চট্টগ্রাম

খাগড়াছড়িতে জুমের বাম্পার ফলন

  প্রতিনিধি ২ সেপ্টেম্বর ২০২১ , ৬:০৯:৫৩ প্রিন্ট সংস্করণ

মো. ইব্রাহিম শেখ, খাগড়াছড়ি থেকেঃ

খাগড়াছড়ির নয়টি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুরোদমে সকাল থেকে জুমে জুমে ধান কাটছে জুমিয়ারা। ধান কাটা শেষে জুমঘরে তা মাড়াই করছে তারা। পাহাড়ের চূড়ায় পাকা ধান শোভা পাচ্ছে। মৌসুমের শেষ দিকে এমন দৃশ্য জেলার মাটিরাঙ্গার গুমতি এলাকায়। দল বেঁধে ধান কেটে জুম ঘরে তুলছে জুমচাষীরা।

সেসব ধান আবার জুমেই মাড়াই করা হয়।বাতাসে দুলছে সোনালি রঙের পাকা ধানের শীষ। অপরদিকে, ফসল ঘরে তোলার আনন্দে পাহাড়ি পল্লীগুলোতে নবান্ন উৎসবের প্রস্তুতিও চলছে ব্যাপকভাবে। চাষীরা জানান, গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার পাহাড়ে জুমের ফলন ভালো হয়েছে। ধান ছাড়াও জুমে হলুদ, মারফা, আদা, মরিচ, কচু মিষ্টি কুমড়ো, তিল, ভুট্টা, বরবটিসহ প্রায় ৪০ জাতের সবজির চাষাবাদ হয়েছে।

জুমের উৎপাদিত খাদ্যশস্য দিয়ে পরিবারের চাহিদা মিটানোর পাশাপাশি জুমে উৎপাদিত সবজি ও কৃষিপণ্য বিক্রি করে জুমিয়াদের সংসার চলে। জুমের উৎপাদিত ধান দিয়ে ৭-৮ মাস পর্যন্ত খাবারের জোগান পায় জুমিয়ারা।

অনুকূল আবহাওয়া ও নিয়মিত পরিচর্যার কারণে এবার খাগড়াছড়ির জুমে ভালো ফলন হয়েছে। জুমে জুমে এখন চলছে ধান কাটার উৎসব। ধান ছাড়াও বাহারি সবজির চাষ হয়েছে জুমে। জুম চাষের জন্য সার, বীজের পাশাপাশি সরকারিভাবে প্রণোদনা চান জুমিয়ারা।

মাটিরাঙ্গার গোমতি এলাকার জুমচাষি অনন্ত ত্রিপুরা জানান,

বিভিন্ন সবজির সঙ্গে জুমে ধান চাষ করেছি।গতবারের তুলনায় এবার ভালো ফলনও হয়েছে। তবে ভালো করে সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে পারলে ফলন আরও বাড়ত। জুম চাষের ক্ষেত্রে আমাদের বেশ কিছু বাধার মুখোমুখি হতে হয়। এবার প্রথমবারে মতো সমতল ভূমিতে চাষাবাদ উপযোগী ধান জুমে চাষ করেছি। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নেয়ায় ধানের ফলন ভালো হয়েছে।কয়েক মাস নিবিড় পরিচর্যার পর ধানের ভালো ফলন হয়েছে। ধান ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করেছি। এই ধান দিয়ে আমাদের ৭ থেকে৮ মাস চলে যাবে। জুমের হলুদ, আদা, মারফা বিক্রি করে কোনোরকমে আমাদের সংসার চলে।

উন্নতমানের সার ও বীজ প্রয়োগ করলে উৎপাদন আরও বাড়ত বলে জুমচাষীরা জানান। কিন্তু তারা সরকারি কোনো প্রণোদনা পায় না। মাটিরাঙ্গার স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ বকুল জানান, বছরের পর বছর জুমচাষ করলেও সরকারিভাবে সার, বীজ, কীটনাশকসহ কোনো ধরনের প্রণোদনা পায় না জুমচাষীরা। সরকার আমাদের সহযোগিতা করলে জুমের উৎপাদন আরও বাড়ত।

তবে জুমে উৎপাদন বাড়াতে সনাতনী জুমের পরিবর্তে আধুনিক জাতের সবজি ও ধানের জাত বীজ রোপণের পরামর্শ দিয়েছে কৃষি বিভাগ।

এ ব্যাপারে খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. মুর্ত্তুজা আলী জানান,

জুমে উৎপাদিত ফসল এ অঞ্চলের মানুষের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে। কিন্তু আদি পদ্ধতিতে জুম চাষের কারণে পাহাড়ে ক্ষয় সৃষ্টি এবং জমির ঊর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে।

তাই আমরা জুমচাষিদের আধুনিক পদ্ধতিতে জুম চাষের জন্য উৎসাহিত করি। এতে ফসল উৎপাদনের পরিমাণ কয়েকগুণ বাড়বে। খাগড়াছড়িতে চলতি বছর দুই হাজার হেক্টরেরও বেশি পাহাড়ি ভূমি জুমচাষের আওতায় এসেছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by