বাংলাদেশ

দুদক কর্মকর্তা শরীফকে চাকরিচ্যুত করার প্রতিবাদে সহকর্মীদের মানববন্ধন

  প্রতিনিধি ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ , ৫:২৮:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:
বদলির পর হঠাৎ করে শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুত করা নিয়ে দুদকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। শরীফ উদ্দিনকে চাকরিচ্যুতির প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করেছেন তার সহকর্মীরা। তারা বলছেন, শরীফ উদ্দিন সৎ ও সাহসী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত ছিলেন। আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তাকে চাকরি থেকে অপসারণ প্রকারান্তরে দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা করার সমর্থক।
মানববন্ধনের আগে দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেনের একটি স্মারকলিপি পেশ করেন তারা।
স্মারকলিপিতে তারা বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মচারী হিসেবে দুর্নীত দমন কমিশনের ভিশন-মিশন বাস্তবায়নের জন্য দুর্নীতিবাজ নির্বিশেষে আইনের আওতায় আনার জন্য কাজ করি। যার নজির রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন ও তার প্রেক্ষিতে বিচার চলমান রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (কর্মচারী) চাকরি বিধিমালা, ২০০৮ এর ৫৪(২) নং বিধিতে বলা হয়েছে- “এই বিধিমালায় ভিন্নরূপ যাহা কিছুই থাকুক না কেন, উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কোন কারণ না দর্শাইয়া কোন কর্মচারীকে নব্বই দিনের নোটিশ প্রদান করিয়া অথবা নব্বই দিনের বেতন পরিশোধ করিয়া তাহাকে চাকরি হইতে অপসারণ করিতে পারিবে।”
অন্যদিকে বাংলাদেশের মহান সংবিধানের ১৩৫(২) নং অনুচ্ছেদে লেখা আছে- “অনুরূপ পদে (প্রজাতন্ত্রের অসামরিক পদে) নিযুক্ত কোন ব্যক্তিকে তাহার সম্পর্কে প্রস্তাবিত কোন ব্যবস্থা গ্রহণের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাইবার যুক্তিসঙ্গত সুযোগ দান না করা পর্যন্ত তাহাকে বরখাস্ত, অপসারিত বা পদাবনমিত করা যাইবে না”।
দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মচারী (চাকরি) বিধিমালা, ২০০৮ এর ৫৪ বিধিটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন নং ১৪২৪/২০১১ দায়ের করা হলে বছরের ১৭ অক্টোবর হাইকোর্ট বিভাগ দুদক চাকরি বিধিমালার ৫৪ বিধিকে অসাংবিধানিক (ultravirus) হিসেবে ঘোষণা করে। উক্ত রায়ের বিপক্ষে আপিল দায়ের করলে আপিল আদালত গত বছরের ১০ অক্টোবর আপিল খারিজ করে হাইকোর্ট বিভাগের “৫৪ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণাটি বহাল রাখে। অর্থাৎ, ৫৪ বিধি অনুযায়ী দুদকের কোন কর্মচারীকে সংবিধানের ২৭/২৯/২১ ও ৪০ অনুচ্ছেদবলে প্রদত্ত মৌলিক অধিকার “আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হিসেবে ব্যাখ্যা প্রদানের সুযোগ না দিয়ে কাউকে ৯০ দিনের বেতন দিয়ে স্থায়ী রাজস্ব খাতভুক্ত চাকরি থেকে অপসারণের অবকাশ ছিলো না। কিন্তু কমিশন আপিল বিভাগের উক্ত সিদ্ধান্তের বিপরীতে ৩২/২০১৭ সিভিল রিভিশন দায়ের করলে একতরফা (রিটকারীর প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতে) শুনানি করে গত বছরের ২৮ নভেম্বর হাইকোর্টের আদেশটি স্থগিত করে এবং বিষয়টি বিজ্ঞ উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন চাকরি বিধিমালা ২০০৮ এর ৫৪ বিধির কার্যকারিতার বিষয়টি উক্ত আদালতে বিচারাধীন থাকাবস্থায় দুদকে ২০১৪ সালে যোগদানকৃত একজন কর্মকর্তাকে কোনরূপ আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে এবং সে কোনরূপ অপরাধ করেছে কি-না সে বিষয়টি তাকে অবহিত না করে গতকাল (১৬ ফেব্রুয়ারি) স্মারক নং: ৭৪৯০ মূলে ৫৪(২) বিধি প্রয়োগের মাধ্যমে উপসহকারী পরিচালক মো. শরিফ উদ্দীনকে চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়, যা অসাংবিধানিক, বে-আইনি ও সাধারণ আইনের আওতায় মানবাধিকার পরিপন্থী।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়, মো. শরিফ উদ্দীন চট্টগ্রামে দক্ষ ও পরিশ্রমি কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি চট্টগ্রাম অফিসে কর্মরত অবস্থায় ৫২টি মামলা দায়ের করেন। এছাড়া তিনি বিজ্ঞ আদালতের বিচারার্থে ১৫টি চার্জশিট দাখিল করেন। তিনি কক্সবাজারে ভূমি অধিগ্রহণের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনা উদঘাটনসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান ও তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। শরীফ উদ্দিনের দুর্নীতিবিরোধী অবস্থানের কারণে সংক্ষুব্ধ পক্ষসমূহ বিভিন্ন সময়ে তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। ৫৪(২) বিধি প্রয়োগের মাধ্যমে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে তাকে চাকরি হতে অপসারণ প্রকারন্তরে দুর্নীতিবাজদের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করার সমার্থক।
এমতাবস্থায়, মো. শরিফ উদ্দীন, উপসহকারী পরিচালক, দুর্নীতি দমন কমিশন এর অসাংবিধানিক ও অমানবিক অপসারণ আদেশ প্রত্যাহার ও দুর্নীতি দমন কমিশন কর্মচারী (চাকুরী) বিধিমালা, ২০০৮ এর ৫৪(২) বিধি বাতিলপূর্বক কমিশনের কর্মকর্তাদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের অনুরোধ জানাচ্ছি।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by