, বছরে দুই-তিন বার বুনলেই হয়। নিজেদের প্রয়োজন কম থাকায় তাদের মধ্যেও এক অনীহা ধরে গেছে। তাই দিনদিন সচল তাঁতের সংখ্যা কমছে বলেও জানান তিনি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by