আইন-আদালত

জামিন পেলেন ভোরের পাতার সম্পাদক এরতেজা

  প্রতিনিধি ৭ নভেম্বর ২০২২ , ৫:৪০:৩৬ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের পাতার সম্পাদক ড. কাজী এরতেজা

ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ

আদালত থেকে জামিন পেলেন জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসান। আজ সোমবার ঢাকা মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান শুনানি শেষে এই জামিন মঞ্জুর করেন।

গত ১ নভেম্বর রাতে রাজধানীর গুলশান গুলশান-২ এ নিজ অফিস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল। এরপর গত ২ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক মো. মেহেদী হাসান আসামিকে আদালতে হাজির করে দুই দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তার একদিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। রিমান্ড শেষে গত ৪ নভেম্বর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলার অভিযোগে আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্টের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া উল্লেখ করেন, বাদীর কোম্পানি ২০০৫ সাল থেকে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে রয়াল এস্টটের ব্যবসা করে আসছে এবং ডিএমপি দক্ষিণখান থানার অন্তর্গত বিভিন্ন স্থানে ও প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ করার ব্যক্তিদেরকে সুবাদে বাদীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। কাজী শামীম মাহদী তার পরিচিত বিভিন্ন “আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপম্যান্ট” প্রজেক্টে প্লট বুকিংয়ের ব্যবস্থা করে দেয়। ২০১৩ সালের শুরুতে কাজী ক্যাম্পাসের জন্য জমি খুঁজতেছিলেন।

 তিনি আরও জানান, ২০১০ সাল থেকে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাস স্থাপন করার তাগাদা প্রদান করে আসছে। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে একদিন বাদীর অফিসে কাজী শামীম মাহদী আসামি নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহসহ ২/৩ জনকে সঙ্গে নিয়ে আসেন এবং তিনি জানায় যে, তারা নর্দার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছেন এবং আরও জানান যে, কয়েক মাস আগে তিনি যাদের জন্য বাদীর কাছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি চেয়েছিলেন মূলত তারা আজকে জমির বিষয়ে কথা বলতে এসেছেন। বাদীসহ তার বড় ভাই মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া জমি বিক্রির বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান যে, তাদের একটা জমি দরকার।

বাদী তাদেরকে আমাদের ‘আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপম্যান্ট’ প্রকল্প ভিজিট করার জন্য বললে তারা প্রকল্প ভিজিট করবে বলে জানায়। তারা উক্ত ঘটনার ১০/১২ দিন পর আমাদের ডিএমপি দক্ষিণখান এলাকার আশিয়ান সিটির সাইট ভিজিট করে জানায় যে, তাদের সর্বমোট ৫ বিঘা জমি লাগবে এবং তারা দক্ষিণখান মৌজার সাতটি দাগ পছন্দ করেছেন। আলাপ আলোচনার পর বাদী উত্ত জায়গার মূল্য ৫০ কোটি টাকা নির্ধারণ করে এবং গত ২০১৩ সালের ৩ আগস্ট বিকালে খিলক্ষেত থানাধীন আশিয়ান মেডিকেল কলেজ এ অবস্থিত বাদীর বড় ভাই মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়ার ব্যক্তিগত অফিসে দুই পক্ষের সম্মতিতে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে একটি চুক্তি সম্পাদন হয়।

উক্ত চুক্তিপত্রে উল্লেখ আছে যে, জমির দামের সম্পূর্ণ টাকা ওই বছর ৩০ আগস্টের মধ্যেই পরিশোধ করতে হবে। কিন্তু উল্লিখিত সময়ে মোট ৫০ কোটি টাকার মধ্যে চেকে ও নগদে ৩০ কোটি টাকা পরিশোধ করেন এবং অবশিষ্ট ২০ কোটি টাকা বাকি রাখেন। অবশিষ্ট টাকা আসামি কাছে মৌখিকভাবে চাইলে জানায়, আমরা কাজ শুরু করে স্বল্প সময়ের মধ্যেই পরিশোধ করে দেব। বাদী সরল বিশ্বাসে তাদের উক্ত স্থানে কাজ শুরু করার অনুমতি প্রদান করে।

কাজ শুরু করার পর হতে আসামি এরতেজা বিভিন্নভাবে কালক্ষেপণ করতে থাকেন এবং টাকা পরিশোধ না করে বিভিন্ন বাহানা করতে থাকেন। একইভাবে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি প্রদান করেও অপরিশোধিত টাকা পরিশোধ করেন নাই। পরবর্তী সময়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ চলমান থাকা অবস্থায় বাদী জমি বিক্রির পাওনা টাকা আসামি আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহর নিকট চাইলে সে জানান যে, কোনো টাকা তাদের কাছে পাব না। কারণ, বাদীর বড় ভাই মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন এবং তারা উক্ত জমির দাম বাবদ সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেছেন।

পরবর্তী সময়ে বাদী খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, বাদী যে জমি বিক্রি করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল সেই জমিটি ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর রেজিস্ট্রি হয় এবং উক্ত জমির মূল্য ৯কোটি ৩৩ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। বাদী উক্ত দলিলের রেজিস্ট্রি সম্পাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও জানতে পারেন যে, উক্ত দলিলটি কমিশনিং এ রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে এবং উক্ত দলিল সম্পাদনকারী মোহরার হিসেবে বাদীর অফিসের মোহরার মো. শহিদুল ইসলামের নাম রয়েছে।

বাদীর মোহরার মো. শহিদুল ইসলামকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান যে, তিনি এ রকম কোনো দলিল লেখার কাজ করেন নাই। বাদী উক্ত দলিল সম্পর্কে আসামি মো. রিয়াজুল আলম ও সেলিম মুন্সির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান যে, নর্দার্ন কর্তৃপক্ষ টাকা পরিশোধ করেই জমি রেজিস্ট্রি করেছে। বাদীর বিশ্বাস, তার বড় ভাই মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়ার স্বাক্ষর, অফিসের সীল ও মোহরার মো. শহিদুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে আসামি আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে জমির দলিলের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।

জানা যায়, আসিয়ানের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির জমি নিয়ে বিরোধ। রাজধানীর ফার্মগেটে যে ভবনে ভোরের পাতার কার্যালয়, সেখানেই আগে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস ছিল। আসিয়ানের মামলায় নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহকে এর আগে গ্রেপ্তার করেছিল পিবিআই। রিয়াজুল আলম নামে আরেকজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এবং তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাজী এরতেজা হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by