রংপুর

ডোমার ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারে আউশের বাম্পার ফলন

  প্রতিনিধি ১ অক্টোবর ২০২২ , ৮:২৪:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ

রবিউল হক রতন, ডোমার (নীলফামারী) : নীলফামারীর ডোমার উপজেলার সোনারায় ইউনিয়নে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের বিএডিসি ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারের ২৪০ একর জমিতে আউশ ধানবীজ আবাদে বাম্পার ফলনে এলাকাজুড়ে চমক সৃষ্টি হয়েছে। আলুর পাশাপাশি এখানে আউশ ধানের বীজও উৎপাদন করা হচ্ছে। চলতি আউশ মৌসুমে ২৪০ একর জমিতে আউশ ধান বপন করে ৩৫০ মে.টন আউশ ধানবীজ উৎপাদনের আশা করছেন বিএডিসি কর্মকর্তারা। পাশাপাশি অধানবীজ পাওয়া যাবে প্রায় ৭০ মে.টন, যার বাজার মূল্য ২ কোটি টাকার উপর।

বিএডিসির সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতি বছর আলু আবাদের পর সীমিত পরিসরে গম এবং কিছু জমিতে ধইঞ্চা চাষের পরেও বেশির ভাগ জমি পতিত পড়ে থাকতো। ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদনের জন্য ৬৫০ একর জমিতে এ বিশেষায়িত খামার গড়ে তোলা হয়েছে। এবারে ২৪০ একর জমিতে আউশের ভিত্তি বীজ উৎপাদনের লক্ষে বিনা-২১ ব্রি-৪৮ এবং ব্রি-৯৮ ধানের আবাদ করা হয়, এছাড়াও আমন আবাদ করা হয়েছে ৫৩ একর জমিতে। গতকাল ডোমার ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খামারের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পাকা সোনালী ধানের মাঠ। কোথাও কোথাও আবার ধান কেটে জমিতে হালচাল দেয়া হয়েছে।

এবিষয়ে কথা হয় কৃষি শ্রমিক আলামিনের সাথে। তিনি বলেন, আমাদের অভাব অনটনের সংসার বিভিন্ন সময়ে আমাদের বাইরে কাজ খুঁজতে হতো বর্তমানে খামারে আউশ ধান চাষ করায় এখানে কাজ করতে পারছি। এর আগে তো শুধু আলু লাগানোর সময় কাজ হতো আর এখন এই খামারে ১২ মাস কাজ করতে পারছি। বিএডিসির সহকারী পরিচালক সাজু মিয়া বলেন, বর্তমানে আমরা যে আউশ ধান বপন করেছি এই ধান বপনের ১৫৫ দিনের মধ্যে ফসল উঠাতে পারবো। খরা সহিষ্ণু হওয়ায় বৃষ্টির পানি ছাড়া সেচের পানির তেমন প্রয়োজন হয় না। আগাছা কম হয়, আবার কোন কোন জাতের ধান রয়েছে তারা নিজেরাই আগাছা দমনের যোগ্যতা রাখে। এই ধান বিঘা প্রতি প্রায় ১৮ মণ উৎপাদিত হয়। আবার উঁচু জমিতে আউশের পর আগাম সবজির চাষ করা যায়।

বিএডিসি খামারের আরেক সহকারী পরিচালক সুব্রত মজুমদার জানিয়েছেন, আউশ ধান কাটার পর এই জমিতে আগাম আলু লাগানো যাবে, আগাম আলু লাগানোর জন্য পতিত জমি রাখতে হবে না। খামারে আগে ২টি ফসল হতো একটি আলু অপরটি হচ্ছে গম। আর এখন আউশ ধানবীজ আবাদ শুরু হওয়ায় বছরে ৩টি ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। এরমধ্যে কিছু জমিতে সবুজ সারের জন্য ধঞ্চে চাষ করা হয়, তাতে করে জমির উর্বরা শক্তি বৃদ্ধি পাবে আগাছা কম হবে, ব্যাকটেরিয়া জাতীয় রোগ বালাই কম হয় এবং আউশ ধান আবাদে সেচ কম লাগার পাশাপাশি ফলনও ভালো পাওয়া যায়।

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন বিএডিসির উপ-পরিচালক আবু তালেব মিয়া জানিয়েছেন, প্রতি বছর জেলায় আউশ ধানের আবাদ কমছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রমতে প্রতি বছর জেলায় ১হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে। ২০২১ সালে ১ হাজার ৬৯৫ হেক্টর এবং ২০২০ সালে হয়েছিল ১ হাজার ৭৪৫ হেক্টর জমিতে।

তিনি আরও বলেন, খামারে একনাগাড়ে আলুবীজ চাষ করায় রোগব্যাধি বাড়ছে আউশ ধান আবাদের পর আলু চাষ করলে ব্যাকটেরিয়া জাতীয় রোগ-বালাই কমবে। এলাকায় আউশধান বীজ উৎপাদনে বীজ সংকট বাড়বে। তিনি আশাবাদী ২৪০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩৫০ মে.টন আউশ ধানবীজ উৎপাদন হবে এবং অধান বীজ উৎপাদন হবে আরও ৭০ মে.টন। প্রতি টন ধানবীজের মূল্য ৫০ হাজার টাকা। এই খামারে আউশ ধান আবাদে অধানবীজ বিক্রি হবে প্রায় দুই কোটির উপরে। এছাড়াও এলাকায় প্রতিদিন ২ থেকে ৩ শত শ্রমিকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by