খুলনা

চোখের পানি সম্বল করে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন ভাতাভোগিরা

  প্রতিনিধি ১৯ জুলাই ২০২১ , ৭:৫৭:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

রাসেল মিয়া, মহম্মদপুর (মাগুরা):
৯০ বছর বয়সী স্বামীহারা ইঙ্গুল বড়-য়ার দুই ছেলে। ছেলেরা খাবার না দেয়ায় তাকে প্রতিবেশিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাবার চেয়ে খেতে হয়। এমন অসহায় অবস্থার পর বয়স্ক ভাতার বই পান তিনি। এরপর ঔষধ ও খাবার খরচের জন্য নির্ভশীল হয়ে পড়েন ভাতার টাকার উপর। কিছুদিন ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা তুলতে পারলেও নগদে একাউন্ট খোলার পর আর টাকা তুলতে পারেননি। সমাজসেবা অফিসে এসে ধর্ণা দিয়েও কুলকিনারা করতে না পেরে কান্নাকাটি করে বাড়ি ফিরেছেন খালি হাতে। তারমত আরও ৫০ থেকে ৬০জন ভাতাভোগিকে এভাবেই ফিরতে হচ্ছে প্রতিদিন। এমন ঘটনা মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলায়।
চরপাঁচুড়িয়া গ্রামের ছিয়ারন বেগম নামে এক বয়ষ্ক ভাতাভোগী বলেন, সামনে কোরবানির ঈদ। ছেলেরা খাতি দেয়না। ভাবছিলাম ভাতার টাকা দিয়ে কিছু কিনে খাবানি। কিন্তু টাকা তুলতি পারলাম না। এখন সাহায্য চায়েই খাতি হবি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছিয়ারন বেগমের দেওয়া মোবাইল নাম্বার ছিল ০১৭৪৭২৩৩৭৬৭। কিন্তু তার টাকা চলে গেছে ০১৮৫৩০৯২৯৩৫ নাম্বারে। টাকা চলে যাওয়া ওই নাম্বারে কয়েকদিন ফোন দিলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
সমাজসেবা অফিস থেকে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত প্রায় ২০০ ভাতাভোগির টাকা অজ্ঞাত নাম্বারে চলে গেছে। এছাড়া অনেক ভাগাভোগি আছে তাদের নাম্বার সঠিক থাকলেও তারা এখনও টাকা পাননি।

তারা জানান, সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক বয়ষ্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও অসচ্ছল প্রতিবন্ধীদের ভাতা ব্যাংক অ্যাকাউন্টের পরিবর্তে নগদের মাধ্যমে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই উপজেলায় তার বাস্তবায়ন হয় গত মে মাস থেকে।

জানা যায়, মহম্মদপুর উপজেলায় ২০হাজার ২৮জন ভাতাভোগির মধ্যে  ১১হাজার ৩৮জন পান বয়ষ্ক ভাতা, ৫হাজার ৬৩৩জন পান বিধবা ভাতা ও ৩হাজার ৩৫৭জন পান অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা। বিধবা ও প্রতিবন্ধীরা মাসে ৭৫০টাকা এবং বছরে ৯হাজার টাকা ভাতা পান। বয়স্করা পান মাসে ৫০০টাকা করে বছরে ৬হাজার টাকা।

গত বৃহস্পতি ও রবিবার সরেজমিনে গিয়ে সমাজসেবা অফিসে দেখা যায়, প্রতিদিন টাকা না পাওয়া ৫০/৬০জন অসহায় ভাতাভোগি সকাল থেকে অফিস ঘিরে বসে আছেন। অফিসের কর্মকর্তা অফিসে নেই। অফিসের অন্যান্য রুমগুলো ভিতর থেকে আটকে দেওয়া। নিরুপায় হয়ে কান্নাকাটি করে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন ভাতাভোগিরা।
ওইসময় ইঙ্গুল বড়–য়া নামে এক বৃদ্ধা কেঁদে কেঁদে বলেন, এক বচ্ছর ভাতা পাইনে। ছেলে দুইডে ভ্যান চালায়। খাবার পরবার দিতি পারেনা।  চায়ে চিন্তেই খাওয়া ছাড়া উপায় নাই।
উপজেলা সমাজসেবা অফিসার জয়নুল আবেদীন জানান, মোবাইল নাম্বার দেওয়ার কাজ করেছে নগদ সংশ্লিষ্টরা। তবে যাদের মোবাইল নাম্বার ভূল আছে তাদেরগুলো সংশোধন করে দিচ্ছি।  এছাড়া টাকা না পাওয়া ভাতাভোগিদের তালিকা করে উর্দ্ধতন কৃর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে। আশা করছি এর সমাধান হবে।
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহি অফিসার রামানন্দ পাল বলেন বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ পেয়েছি।  এসকল অভিযোগের বিষয়ে অচিরেই পদক্ষেপ গ্রহণ করে সমস্যার সমাধান করা হবে।

Powered by