বাংলাদেশ

নারী পদ পূরণের ক্ষমতা রাজনৈতিক দলের ওপর

  প্রতিনিধি ১৮ জুন ২০২০ , ১২:১৯:২৭ প্রিন্ট সংস্করণ

৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণের ক্ষমতা রাজনৈতিক দলের ওপর ছেড়ে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন ইসি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া ও তা বাস্তবায়নের ক্ষমতা দলের ওপরই ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক দল নিবন্ধন আইন-২০২০ প্রণয়নের লক্ষ্যে খসড়া আইন থেকে এটি জানা গেল।

এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে দলে ৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণের বিধানটি আনে। আরপিওতে ভিআইএ অধ্যায়টি সংযোজন করে প্রচলন করা হয়েছিল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক দল নিবন্ধন প্রক্রিয়া। সেখানে নিবন্ধন পাওয়ার অন্যতম শর্ত ছিল ২০২০ সালের মধ্যে দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণ করতে হবে।

কিন্তু এখন ইসি বলছে, কোনো দলই সব পর্যায়ের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী কোটা পূরণ করতে পারেনি। তাই সময়সীমা আর বেঁধে দিতে চায় না সংস্থাটি। খসড়া অনুযায়ী, দলগুলো গঠনতন্ত্রে ৩৩ শতাংশ নারী পদ পূরণের সময়সীমা নিজেরাই উল্লেখ করবে এবং প্রতি বছর তথ্য প্রদানের সময় ইসিকে নিজেদের নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে নারীপদ পূরণের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করবে।

বর্তমানে কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশনই দেশে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য পৃথক আইনের উদ্যোগ নিয়েছে। এক্ষেত্রে আরপিও থেকে ভিআইএ অধ্যায়টি বিলুপ্ত করে পৃথক আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। আইনটির খসড়ায় রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে আগের মতো বেশ কিছু শর্ত রাখা হয়েছে।

আইনে বলা হয়েছে, কোনো রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত হইতে আগ্রহী হইলে- দরখাস্ত দাখিল করার তারিখ থেকে পূর্ববর্তী দু’টি সংসদ নির্বাচনে দলীয় নির্বাচনী প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন লাভ; বা উপরোক্ত সংসদ নির্বাচনের যে কোনো একটিতে দরখাস্তকারী দল কর্তৃক নির্বাচনে অংশ গ্রহণকৃত আসনে প্রদত্ত মোট ভোটের শতকরা পাঁচ ভাগ পেতে হবে।

দলের সাংগঠনিক কাঠামোর স্থিতি হিসাবে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ, তা যে নামেই অভিহিত হোক না কেন, একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় দপ্তর এবং অন্যূন এক তৃতীয়াংশ প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর জেলা দফতর, অন্যূন একশ উপজেলা বা ক্ষেত্রমত মেট্রোপলিটন থানার প্রতিটিতে কার্যকর দফতরসহ ন্যূনপক্ষে দুইশত ভোটার সদস্য হিসাবে দলের তালিকাভুক্তি থাকতে হবে। এছাড়া আগ্রহী রাজনৈতিক দলের দলীয় গঠনতন্ত্রে উল্লেখ থাকতে হবে যে, কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল পর্যায়ের কমিটির সদস্য নির্বাচিত হবে।

কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সকল পর্যায়ের কমিটি ন্যূনপক্ষে শতকরা ৩৩ ভাগ সদস্য পদ মহিলা সদস্যদের জন্য সংরক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য থাকিবে এবং কমিশনে প্রদেয় বার্ষিক প্রতিবেদনে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের বিবরণী অন্তর্ভূক্ত করিতে হইবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক বা ছাত্র এবং আর্থিক, বাণিজ্যিক বা শিল্প প্রতিষ্ঠানের বা সংস্থার কর্মচারী বা শ্রমিকদের সমন্বয়ে বা অন্য কোনো পেশার সদস্যগণের সমন্বয়ে অঙ্গ সংগঠন থাকবে না। তবে শর্ত থাকে যে, তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সংগঠিত হওয়ার কিংবা সংগঠন, সমিতি, ট্রেড ইউনিয়ন ইত্যাদি গঠন করার ও বর্ণিত সকল প্রকার গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ করিবার ক্ষেত্রে এবং ব্যক্তি হিসাবে, বিদ্যামান আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে, রাজনৈতিক দলের সদস্য হইবার ক্ষেত্রে কোনো বাধা থাকিবে না।

সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকা, পল্লি, উপজেলা বা ক্ষেত্রমত, থানা ও জেলা কমিটির দলীয় সদস্যগণ সংসদ নির্বাচনের জন্য তালিকা তৈরি করবেন এবং কেন্দ্রীয় সংসদীয় পর্ষদ ওই তালিকা বিবেচনাপূর্বক প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করিবেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচিত কেউ পরবর্তীকালে কোনো অনিবন্ধিত রাজনৈতিক দলে যোগদান করলে তার পদ যোগদানকারী দল কর্তৃক আহরিত হয়েছে মর্মে গণ্য হবে না।
৪ (৩) দফায় বলা হয়ে- নির্বাচন কমিশন সচিবালয় বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতির মাধ্যমে রাজনৈতিক দলসমূহের শর্তাদি পূরণ সম্পর্কে তদন্ত করিয়া প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কমিশনের নিকট প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। কমিশনের বিবেচনায় কোন রাজনৈতিক দল শর্তাদি পূরণে ব্যর্থ হইলে ধারা ১১ অনুসারে সেই রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল করা হবে। ৫ (১) দফায় একটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধীকরণের অযোগ্য হওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে কোনো দলের গঠনতন্ত্রের উদ্দেশ্যসমূহ সংবিধানের পরিপন্থি হলে; গঠনতন্ত্রে ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, ভাষা ও লিঙ্গ ভেদে কোন বৈষম্য প্রতীয়মান হলে; নাম, পতাকা, সীল বা অন্য কোন কর্মকান্ড দ্বারা ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক ঐক্য বিনষ্ট হওয়ার কিংবা দেশকে বিচ্ছিন্নতার দিকে লইয়া যাইবার আশঙ্কা থাকলে; গঠনতন্ত্রে দলবিহীন বা একদলীয় ব্যবস্থা সংরক্ষণ বা লালন করার উদ্দেশ্য প্রতিফলিত হলে ও গঠনতন্ত্রে দেশের ভৌগোলিক সীমার বাহিরে কোন দপ্তর, শাখা বা কমিটি গঠন এবং পরিচালনার বিধান থাকলে সেই দল নিবন্ধন পাওয়ার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে। এছাড়া যদি কোনো নামে কোন রাজনৈতক দল ইতিপূর্বে নিবন্ধিত হয়ে থাকে, তাহলে ওই নামে অন্য কোন দলের নিবন্ধনের জন্য দাখিলী দরখাস্ত মঞ্জুর করা হবে না; তবে শর্ত থাকে যে, যে ক্ষেত্রে একাধিক রাজনৈতিক দল নিবন্ধিত না হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে কমিশন দরখাস্তকারী সকল দলকে যুক্তিসঙ্গত শুনানির সুযোগ প্রদান করে তাদের যে কোন একটি দলকে ওই নামে নিবন্ধন মঞ্জুর করতে পারবেন। কমিশন সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত কোনো রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেবে না।
শর্ত প্রতিপালনকারী ধারা ৫ অনুযায়ী অযোগ্য নয় এইরূপ কোন রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য দলের প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক বা মহাসচিব বা তাদের সমপর্যায়ের পদাধিকারীর স্বাক্ষরে নির্ধারিত পদ্ধতিতে দরখাস্ত দাখিল করিতে পারবে।

নিবন্ধন সনদপত্র- (১) কোন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণের পর, ঐ দলের অনুকুলে কমিশন নির্ধারিত পদ্ধতিতে একটি নিবন্ধন সনদপত্র প্রদান করিবেন এবং উহা সরকারি গেজেটে প্রকাশ করিবে। নিবন্ধনের জন্য দাখিলকৃত কোন দরখাস্ত নাকচ করা হইলে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে কমিশন উহা লিখিতভাবে সংশ্লিষ্ট দলকে অবহিত করিবে। নিবন্ধন বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলিয়া গণ্য হইবে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) এই খসড়ার ওপর রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধন্ত নেবে। এক্ষেত্রে আগামী ৭ জুলাইয়ের মধ্যে মতামত চেয়েছে নির্বাচন কমিশন।

আরও খবর

Sponsered content

Powered by