ঘটনাবলি

নরসুন্দরকে নারী চিকিৎসকের বিয়ে, চটেছেন এসপি মিলু!

  প্রতিনিধি ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ , ১১:৫৫:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

ভোরের দর্পণ ডেস্ক:

বাড়ি থেকে পালিয়ে নরসুন্দরকে বিয়ে করা এক নারী চিকিৎসক সম্পর্কে মন্তব্য করে তোলপাড় সৃষ্টি করেছেন রংপুর জেলা সিআইডির এসপি মিলু মিয়া বিশ্বাস। ২১ মাস আগে বাড়ির পাশে সেলুনের দোকানের এক কর্মচারীর সঙ্গে চলে যাওয়া গাইনি চিকিৎসককে গত ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে উদ্ধার করে সিআইডি। পরদিন ২২ ডিসেম্বর সংস্থাটির রংপুর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকে ব্রিফ করেন এসপি মিলু মিয়া বিশ্বাস।

এ সময় তিনি ডাক্তার সম্পর্কে বলেন, নিচু শ্রেণির একজন নরসুন্দরকে পালিয়ে বিয়ে করে শুধু পরিবারকে ছোট করেননি পুরো চিকিৎসক সমাজকে লজ্জায় ফেলেছেন তিনি। স্বাধীনতা আছে বলেই, যা খুশি করতে পারেন না।

অপহরণ মামলার আসামি হিসাবে নরসুন্দর রফিকুল ইসলাম বাপ্পীকে গ্রেফতার দেখিয়ে সেদিন পেছনে হাত মুড়ে হ্যান্ডকাপ পড়ানো অবস্থায় উপস্থাপর করা হয়। উপস্থাপন করা হয় ওই নারীর বর্তমান ও আগের সংসারের দুই শিশু সন্তানকেও।

আদালতে তোলার আগে এভাবে গণমাধ্যমের সামনে তাদের উপস্থাপনের মাধ্যমে দায়িত্বশীল এ কর্মকর্তা ‘মিডিয়া ট্রায়েল’ সম্পন্ন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রেস বিফ্রিংয়ে মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে এসপি মিলু মিয়া জানান, গত বছরের মার্চ মাসে গাইনি চিকিৎসক অপহৃত হয়েছেন-মর্মে নগরীর কোতোয়ালি থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন তার বাবা। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, আলমনগর কলোনির নরসুন্দর বাপ্পী তার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় দীর্ঘদিন পুলিশ চেষ্টা করেও অপহৃত ডাক্তার মিতুকে উদ্ধার করতে পারেনি। পরে মামলাটি সিআইডিতে দেওয়া হয়।

সিআইডির তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক ইউনুছ দীর্ঘদিন অনুসন্ধান চালিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার চাঁনমিয়া হাউজিংয়ের একটি বাসা থেকে ওই চিকিৎসককে উদ্ধার করেন। সেই সঙ্গে অপহরণকারী বাপ্পীকে আটক করেন।

মিলু মিয়া জানান, ওই নারী তার আগের স্বামীকে তালাক দিয়ে বাপ্পীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তার আগের স্বামীর ঘরে একটি ছেলেসন্তান এবং বাপ্পীর ঘরে একটি সন্তান রয়েছে। তারা অনেক দিন আগেই বিয়ে করে সংসার করে আসছিলেন।

৮-৯ বছর ধরে বাপ্পীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ওই নারীর। তারা আগেও একবার পালিয়ে গিয়েছিলেন উল্লেখ করে এসপি মিলু মিয়া জানান, ওইসময় অনেক বুঝিয়ে তাকে বাড়িতে আনা হলেও আবার তারা পালিয়ে যান। বাপ্পী পেশায় নরসুন্দর হলেও তিনি ওই নারী চিকিৎসকের বাবার ব্যবসায় ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করতেন।

তারা পালিয়ে গিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে বসবাস শুরু করেন। সেখানে চেম্বার দিয়ে রোগী দেখতেন ওই নারী। তিনি যা রোজগার করতেন তাই দিয়ে বাসাভাড়াসহ তাদের সংসার চলত বলে জানান এসপি মিলু বিশ্বাস।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ওই নারী চিকিৎসক গণমাধ্যমকর্মীদের জানান, বাপ্পীর সঙ্গে ২১ মাসের বিবাহিত জীবনে তাদের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। তারা সুখেই আছেন। তাকে অপহরণ করা হয়নি। তিনি স্বেচ্ছায় বাপ্পীর সঙ্গে পালিয়ে গেছেন। তার বাবা তাদের নামে মিথ্যা মামলা করেছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

২২ ডিসেম্বর তাদের আদালতে তোলে সিআইডি। আদালতে উপস্থাপনের পরপরই ওই নারী জানান, তিনি স্বামী–সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করছেন, অপহরণের শিকার হননি। আদালত তার এ বক্তব্যের পরপরই তাকে নিজ জিম্মায় ছেড়ে দেন। তার স্বামী এখনো অপহরণ মামলায় কারাগারে।

প্রাপ্তবয়স্ক একজন নারী কাকে বিয়ে করেছেন, তা নিয়ে সিআইডির এ সংবাদ সম্মেলন আলোচনার জন্ম দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ আদালতের নির্দেশনা এবং আইন দুই-ই লঙ্ঘন করেছে এমন মন্তব্যও করেছেন নেটিজেনরা।

তবে সংবাদ সম্মেলনের পর এবং এত আলোচনা–সমালোচনার পরও মিলু মিয়া বিশ্বাস গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন, পুলিশ যা করেছে ঠিক করেছে।

তিনি বলেন, উনি ভালো চিকিৎসক। তিনি ঢাকায় তিন জায়গায় রোগী দেখতেন। যাকে তিনি বিয়ে করেছেন, তিনি লেখাপড়া জানেন না। চিকিৎসকের বাবার ফুটফরমাশ খাটতেন। চিকিৎসকেরও কাজে সাহায্য করতেন। এর আগেও তিনি একবার এ নাপিতের সঙ্গে পালিয়ে যান। পরে বুঝিয়ে–শুনিয়ে প্রথম স্বামীর কাছে ফেরত আনা হয়। তখন তো তিনি ব্যভিচার করেছেন। প্রথম স্বামীকে ভালো না লাগলে তার দ্বিতীয়বার বিয়ে করার স্বাধীনতা আছে। কিন্তু স্বাধীনতা মানে যা ইচ্ছা তা করা নয়।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by