রংপুর

দিনাজপুরে পতিত জমি ও ক্ষেতের আইলে সুপারি চাষ কৃষকের বাড়তি আয়

  প্রতিনিধি ৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৯:১৫:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ

দিনাজপুর প্রতিনিধি :

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় বসতবাড়ির পতিত জমি ও ক্ষেতের আইলে সুপারি চাষ করে বাড়তি আয় করছেন কৃষকেরা। ফলে বাণিজ্যিকভাবে সুপারি চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের অতিপরিচিত মুখরোচক ও স্বাদ পরিবর্তক একটি ফলের নাম হলো ‘সুপারি’। সুপারিতে প্রচুর পরিমাণে ওষুধি গুণসহ কিছু ক্ষতিকর পদার্থ রয়েছে। কেউ অভ্যাসের বশে কিংবা শখ করে কখনও সুপারি মুখে দেয়নি এমন লোকের সংখ্যা নেহাতই কম। বরং পথের লোক থেকে শুরু করে  মধ্যবিত্ত অথবা উচ্চবিত্তরা নানা সময়ে নানা উপলক্ষ্যে পান সুপারি খেয়ে থাকেন। তাই গ্রাম-গঞ্জ ও শহরের ছোট বড় হোটেল সংলগ্ন, শপিং মলের পাশে, অলি-গলি এবং রাস্তার মোড়ে পান সুপারির দোকান গড়ে উঠেছে। সুপারি বিক্রি করে অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হওয়া ছাড়াও এসব গাছের শক্ত অংশ দিয়ে গ্রামাঞ্চলের বাড়িতে বসার মাচা (টং) এবং চালের বাতা করা যায়। এটি লাভজনক ফল হিসেবে উত্তরাঞ্চলের মানুষ নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি এখন বসতবাড়ির আশপাশের পতিত জমি, পুকুরপাড় এবং ফসলক্ষেতের আইলে বাণিজ্যিক ভাবে সুপারি চাষ করছে।
এমনই কিছু দৃশ্য চোখে পরে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রামে। এরমধ্যে আলোকডিহি ইউনিয়নের কেষ্টহরী, অমরপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর, সাতনালা ইউনিয়নের খামার সাতনালা, নশরতপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ নশরতপুর, তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের গোন্দলগ্রাম, কুশলপুর, সিংগানগর এবং ফতেজংপুর ইউনিয়নের উত্তর পলাশবাড়ী ও ফকিরপাড়া এলাকায় বাণিজ্যিক সুপারি বাগান রয়েছে।
সুপারি চাষি পিযুষ সরকার বলেন, আমার বাগানে গাছে বয়স প্রায় ১০ বছর। আমি কিছু গাছসহ জমিটা কিনেছি। আগের গাছ ছিল প্রায় ১৫০টি মত। পরে বাকী গাছগুলো আমি লাগাইছি। সব মিলে এখন প্রায় ২৫০টি গাছ আছে। গত মৌসুমে প্রায় এক ৮০ হাজার টাকার সুপারি বিক্রি করেছিলাম। এবার আবহাওয়ার কারণে ফলন কম একটু হয়েছে। এখন পর্যন্ত সুপারি পরিপূর্ণ হয়নি। বাজার থাকলে এবারও ভালো দাম পাব আশা রাখি। সিংগানগড় বইরাগী পাড়ার চিত্তরঞ্জন বলেন, আমার বাড়ির আশপাশসহ, পুকুরপাড় এবং ক্ষেতের আইল মিলে প্রায় ১৫ শতক জমিতে ২০০ টি গাছ আছে। গাছগুলোর বয়স প্রায় ২০-২২ বছর। গত মৌসুমে প্রায় ৪৫ হাজার টাকার সুপারি বিক্রি করেছি। ষাটোর্র্ধ্ব আতাবদ্দিন জানান, আমার মুখের দাঁত পান খাওয়ার কারণে নষ্ট হয়ে গেছে। নাস্তা বা ভাত খাওয়ার পর পান না খেলে আমার শান্তি হয়না। তাই পান এখন বাটনায় পিশে খাই।
সুপারির ওষুধি গুণাগুণ সম্পর্কে স্থানীয় আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক কমল রায় জানান, কাঁচা সুপারির রস খেলে ক্রিমি, রক্ত আমাশা, অজীর্ণ রোগ দূর হয়। শুকনা সুপারি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। সুপারি ভেজে গুড়ো করে দাঁত মাজলে ব্যথা এবং পায়রিয়া রোগ সেরে যায়। তবে কাঁচা সুপারি বেশি পরিমাণে খেলে মুখের ক্যান্সার হতে পারে। কারণ কাঁচা সুপারিতে অ্যালকালয়েড থাকে। চিরিরবন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জোহরা সুলতানা জানান, সুপারি হলো পরিবেশবান্ধব গাছ। বাড়ির আশপাশের পতিত জমি এবং পুকুর পাড়ে সুপারি গাছ লাগিয়ে বাড়তি আয় করা সম্ভব। এতে পতিত জমির সর্বত্তোম ব্যবহার হয়, অর্থও আসে। আর সুপারি গাছের সাথে পানসহ লতা জাতীয় শাক-সবজি চাষ করা যায়।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by