রংপুর

নাগেশ্বরীতে পানির নিচে কৃষকের স্বপ্ন

  প্রতিনিধি ৯ এপ্রিল ২০২২ , ৯:০১:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

হাফিজুর রহমান হৃদয়, নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) :

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে টানা ১০ দিনের বৃষ্টিপাতে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। বৃষ্টির পানিতে ভরে গেছে খাল বিল, নদী নালা। ডুবেছে নিম্নাঞ্চলের বোরো ধান। ধার দেনা করে লাগানো বোরো ক্ষেত পানিতে ডুবে পঁচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

এতে করে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের আমতলা, ছিলা খানা, নাওডাঙ্গা, ধরকা বিল, রামখানা ইউনিয়নের দক্ষিণ রামখানা, বানারপার, পৌরসভার বানুর খামার, বোয়ালের দারা, বাগডাঙ্গা, রায়গঞ্জ ইউনিয়নের সাপখাওয়া বিল, বড়বাড়ী, হাজির মোড়সহ বেশ কিছু এলাকার খাল-বিল ও নিম্নাঞ্চলে পানিতে ডুবে গেছে হাজার হাজার বিঘা জমির ধান ক্ষেত। অধিকাংশ জমির ধান গাছে শীষ বের হওয়ার উপক্রম। আবার কিছু কিছু ক্ষেতে বের হয়েছে ধানের শীষ।

পানিতে ডুবে গেছে সেসব। ফলে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কায় কৃষকের চোখে মুখে দেখা গেছে হতাশার ছাপ। ঘরে ধান না উঠলে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে তাদের। শুধু ধান ক্ষেতই নয় পানিতে নষ্ট হয়েছে, পাট, ভুট্টা, পটল, করলাসহ বিভিন্ন শাকসবজি ক্ষেতও। এদিকে উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে বৃষ্টিপাতে জমিতে পানি জমলেও নেমে যাবে অচিরেই। ফলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের আমতলা এলাকার কৃষক আব্দুল কাদের জানান, তিনি ৩ বিঘা জমিতে আমতলা বিলে বোরো চাষ করেছেন। প্রতি বছর বিঘা প্রতি ২০ থেকে ২৫ মণ ধান পান সেখান থেকে। এবছর আর সেখানে ধান পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সবগুলে পানিতে ডুবে পঁচে যাচ্ছে। রামখানা ইউনিয়নের দক্ষিণ রামখানা বানারপার এলাকার মৃত শুকর আলীর স্ত্রী বিধবা সালেহা খাতুন বলেন, দেনা করি ৩ বিঘা জমিত ধান গাইচ্ছোং। কামলা কিষ্যাণ খরচ কইত্তে এইগলে দেনা করা নাইকছে। তাও পানিত ডুবি যায়া পচি যাবান্নাইকছে। এইগলে ধান আর হবান্নয়। এবার না খায়া থাকা নাইকবে। এভাবেই বলতেই কেঁদে ফেলেন তিনি।

কৃষক আজগার আলী জানান, বাপ দাদার যুগেও চৈত্র মাসে এমন বৃষ্টি আর পানি দেখেননি তিনি। মানুষের হাজার হাজার বিঘা জমির ধান পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এবার খাদ্য ঘাটতি দেখা দেবে। তাই এসব কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন সরকারের। ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করলে কৃষকরা কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারতো। কৃষক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তার ৮ বিঘা জমির ধান ক্ষেত পানির নিচে থাকায় নষ্টের পথে। তনি এই চাষাবাদ করতে গিয়ে মানুষের কাছে ২০ হাজার টাকা সুদের উপর নিয়েছেন। ধান পেলে কোথা থেকে এ ঋণ পরিশোধ করবেন এ নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই তার। কৃষক ইউনুছ আলী জানান, তার ১০ বিঘা জমির ক্ষেত পানির নিচে। বাইরে কোনো জমিজমা নেই তার। সন্তানদের লেখাপড়া আর খাওয়া দাওয়া কীভাবে করবেন এটা ভাবতেই কান্না আসে তার।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন জানান, ১০ হেক্টর জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত হলেও ক্ষেতের তেমন ক্ষতি হবে না। যেসব ধান ক্ষেতে পানি জমেছে সেগুলো নেমে গেলে আর ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা নেই।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by