রংপুর

চিলমারীতে নদের তীব্র ভাঙন স্কুল-মসজিদ নদীগর্ভে, হুমকিতে ঘরবাড়ি

  প্রতিনিধি ১ জুন ২০২৩ , ৮:৫৩:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ


মো. ফজলুল হক, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) :

কুড়িগ্রামের চিলমারীতে বর্ষা মৌসুমের আগেই ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে গেল বছর একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মসজিদসহ এ বছরে আড়াই শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে ওই এলাকার আরও তিন শতাধিক বাড়িঘর ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। তবে ভাঙনরোধে কার্যকরি কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি সংশ্লিষ্টরা। এমন চিত্র উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের চরবড়ভিটা ও নয়ারহাট ইউনিয়নের বজরা দিয়ার খাতার। এচরটিতে চিলমারী, থানাহাট, নয়ারহাট ও রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার মানুষ রয়েছেন। নদীর মুখে স্থানীয় একটি মসজিদ ভেঙে সরিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, নদী ভাঙতে ভাঙতে মসজিদের পাশে এসেছে। এখন মসজিদটি ভেঙে ফেলতে বাধ্য হচ্ছি। নদী যখন দূরে ছিল তখন জিও ব্যাগ ফেললে হয়তো ভাঙন কমে যেতো। স্থানীয় বাসিন্দা ও নয়ারহাট ইউনিয়ন আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজার রহমান বলেন, বজরা দিয়ার খাতা ও চরবড়ভিটায় ভাঙনে এক বছরে ২৫০ শ পরিবার গৃহহীন হয়েছে। স্কুল, মসজিদসহ শেষ একমাসে আবারও শতাধিক বাড়িঘর নদীতে চলে গেছে। এই সময়ে জিও ব্যাগ ফেলতে না পারলে এই চর রক্ষা করা যাবে না।
এদিকে গেলো ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পায়নি চর বড়ভিটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। ওই বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক রেজাউল বলেন, গেলো বন্যায় আমাদের স্কুলটি ভেঙে গেছে। পরে আমরা স্থানান্তরিত করে একটু দূরে ফাঁকা জায়গায় নেই। কিন্তু নদীর যে পরিমাণ ভাঙন শুরু হয়েছে আমরা খুব চিন্তিত স্কুলটি কোথায় নিয়ে যাবো। কি করব। দ্রুত ভাঙন রোধ হলে স্কুলটি হুমকির মুখে পড়বে না। ভাঙনের শিকার স্থানীয় একটি যুব ক্লাবের সভাপতি এস এম রানু সরকার বলেন, নদী ভাঙনের কারণে আমাদের ক্লাব ঘর রক্ষা করতে পারিনি। কিন্তু এত ভাঙনের পরও জনপ্রতিনিধিরা ও সংশ্লিষ্টরা কোনো ধরণের ব্যবস্থা নেয়নি। এখন যদি ভাঙন থামানো না যায় তাহলে গোটা চর ভেঙে যাবে। রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের ওই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাহাঙ্গির আলম বলেন, এই বছরেই এক শতাধিক বাড়িঘর নদীতে ভেঙে গেছে। আমার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের তো আর লোক নাই ওখানে বলা যায়। ওখানে নয়ারহাটের কিছু মানুষ আছেন। তারাও ভাঙনের শিকার। এর আগে মন্ত্রী মহোদয়, ইউএনও স্যারকে জানানো হয়েছে। এরপরও কোনো ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এখন যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে এতে ওই চর না থাকার কথা। নয়ারহাট ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথে নদীতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। যে হারে ভাঙন শুরু হয়েছে এতে ২৫০ থেকে তিন শতাধিক পরিবার ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। ভাঙনের শিকার হয়ে অনেকেই এখন স্থান্তরিত হয়ে কাজল ডাঙার চরে আশ্রয় নিয়েছে। এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও কোনো ভূমিকা নেই। তারা আছে বন্যা হলে এসে ব্যাগ ফেলবেন নদীতে। তারাই আর কি করবেন, বরাদ্দ অল্প। আমার ইউনিয়নের বর্তমানে উত্তর খাউরিয়া, খেরুয়ারচর ও দক্ষিণ খাউরিয়ার চর ভাঙন হুমকিতে রয়েছে। সামনে পানি বাড়তে থাকলে এসব এলাকায় ভাঙন শুরু হবে। আর বজরা দিয়ার খাতায় তো ব্যাপক হারে ভাঙন চলছে। একটি প্রাথমিক স্কুল ছিলো সেটিও ভেঙে গেছে। বর্তমানে যেখানে স্থান্তরিত করেছে স্কুলটি। এখন ভাঙন না থামলে ওই জায়গাটিও নদীগর্ভে চলে যাবে।

এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, ভাঙন রোধে যেহেতু পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করেন। বিষয়টি নিয়ে তাদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এই মতো মুহুর্তে চরাঞ্চলে ভাঙন রোধে কোনো ব্যবস্থা নেই। এখানে কাজ করতে গেলে সমীক্ষা করে করতে হবে। ভাঙন রোধে এখন জিও ব্যাগ ফেলানো যাবে, তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে নিতে হবে নদীতে ফেলতে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by