বরিশাল

ঝালকাঠিতে ফোন করলেই ফ্রি অক্সিজেন

  প্রতিনিধি ১৯ জুলাই ২০২১ , ৬:৩৮:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

ঝালকাঠি প্রতিনিধি :
ভয়াবহ করোনার প্রার্দুভাবে যখন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দিচ্ছে, ঠিক সেই সময় ঝালকাঠিতে বিনামূল্যে বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। ফোনে অথবা যেকোনো উপায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের জানাতেই পারলেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হন রোগীর দরজায়।
ধনী, গরিব, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানবিক টানে অক্সিজেন সরবরাহ করতে দিন-রাতের ভেদাভেদ করছে না কখনোই। বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকরা করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচাতে নিরলসভাবে কাজ করছে।
অক্সিজেন সরবরাহের দায়িত্ব পালন করছে রক্তকণিকা ফাউন্ডেশন, স্বপ্নপূরণ সমাজ কল্যাণ সংস্থা, ইয়ুথ একশন সোসাইটি, হৃদয়ে ঝালকাঠি, ঝালকাঠি মিডিয়া ফোরাম, মাওলানা আব্দুল কাদের ফাউন্ডেশন, সিটি ক্লাব, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, দুরন্ত ফাউন্ডেশন, দুস্থ কল্যাণ সংস্থা, শামসুন্নাহার ফাউন্ডেশন, মানবকল্যাণ স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন, মানুষ মানুষের জন্য, অক্সিজেন রেসপনস টিম, কানেকটিং পিপল, দিগন্ত সমাজ কল্যাণ সংগঠন ও ফাতেমা আলী ফাউন্ডেশনসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।
সংগঠনগুলো এখন পর্যন্ত তিন শতাধিক মুমূর্ষু রোগীকে অক্সিজেন সেবা দিয়েছে। গভীর রাতেও অক্সিজেন নিয়ে রোগীর বাড়িতে যাচ্ছেন এসব সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবকেরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের ফোন নম্বর ছড়িয়ে দিচ্ছেন তারা। রোগীর পরিবার সেই নম্বরে ফোন করে সাহায্যের আবেদন করলে পৌঁছে যাচ্ছে অক্সিজেন। ফোন করার সঙ্গে সঙ্গে বিনামূল্যে অক্সিজেন পেয়ে খুশি রোগী ও স্বজনেরা।
 ঝালকাঠির স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্বপ্নপূরণ’ সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি এইচ এম রিয়াজ খান জানান, কয়েকদিন আগে রাত পৌনে ১২টার দিকে ফোনে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান জানান, তার মায়ের খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ কথা জেনেই সংগঠনের এক সদস্যকে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে শহর থেকে ৮ মাইল দূরে ভৈরবপাশা গ্রামে মেহেদী হাসানের বাড়িতে ছুটে যান। কিন্তু অক্সিজেন দেওয়ার ৭ মিনিটের মধ্যে মেহেদীর মা মারা যান।
প্রতিদিন অক্সিজেনের জন্য ২০ থেকে ৩০টি ফোন আসে। যেখানে রোগীর অবস্থা বেশি খারাপ মনে হয়, সেখানেই অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে যেতে হয়।
ঝালকাঠি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মকবুল হোসেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। ঢাকা থেকে তার ছেলে ব্যবসায়ী মো. ফরিদুজ্জামান মিডিয়া ফোরামের সভাপতি মনির হোসেনকে বিষয়টি জানান। সংগঠনটির সদস্যরা শিক্ষক মকবুল হোসেনের শহরের চাঁদকাঠির বাড়িতে অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে হাজির হন। তাকে দুদিন অক্সিজেন দেওয়ার পরে তিনি এখন সুস্থ। এতে খুশি হয়ে শিক্ষকপুত্র ফরিদুজ্জামান মিডিয়া ফোরামকে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে দিয়েছেন। চারটি সিলিন্ডার সব সময় রোগীদের বাড়িতে থাকে বলে জানালেন মিডিয়া ফোরামের সভাপতি মনির হোসেন।
 ইয়ুথ অ্যাকশন সোসাইটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাব্বির হোসেন রানা বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত ৮টি সিলিন্ডারের মাধ্যমে ৫০ জন রোগীকে সেবা দিয়েছি। সমাজের অনেক বিত্তশালী আমাদের অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে দিয়েছেন। অনেকে সুস্থ হয়েছেন। দুজন মৃত্যুবরণ করেছেন।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আবুয়াল হাসান বলেন, শ্বাসকষ্টে ভোগা কোভিড রোগীদের বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো মানবিক কাজ করে যাচ্ছে। এতে হাসপাতালের ওপর চাপ কমছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by