বরিশাল

চরফ্যাশনে অবৈধ এসিডে তৈরি হচ্ছে অবৈধ ব্যাটারি পানি

  প্রতিনিধি ৩ এপ্রিল ২০২৩ , ৮:০৩:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নিয়াজ মাহমুদ জয়, ভোলা প্রতিনিধি:
ভোলার চরফ্যাশনে একটি বাগানের ভেতর অবৈধ এসিডে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন বেনামী ব্যাটারি পানি। বিক্রি হচ্ছে জেলার বিভিন্ন বাজারগুলোতে। স্থানীয় একটি সূত্রে জানা যায় ওই পানি প্লাস্টিকের জারে ভরে বিভিন্ন নামিদামি ব্রান্ডের নামের আগে ছোট আকারে নাম সংযুক্ত করে সিল লাগিয়ে বাজারজাত করছে। এসব জারের পানি বিভিন্ন যানবাহনের ব্যাটারিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। খনিজ পদার্থযুক্ত এই পানির কারণে দামি গাড়ির ব্যাটারি দ্রুত নষ্ট হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার জিন্নাগর ইউনিয়ন দাসকান্দি গ্রামে ০৬ নং ওয়ার্ডে অবস্থিত কারখানাটি। স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা যায়, এ কারখানার আসল মালিক স্থানীয় সিহাবউদ্দিন ও নূর ইসলাম । তারাই তৈরি করছেন এসব কোম্পানির নামের সাথে যুক্ত করে ব্যাটারি পানি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় ছয় ব্যক্তি বলেন, সিহাবউদ্দিন ও নূর ইসলাম সালফিউরিক নামক এসিড দিয়ে তৈরি করেন ব্যাটারি পানি। প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বছরের পর বছর তৈরি করে যায় এসব পানি। যার দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যাটারি চালিত যানবাহন, তাছাড়া এসিডের মতো পদার্থ বাহিরে রেখে দিয়েছেন যা ক্ষতির কারণ।  তারা আরো বলেন কিছুদিন আগে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয় তার পরে সাময়িক সময় বন্ধ থাকলেও প্রশাসনকে নাকি ম্যানেজ করে পুনরায় তৈরি করা হয় এসব অবৈধ কারখানার পানি। দেখা যায় পানি জারে ভরে বিভিন্ন কোম্পানির সিল মেরে বাজারজাত করছেন।
অবৈধ ব্যাটারি পানি তৈরি কারখানাগুলো সরকারের রাজস্ব কর ফাঁকি দিয়েই চালিয়ে যাচ্ছে এসব অপকর্ম। যেখানে এসব কারখানায় উৎপাদনকৃত পন্যের জন্য প্রয়োজন ফায়ার লাইসেন্স,  এসিড লাইসেন্স, ট্রেড লাইসেন্স, আয়কর, পরিবেশ ছাড়পত্র ইত্যাদি তবে এসবের কিছুই নেই কারখানা মালিকদের কাছে।
এবিষয়ে কথা হয় ভোলা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের সাথে তারা প্রথমে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলতে অনীহা থাকলেও পরবর্তীতে স্বীকার করেন অবৈধ কারখানাগুলোর মালিকদের সাথে তাদের কথা হয়েছে খুব শিগগিরই সকলকে ভ্যাটের আওতায় আনা হবে।
স্থানীয় জিন্নাগর বাজারের দুজন ব্যবসায়ী বলেন, সিহাবউদ্দিন একসময় চট্রগ্রামে একটি দোকানে কাজ করতেন। এখন তিনি কীভাবে যে ব্যাটারির পানির উৎপাদক হলেন তা তাঁদের বোধগম্য না। এখন শাহাবুদ্দিন আর্থিক অবস্থা ভালো।
গত সোমবার দুপুর ১২টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচ লিটার করে পানি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন সাদা রঙের জার সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এক তরুণকে দেখা গেল নলকূপের পানি সরবরাহের নল দিয়ে জারগুলোতে পানি ভরছেন। আরেকজন জারের গায়ে সিল লাগাচ্ছেন। সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে দুজনই কারখানা থেকে দ্রুত চলে যান। যাওয়ার আগে নাম না বলা একজন দাবি করেন, তিনি এখানে মজুরি ভিত্তিতে কাজ করেন দীর্ঘ ৬ বছর।
এরপর মহাসড়কে গিয়ে দেখা যায়, পানিভর্তি জারগুলো বাজারজাত করার জন্য ব্যাটারি চালিত অটোতে তোলা হচ্ছে। ইজিবাইকচালক নিজের নাম প্রকাশ না করে বলেন, তাঁকে পানির জারগুলো জেলার বিভিন্ন বাজারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ভাড়া করা হয়েছে। তিনি সপ্তাহে তিন-চার দিন এখানে এসে পানি নিয়ে যান। শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তাঁর এ বিষয়ে চুক্তি আছে বলে জানান ইজিবাইকচালক।
এদিকে ভোলার দৌলতখান সড়ক মিয়ারহাট বাজার সংলগ্ন পাশেই তৈরি করছে নাজিম নামে ব্যক্তি এমনই অবৈধ পানি। স্থানীয় সূত্রে যানা যায় নাজিম অবৈধ পানি তৈরির দায়ে প্রশাসনের কাছে জবাবদিহি দিয়ে অবৈধ কারখানা বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও স্থান পরিবর্তন করে পুনরায় শুরু করেন অবৈধ কর্মকান্ড। শহরের নতুন বাজারের চৌধুরী অটোহাউসের মালিক বলেন, ব্যাটারিতে সম্পূর্ণ খনিজমুক্ত পানি ব্যবহার করতে হয়। তা না হলে ব্যাটারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহনের ব্যাটারিতে এসব পানি ভরা হয়। খনিজমুক্ত পানি ছাড়া ব্যবহার করলে ব্যাটারি দ্রুত নষ্ট হয়ে যায় তাছাড়া অনেকের অভিযোগ রয়েছে বাজারে বিক্রি করা এসব পানি নিয়ে কিন্তু আসল পানি যারা তৈরি করেন তাদের বাজার নষ্টের মূল হোতা নকল তৈরি করা এসব কারখানা মালিক।
একই বাজারে ইজিবাইক মেরামত ও ব্যাটারি চার্জ করেন রাসেল। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছ থেকে প্রতিটি পুরোনো প্লাস্টিকের জার ১২ টাকা দামে কিনে নেয় লোকজন। কাগজের তৈরি সিল বানাতে খরচ হয় দুই টাকা। পরে এসব জারে পানি ভরে নতুন সিল মেরে বিভিন্ন দোকানে ৪০ টাকা মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে।’
এদিকে গত সোমবার কথা হয় সিহাবউদ্দিন ও নাজিমের সঙ্গে। তাদের ব্যাটারি পানি তৈরির ওয়াটার প্লান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলেন পানি তৈরিতে তাদের এসবের প্রয়োজন হয় না। তারা দাবি করেন, নলকূপের পানি বিশেষ উপায়ে খনিজমুক্ত করে বিক্রি করেন তারা। এভাবে পানি বিক্রি করার জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি রয়েছে তাদের। তবে অনুমতিসংক্রান্ত কাগজপত্র দেখতে চাইলে তাদের কেউ দেখাতে পারেননি।
ভোলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ তোতা মিয়া জানান, কিছুদিন পূর্বে চরফ্যাশন সিহাবউদ্দিন কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু পুনরায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া সে কার্যক্রম চালাচ্ছে আমরা জেনেছি, খুব শিগগিরই তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by