খুলনা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কুষ্টিয়ার দুই সাংবাদিক কারাগারে

  প্রতিনিধি ১ জুলাই ২০২১ , ৫:২৩:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

গ্রেপ্তার দুই সাংবাদিক

ভোরের দর্পণ ডেস্কঃ

কুষ্টিয়ায় নির্মাণাধীন মেডিকেল কলেজ প্রকল্প সংক্রান্ত আইএমইডি’র তদন্ত রিপোর্টের সূত্র ধরে করা নিউজের জেরে যুবলীগ নেতার দায়ের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় দুই সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

 

দুই সাংবাদিক হলেন- ‘ভয়েজ অব কুষ্টিয়া’ নামের স্থানীয় একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের প্রকাশক ও সম্পাদক মুন্সী শাহীন আহমেদ জুয়েল এবং বার্তা সম্পাদক অঞ্জন কুমার শীল শুভ।

বুধবার ভোররাতে তাদের নিজ বাসা থেকে নিয়ে যায় গোয়েন্দা পুলিশের একটি টিম। পরে বিকেলে তাদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সৌপর্দ করে পুলিশ। পরে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বলে নিশ্চিত করেন কোর্ট পুলিশের পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ও মামলা বাদী মিজানুর রহমান এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ২৮ জুন ‘ভয়েজ অব কুষ্টিয়া’ নামে সরকারের অনুমোদনহীন একটি নিউজ পোর্টাল সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে বাধাগ্রস্ত ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে ‘কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রডের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠ ব্যবহার’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, উক্ত মিথ্যা খবরের শেষাংশে উল্লেখ করা হয়েছে- ‘কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে একটি ভবন নির্মাণে রডের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠ ব্যবহারের কথাও উঠে আসে প্রতিবেদনে। ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি ভবনের একটি অংশ ধ্বসে পড়ে এতে ১ শ্রমিক নিহত ও ১০ শ্রমিক আহত হন। মেডিকেল কলেজের নির্মাণ শেষ হওয়া কোনো অংশ ধ্বসে পড়েনি। নির্মাণকাজ চলাবস্থায় দুর্ঘটনায় শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।’

এজাহারে এমনটি দাবি করে মিথ্যা, বানোয়াট ও হীন উদ্দেশ্যমূলক সংবাদ প্রকাশের অভিযোগ এনেছে এজাহারকারী। মামলাটিতে দুইজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

গ্রেপ্তার অঞ্জন কুমার শীল শুভর স্ত্রী স্মৃতি রানী শীলের অভিযোগ, গত ১১ জুন গভীর রাতে এক নারীর ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ২১ জুন কুষ্টিয়া মডেল থানায় হত্যার উদ্দেশ্যে হামলার অভিযোগে মামলা করেন আহত ওই নারীর মা। এই ঘটনার নিউজ প্রকাশ হয়েছিলো ভয়েস অব কুষ্টিয়ায়। ওই মামলায় এজাহারে মিজানুর রহমান মিজুর নাম ছিল। ওই সংবাদের প্রতিশোধ নিতেই আমার স্বামীর বিরুদ্ধে এই বানোয়াট অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলা করে হয়রানি করছে।

শাহীন আহমেদ জুয়েলের স্ত্রী সেলিনা আক্তার জানান, বুধবার ভোররাতে ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমাদের থানাপাড়াস্থ বাসা তেকে জুয়েলকে তুলে নিয়ে যায়। পুলিশ আমাকে জানায়, জুয়েলের সাথে আমরা একটু কথা বলতে চাই। কিছু তথ্য জানা দরকার, সে জন্য নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু বিকেলে শুনি জুয়েলের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দেখুন, কুষ্টিয়া মেডিকেলের অনিয়মের বিষয়ে সারা কুষ্টিয়াবাসী জানে, আপনারাও জানেন। তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে তদন্তেও প্রমাণ পেয়েছে অনিয়মের কথা। সরকারের তদন্ত রিপোর্ট ধরিই ভয়েস অব কুষ্টিয়া অনলাইন পত্রিকায় নিউজ হয়েছে। মামলা যদি করতেই হয়, সরকারের ওই তদন্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে করুক। এটা হয়রানি করার জন্য মামলা করেছে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাব্বিরুল আলম বলেন, পূর্বের কোনো সংবাদ প্রকাশের সাথে এই মামলার সম্পর্ক নেই। কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজে রডের পরিবর্তে বাঁশ ও কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে বলে একটি সংবাদ প্রকাশ করে তারা ফেসবুকে ভাইরাল করেছে। এ ঘটনায় দুইজনের নামে তথ্যপ্রযুক্তি নিরাপত্তা আইনে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। তদন্তে সবকিছু বেড়িয়ে আসবে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by