দেশজুড়ে

দালান বাড়ি বানানো লাগবে না, বাপজান বাড়ি ফিরে আয়

  প্রতিনিধি ৩০ মে ২০২০ , ৪:৩৬:৩১ প্রিন্ট সংস্করণ

উত্তম ঘোষ, যশোর : লিবিয়ায় উপার্জনের টাকা পাঠিয়ে মা-বাবাকে দালান বাড়ি (বিল্ডিং) বানিয়ে দেওয়া এবং সংসারে সচ্ছলতা ফেরানোর আশা দিয়েছিলেন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার খাটবাড়িয়া গ্রামের তরুণ রাকিবুল ইসলাম রাকিব (২০)। যশোর সরকারি সিটি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে দালালদের প্রলোভনে বাবার জমিজমা বিক্রি আর গচ্ছিত টাকায় চারমাস আগে লিবিয়া পৌঁছালেও সে দেশের মানব পাচারকারীদের গুলিতে নির্মমভাবে খুন হয় রাকিব। শুক্রবার (২৯ মে) রাতে রাকিবের মৃত্যু সংবাদ তার বাড়িতে পৌঁছালে স্বজনদের আত্মনাদে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

শনিবার নিহত রাকিবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছেলেকে হারিয়ে মা মাহেরুন নেছা বিলাপ করে বলছেন, 'আমাগের ছাঁদ দেওয়া বাড়ি লাগবে না, টাকা-পয়সাও লাগবে না, বাজান তুই বাড়ি ফিরে আয় ….. সাংবাদিকসহ উপস্থিত সকলের হাত ধরে আর্তনাদ করে বলছেন, আমার সোনার কিছু হইনি ওরে আমার কাছে আনি দেন’ এমন আবেগঘন অসংখ্য বিলাপ।

আদরের ছোট ছেলেকে হারিয়ে হতবিহব্বল বাবা ইসরাইল হোসেন ও মা মাহেনুর নেছা। ছেলেকে দেখার আকাঙ্খায় তাদের আহাজারি যেন কিছুতেই থামছে না। এলাকার শত শত নারী পুরুষ ছুটে এসেছেন তাদের সান্তানা দেয়ার জন্য, কিন্তু এ দৃশ্য দেখে কেউ শান্তনার ভাষা হারিয়ে ফেলছেন। চার ভাইবোনের মধ্যে রাকিবুল সবার ছোট। যে কারণে তাঁর মৃত্যুর খবরে মা-বাবা, ভাই-বোন মুষড়ে পড়েছেন। তাঁদের বাড়িতে এখন শোকের মাতম চলছে।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দালালের মাধ্যমে সাড়ে চার লাখ টাকায় রাকিবুল লিবিয়ায় পৌঁছায়। কিন্তু দালাল চক্র লিবিয়ার একটি শহরে রাকিবকে আটকে রেখে নির্যাতন শুরু করে। গত ১৭ মে লিবিয়ার ওই চক্রটি পরিবারের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে মুঠোফোনে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। জিম্মিকারীরা ওই টাকা দুবাই থেকে নিতে চেয়েছিলো। বাধ্য হয়ে মুক্তির জন্য ওই টাকা দিতে রাজিও হয়েছিলেন তারা। আগামী ১ জুন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু এরই মধ্যে নিহত রাকিবুলের লিবিয়া প্রবাসী চাচাতো ভাই ফোন করে জানিয়েছেন, যে ২৬ বাংলাদেশিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তার মধ্যে রাকিবুলও রয়েছেন।

গৃহযুদ্ধকবলিত দেশ লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদা শহরে বৃহস্পতিবার ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসীকে খুন করা হয়। তাদেরই একজন এই রাকিবুল।রাকিবুলের বাবা ইসরাইল হোসেন বলেন, রাকিবুলের চাচাতো ভাই ফিরোজ লিবিয়া প্রবাসী। চার মাস আগে ফিরোজ লিবিয়ায় থাকা এক বাংলাদেশি দালাল  আব্দুল্লাহ সঙ্গে যোগাযোগ করে সাড়ে চার লাখ টাকার বিনিময়ে রাকিবুলকে লিবিয়ায় নিয়ে যান।

লিবিয়ায় অবস্থানরত বাংলাদেশী দালাল আব্দুল্লাহর মাধ্যমে প্রথমে ভারত থেকে দুবাই তারপর মিশর হয়ে  রাকিবুলকে লিবিয়ার ত্রিপুরায় পৌছে যায়। এরপরে লিবিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় মিজদা শহরে নিয়ে রাকিবুলকে জিম্মি করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। একপর্যায়ে টাকা দিতে রাজি হওয়া শর্তেও মানব পাচারকারীদদের গুলিতে নিহত ২৬ বাংলাদেশির মধ্যেও রাকিব নিহত হয়।

তিনি আরো বলেন, বিভিন্ন এনজিও ভিটেবাড়ি বিক্রি করেও রাকিবের মুক্তপণের টাকা জোগাড় করা হয়েছিলো। আগামী ১ জুন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে পাচারকারীদের গুলিতে নিহত হয়। সরকারের কাছে তাদের দাবি দ্রুত আইনিপ্রক্রিয়া শেষে সন্তানের মরাদেহ বাড়িতে আনতে চাই।

রাকিবুলের মা মাহেরুন নেছা বলেন, মুক্তিপণের দাবিতে রাকিবুলকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করতো। মুক্তপণের টাকা জোগাড় করাও হয়েছিলো। আমার ছেলেকে হত্যা করেছে এর বিচার চাই। আমার ছেলের মৃতদেহ যেন দ্রুত দেশে এনে গ্রামেই কবর দিতে পারি। জীবিত ছেলেকে তো আর দেখতে পাবো না ! ছেলের কবর দেখেই শান্তনা নিবো।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by